অন্যান্য বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কি অবস্হা তা জানি না তবে আমাদের ব্যাংকে কালচারটা এত বেশি ব্যবসা কেন্দ্রিক যে ম্যানেজমেন্টের টপ টু বটম যে কথাটা বিরতিহীনভাবে প্রতিধ্বনিত হতে থাকে তা হলো, কেবলই দৌড়াও আর নাম্বার জেনারেট কর। হ্যাঁ, দিনের শেষে নাম্বারটা যেন জেনারেট হয়। বস আমার এইমাসে এ পযর্ন্ত ৬০ লাখ টাকার লোন ডিসবার্স হয়েছে, আরও ৪০ অ্যাপ্রুভাল হয়েছে আরও ৬০ পাইপলাইনে আছে। একজন রিলেশনশিপ অফিসার যখন তার লাইন ম্যানেজারের কাছে তার আমলনামা এভাবে পেশ করে তখন আশা করি নাম্বার জেনারেশনের ব্যাপারটা আপনাদের আর বুঝতে বাকি নেই। এভাবেই একজন অফিসার দিনের পর দিন নাম্বার জেনারেট করে যায়। ফ্রেস কল কর, নতুন কাস্টমার ধর, পুরনো কাস্টমারদের টোকা দাও। ব্যবসা আনো আবার মাঠে নামো...... এ এক অখন্ডিত চক্র...... যার ঘূর্নিপাকে নিরন্তর পাক খাও। তবে প্রমোশন আর ইনক্রিমেন্ট যে হবে না তা কিন্তু বলছি না, তা হবে, অবশ্যই হবে। তারপরও প্রশ্ন জাগে যে এই চক্রের মাঝে পাক খেয়ে আমি আমার মাঝে কতটুকু ভ্যালু অ্যাড করতে পারলাম কিংবা হিউম্যান রিসোর্স হিসাবে কতটুকু রিসোর্সফুল হতে পারলাম? নাম্বার নাম্বার করতে করতে মাঝে মাঝে নিজেকে অনু্ভূতিহীন রোবট মনে হয়, কারন কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত রোবট তো ১ আর ০ এর সমাহারে গড়া বাইনারি নাম্বার ছাড়া আর কিছুই বোঝে না। রোবটই বটে কারন বছরের শুরুতেই নাম্বারের টার্গেটটা ইনপুট হিসাবে গলাধঃকরন করি আর বছর শেষে আউটপুটটাও নাম্বার হিসেবেই উগড়ে দেই।
আমরা রোবট আবার একই সাথে অ্যাসেমব্লি লাইন ওয়ার্কারও। কারন আমাদের কাজ খুবই স্পেসিফিক এবং প্রায় ক্ষেত্রেই কোন কাজের সবটা আমরা করি না করি অংশ বিশেষ। প্রাতিষ্ঠানিক দৃষ্টিকোন থেকে এর সুবিধা বহুমাত্রিক। একটা সুবিধা হল যেহেতু আমরা কাজের অংশ বিশেষ বারংবার করতে থাকি আমাদের এফিসিয়েন্সি লেভেলও অনেক হাই হয়। আবার যেহেতু অংশ বিশেষ জানি তাই কোন কারনে যদি আমাদের বাদ দিয়ে দেয়া হয় (মানে ফোর্সড রেসিগনেশান/টার্মিনেশান/ট্রানস্ফার ইত্যাদি ইত্যাদি.....) তবে খুব সহজেই অন্য কাউকে দিয়ে কাজটা করিয়ে নিতে পারে এবং প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কাজের কোন ব্যাঘাত না ঘটিয়েই। কারন প্রতিষ্ঠানের পুরো একটি কাজ তো একজনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না।
সুতরাং সারমর্ম যা দাড়াচ্ছে তা হল আমরা একই সাথে কর্পোরেট রোবট, অ্যাসেমব্লি লাইন ওর্য়াকার এবং ডিসপোসেবল (হিউম্যান রিসোর্স)।