একজন অসৎ, অপদার্থ, অশিক্ষিত এবং অপ্রোয়জনীয় সেনা অফিসারের জীবনধারার কিছুটা অংশ তুলে ধরতে খুব ইচ্ছে হচ্ছে…
১। ২৪ ঘন্টা অন জব।
২। নিজস্ব সময় বলে কিছু না থাকা।
৩। নিজ এবং নিজের পরিবারের সকল সমস্যা পাশে ঠেলে রেখে দেশ এবং দেশের মানুষের দুর্দিনে নিজেকে সঁপে দেয়া।
৪। টাকার অভাবে বৃদ্ধ বাবা-মা’কে তাদের জীবনের অন্তিম লগ্নেও কোন অর্থনৈতিক নিরাপত্তা দিতে না পারা।
৫। পরিবারের অতি প্রয়োজনীয় সময়েও ছুটি না পেয়ে মানসিক যন্ত্রনায় ছটফট করা।
৬। জাতীয় প্রয়োজনে একরকম অসম্ভব কিছু চ্যালেঞ্জিং কর্মকান্ডকে স্বেচ্ছায় গ্রহন করে নেয়া।
৭। অসত্য এবং অসৎ কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করা।
৮। নিজে খাবার না খেয়েও অধীনস্ত সৈনিকরা সঠিক সময়ে খেয়েছে নিশ্চিত করা।
৯। টানা ৭ মাস ছুটিতে না গিয়েও অধীনস্ত সৈনিকদের প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্ততপক্ষে একবার ছুটিতে প্রেরণ করা।
১০। বাৎসরিক ছুটি একমাস হওয়া সত্ত্বেও পুরো বছরে কোন বাৎসরিক ছুটি না পাওয়া এবং পক্ষান্তরে অধীনস্ত সৈনিকের দুই মাস বাৎসরিক ছুটি নিশ্চিত করা।
আজ আমার গায়ে লেবেল লেগেছে আমি অসৎ, আমি স্বেচ্ছ্বাচারী, আমাকে মেরে ফেলাই উচিৎ, সুয়ারেজই আমার প্রাপ্য ঠিকানা। কোন অভিমান নয়, কোন প্রশ্ন নয়। চাকুরী জীবনের দীর্ঘ ১২টি বছর পর আজ আমার ছোট্ট উপলব্ধি…
১। কি করলাম এই ১২টি বছর? কেন আজ আমার কিছু নেই?
২। উপ-সচিব পদমর্যাদার সমান মর্যাদা থাকা সত্ত্বেও কেন আজও আমাকে পায়ে হেটে অফিসে যেতে হয়?
৩। ছোট্ট একটা একতলা বাড়িতে থাকেন কেন আমার বাবা-মা? জীবিকা নির্বাহের জন্য কেন এখনো আমার অবসরপ্রাপ্ত বাবাকে শুধুই বাড়ি ভাড়ার উপরে নির্ভর করতে হয়?
৪। কেন আমি দেশের প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে আমার পরিবারকে উপেক্ষা করলাম, যাদের অনেক ত্যাগের ফসল আমি?
৫। জীবনে কি সত্যিই এমন কোন কাজ করিনি যার কারণে দেশের সাধারণ মানুষের একটু কাছে যেতে পারি? যার কারণে অসৎ, স্বেচ্ছাচারী, অশিক্ষিত, অপ্রয়োজনীয় ইত্যাদি বিশেষণগুলোকে আমার নাম থেকে দূরে রাখতে পারি?
আমার আত্মবিশ্বাসে চীর ধরেছে। নিজেকে সত্যিই আজ অশিক্ষিত মনে হচ্ছে (কারণ, কেন আগে এই এইগুলো বুঝতে পারিনি)…
নিজেকে আসলেই স্বেচ্ছাচারী মনে হচ্ছে (কারণ, অন্তত আমার পরিবারের সাথে আমি স্বেচ্ছাচারিতা করেছি। আমার খেয়াল খুশীমত আমি তাদেরকে সময় দিয়েছি তাদের প্রয়োজনমত নয়)…
অসৎ কখনো মনে হয়নি নিজেকে…তবে আজ হতে ইচ্ছে করছে… কারণ, ১২ বছর এত সৎ জীবন যাপন করার পরও অসৎ নামক লেবেল যখন লেগেই গেল, তখন গর্ব করার মত আমার কাছে তো আর কিছুই রইলনা…।
নিজের উপর আজ ঘৃণা ধরেছে। নিজের সাধারণ জীবনকে দূরে ঠেলে রেখে যাদের জন্য কাজ করেছি, তারাই যখন আজ আমার ভাইদের হত্যাকে “ঠিক কাজ” বলে হত্যাকারীদের সমর্থন করে, তাদের বানোয়াট মিথ্যা গল্পগুলোকে অতি গুরুত্বের সাথে দেশের সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরে এবং সেই গল্পগুলোকে সবাই সত্যি মনে করে, হত্যাকারীদের সপক্ষে শ্লোগান দেয়, হাততালি দেয় তখন ঘৃণা না ধরে আর উপায় কি? অকৃতজ্ঞতার চরমতম উদাহরণ দেখানোর জন্য বিধাতার কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
চোখের সামনে ভেসে ওঠে মাটি চাপা কিংবা খন্ডিত কিংবা সুয়ারেজে আমার গলিত লাশ, আমার জীবনসঙ্গিনীর আর্তচীতকার কিংবা অপমানের তীব্র জ্বালাভরা বোবা দৃষ্টি, পথের ফকিরের মত আমার বাবা-মা’র আমার লাশভিক্ষা, আমার খোঁজে আমার পরিবার পরিজনদের পাগলের মত ছুটে বেড়ানো এখান থেকে ওখানে, তীব্র কষ্টের মাঝেও অসৎ অফিসারের স্বজন হিসেবে তাদের প্রতি সাধারণ মানুষের বক্র দৃষ্টি। আমি আমার এই পরিণতি দিব্যদৃষ্টিতে দেখতে পাচ্ছি। সাধারন জনতার করুণা তো দূরে থাক ধিক্কার নিয়েই এ পৃথিবী থেকে যাবার জন্য আজ আমি প্রস্তুত। তাই ওবায়েদের মত আমিও বলছি-
প্রিয় মাতৃভূমি- আমি প্রস্তুত আছি।
Click This Link