আমরা ভাই-বোন সবাই ছিলাম গান পাগল। বাবা সেই আমলে সরকারী জেলা কর্মকর্তা হলেও আমাদের ছিল বড় পরিবার, তাই সকল আবদার তিনি রাখতে পারতেননা। ছোট থেকেই আমরা তিন ব্যান্ডের রেডিওতে গান শুনে বড় হয়েছি।
নিজের পছন্দের গান (সংগ্রহ করে) শুনার জন্য পাড়া প্রতিবেশী অনেকেই কিনে ফেললেন অডিও ক্যাসেট প্লেয়ার। আমাদের নিজেদের ক্যাসেট প্লেয়ারের জন্য অপেক্ষা করতে হলো সিঙ্গাপুর প্রবাসি ভাইয়ের ছুটিতে আসা পর্যন্ত। আমাদের সে কি আনন্দ, ইন্ডিয়ান বাংলা,হিন্দি ও গজল শুনে আমরা ভাই বোনেরা সারা বেলা বিভোর হয়ে থাকতাম। এটা ছিল আশি দশকের গোড়ায়, যখন ভোজপুরী গান “ ক্যায়সে বানী - ক্যায়সে বানী” বা মেরে অঙ্গনে মেঁ তুমহারা কেয়া কাম হ্যায়-লাওয়ারিশ সিনেমার গানগুলি মাঠ ঘাট গরম করে রাখতো।
আমরাই হয়তো বেশী ভাগ্যবান যারা বিজ্ঞানের অনেক কিছু দেখতে পেয়েছি। আমাদের বাপ দাদার আমলে ছিল কলের গান বা গ্রামোফোন তারপর এলো ক্যাসেট প্লেয়ার/রেকর্ডার,ওয়াকম্যান, সিডি,ফ্লাস মেমরি আর এখন মোবাইল ফোনেই চলছে গান শুনা।
এখনকার আমলে গান শুনতে আর বেগ পেতে হয়না,পয়সাও খরচ হয়না।কিন্তু ক্যাসেট প্লেয়ারের জন্য আমাদেরকে মার্কেট থেকে পছন্দের শিল্পীর গানের ক্যাসেট বা পছন্দের গানগুলি সিলেক্ট করে অর্ডার দিয়ে আসতাম।
কিছুদিন পর ক্যাসেটে ফিতা আটকে যেতো, আমরা পেন্সিল দিয়ে ঘুরিয়ে চালু করে দিতাম।এছাড়া বৃস্টির দিনে ফিতা ড্যাম হয়ে যেতো। ভাবতে অবাক লাগে আমরা কতো কষ্ট গান শুনেছি।
কিন্তু এই ক্যাসেট চালূ হবার জন্যই বলা যায় আমরা ভারতীয় গানের একচেটিয়া আধিপত্য থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। আমরা এখন আর পুজোর গানের জন্য অপেক্ষা করিনা।ক্যাসেট সস্তা ও সহজলভ্যের কারনে আমাদের দেশেই গড়ে উঠেছিল নুতন নুতন রেকর্ডিং স্টুডিও।আমরা পেয়ে যাই গ্রামগঞ্জের গায়ক-বয়াতির গানের ক্যাসেট।
যারা এই বাংলার সঙ্গিতকে ক্যাসেটের যুগে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছিল যা আজও রয়ে গিয়েছে তাদের কয়েকজনের নাম না নিলেই নয়।
সোলস,মাইলস সহ একডজন ব্যান্ডদল,কুদ্দুস বয়াতি,মুজিব পরদেশী,মমতাজ, কাঙ্গালিনী সুফিয়া,জুয়েল, শুভ্রদেব, আসিফ,মনিরখানসহ আরো অনেকে।
সবশেষে একটি ঘটনা বলি।তখন ইংরেজিগান শুনতাম বনিএম,বিজিজ,ডূরান ডুরান ইত্যাদি।
দোকানের লোকটা বেশ জোর করেই একটা ক্যাসেট ধড়িয়ে দিয়ে বললো এটা ঈদের দিনে ভাল চলবে।বাসায় গিয়ে ঈদের দিন সকালে ফুল ভলিঊমে বাজালাম।মাইকেল জ্যাকসনের প্রথম ক্যাসেট ছিল।
এলাকায় আমিই হিরো ।
গান শুনছি

কিছু ছবি নেট থেকে সংগ্রীত
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:২৮