শিশাখোর আরব মহিলা ব্লগার
অনেক দিন আগের কথা।অফিসের কাজে আমাকে প্রায়ই কুয়েত বর্ডারে যেতে হতো।একবার আমি আমার ইন্ডিয়ান কলিগ উইলসন,সাব কন্ট্রাকটার লেবাণীজ মুনকিজ এবং মিনিস্ট্রি ইঞ্জিনিয়ার সৌদি ফয়সাল এই চারজনে মিলে মুনকিজের BMW গাড়ীতে রওয়ানা দিলাম।আমি আর উইলসন পেছনের সিটে আর ওরা দুই আরব সামনে বসে চুটিয়ে গল্প করতে করতে এক সময় আল-খাফজি পৌছে গেলাম।ঘড়িতে চেয়ে দেখি মাত্র পৌনে দুই ঘন্টা লেগেছে সাড়ে তিনশ কিলোমিটার পথ আসতে। যদিও আমি ১৬০/১৮০ কিঃমিঃ বেগে গাড়ী চালিয়েও আড়াই ঘন্টার আগে কখনই পৌছতে পারিনি।
আমাদের হাতের কাজগুলি শেষ করতে দুপুর হয়ে গেল।ফেরার আগেই আমরা খুজে নিলাম একটা রেষ্টুরেন্ট।সামুদ্রিক শহর বলেই আমরা সবাই ফিস ফ্রাই অর্ডার দিলাম।চিকন চালের সঙ্গে মাছ ভাঁজা খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বাইরে বেরুতেই মুনকিজ, ইঞ্জিঃ ফয়সলকে বললেন একটু রেস্ট নিতে চলুন শিশা মহলে গিয়ে বসি।আমি তখনও শিশা সম্পর্কে তেমন কিছু জানতামনা।উইলসনই আমাকে বললো শিশা হচ্ছে হুক্কা!
আমি নিজে তামাক/পান জাতীয় কোন প্রকার নেশাই করিনা,হুক্কাতো নয়ই।তবুও ওদের সঙ্গে যতেই হবে।ভেতরে যাওয়ার আগেই দেখলাম বাইরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে অনেকেই হুঁকা টানছে,তবে সবাই আরব এবং সম্ভবত ট্রাক ড্রাইভার।ভেতরে ছোটবড় অনেকগুলি রুম ছিল।প্রায় সব রুমেই শিশাখোররা আরামে হেলে শুয়ে বসে হুক্কা টানছে আর টিভিতে আরবী চটুল গান বাজছে। আমরা ভেতরে একটি রুমে গিয়ে বসলাম।কিন্তু চারিদিকে কটু গন্ধে আমি অস্বস্তিবোধ করছিলাম। আমাদের রুমেও একটি এলসিডি টিভিতে আরবীতে বেদুঈনদের গান টিউন করে ওরা বসে গেল।একটু পরই একজন বাংলাদেশী এসে পিউর আরবীতে জানতে চাইলো আমরা কি খাব, তারা অনেক কথা বলে বুঝিয়ে দিল যদিও আমি কিছুই বুঝলামনা।এরপর আমাদের নিকট এসে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো আমরা কি চাই।আমি শুধু টারকিস কফির অর্ডার দিতেই ফয়সাল চিল্লিয়ে উঠলো,শিশা আমাদেরকে নিতেই হবে।বাংলাদেশী লোকটা আমার পরিচয় জেনে অভয় দিয়ে বললো,ভাই এই শিশা খেলে কিছু হবেনা। সেখানে আপেল,ম্যাঙ্গো, স্ট্রোবেরি, বাবলগাম,মিন্ট,গ্র্যাপ্স,চেরিসহ নানাহ ফ্রুট ফ্লেবারের তামাক রয়েছে।এগুলোয় নেশা হবেনা শুনে সাহস করে আমরা দুজনেই অর্ডার দিলাম।প্রায় আধা ঘন্টা পর দেড়ফুট লম্বা উচ্চতার আর তিন ফুট লম্বা পাইপের হুক্কার মধ্যে আপেল ফ্লেবার তামাক সাঝিয়ে আমাদের সামনে নিয়ে এলো।আমি তাকিয়ে আছি মুনকিজের দিকে সে কিভাবে পাইপে টান দিচ্ছে! সে বুঝতে পেরে আমাকে শিখিয়ে দিলো কি করে শিশার ধুয়া ভেতরে টেনে নিয়ে ছেড়ে দিতে হয়।সঙ্গে সঙ্গে এটাও বললেন তারা বাসায় মা-বাবা ভাই-বোন সকলে মিলে শিশা খায়।আমি নিজেও দেখেছি ছুটির সময় সমুদ্রের তীরে বসে নেবানন/সিরিয়া বা মিশরীয় মহিলারা শিশার লম্বা পাইপ নিয়ে টেনে যাচ্ছে!
ইঞ্জিঃ ফায়সাল আরেকটু রসিকতা করে বলল,ডাবল আপেল ফ্লেবারের সঙ্গে মিন্ট(পুদিনা) মিশিয়ে খেলে নাকি জার্নির সকল অবসাদ দূর হয়ে যাবে সঙ্গে মনটা শিথিল আর তাজা হয়ে যাবে।আর শৈশবে ফিরে যেতে হলে বাবলগাম ফ্লেবার নিয়ে দেখতে পারি।
প্রথমবারের মতো বুকভড়ে ধুয়া টেনে আমি কাশতে কাশতে শেষ।বার কয়েক চেষ্টার পর আমি আর উইলসন সফল হলাম।এবং সত্যিই ভাল লাগলো।
বিকেলে বাসায় ফিরতেই আমাকে দেখেই গিন্নীর প্রথম প্রশ্ন ছিল শরীর থেকে মিষ্টি মিষ্টি গন্ধ কিসের?
বিভিন্ন মডেলের হুক্কা
হুক্কার হরেক রকম পাইপ এবং মুখদিয়ে ধুয়া টানার ফিল্টার যা পালটানো হয়
হুক্কার হরেক রকম পাইপ
দোকানে রাখা বিভিন্ন প্রকার ফ্লেবারের তামাক ও নুতন হুক্কার বাক্স
c.
এটা হুক্কাকেস,ভেতরে সাজানো হুক্কা যা বহন করতে সুবিদা
শিশাখোর একজন আরব মহিলা ব্লগার
শিশামহলে আরব মহিলা
বাইরে বসে আরব মহিলাদের শিশা খাওয়া
টিনএজ আরব মেয়েরা দলবদ্ধ হয়ে শিশা খাচ্ছে
আমার মহল্লাতে দেশিভাইয়ের হুক্কার দোকান
একটি আরব শিশা মহল
একটি শিশার বিভিন্ন অংশ