একুশে পদক - বাংলাদেশের একটি জাতীয় এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার। ভাষা আন্দোলন এর শহীদদের স্মরণে ১৯৭৬ সালে এই পদকের প্রচলন করা হয়। সাবেক রাষ্ট্রপতি জেনারেল জিয়াউর রহমান এই পুরুষ্কার চালু করেন।
ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা, গবেষণা, ভাষা ও সাহিত্য, শিল্পকলা, সাংবাদিকতা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সমাজসেবা এবং অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রে জাতীয় পর্যায়ে অবদান রাখার জন্য এই পুরুষ্কার দেয়া হয়। প্রতি বছর অনেক ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান এই পদকে ভুষিত হচ্ছেন।
এবার চলুন একটু ভিন্ন দিকে দৃষ্টিপাত করি।
ময়মনসিংহ মেডিকেলের মেহেদী হাসান খান নামের জনৈক ছাত্র ২০০৩ সালের ২৬শে মার্চ উইন্ডোজে ইউনিকোড ভিত্তিক বাংলা লেখার জন্য একটি কীবোর্ড সফটওয়্যার আবিষ্কার করেন। বাংলা চর্চার সুবিধার্থে তিনি এই সফটওয়্যারটি বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্যে প্রকাশ করেন। বিজয় দিয়ে বাংলা লেখা একটি সময় বেশ কষ্টসাধ্য ছিলো। কিন্তু উচ্চারণভিত্তিক (ফোনেটিক) বাংলা টাইপিং ব্যবস্থা থাকার কারনে অভ্র খুব দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে পড়ে। এমনকি নির্বাচন কমিশন জাতীয় পরিচয় পত্র প্রকল্পে বাণিজ্যিক বিজয় - এর পরিবর্তে বিনামুল্যের অভ্র ব্যবহার করেন।
এতে কম্পিউটারে বাংলা লেখার বাণিজ্যিক ক্লোজ সোর্স সফটওয়্যার ‘বিজয়’ এর স্বত্বাধিকারী এবং ‘আনন্দ কম্পিউটার্স' এর প্রধান নির্বাহী মোস্তাফা জব্বার প্রচন্ড ক্ষুব্ধ হন। কারন এতে তাঁর পাঁচ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়। তাছাড়া তৎকালীন সময়ে বিজয় কী বোর্ড নামে আলাদা কী বোর্ড ছিলো যার ব্যবসায়িক চাহিদাও ছিলো প্রচুর। কিন্তু অভ্র সফটওয়্যার প্রকাশিত হবার পর সামগ্রিক এই ব্যবসায় ধ্বস নামে। ফলে খুব স্বাভাবিকভাবেই বিজয়ের মালিকপক্ষ ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে এবং অভ্র এর বিরুদ্ধে হ্যাকিং সহ কোড চুরি ইত্যাদির অভিযোগ আনে।
পরবর্তীতে ২০১০ সালের ১৬ই জুন বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল অফিসে অনেক তথ্য প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞের উপস্থিতিতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকে অভ্র নির্দোষ প্রমানিত হয় এবং ব্যবসায়িক প্রেক্ষাপট থেকে মেহদী হাসান খান ও মোস্তাফা জব্বারের মধ্যে একটি সমঝোতা হয়। অভ্র ইউনিবিজয় লে আউট তাদের কী বোর্ড থেকে সরিয়ে নেয়।
বলা হয়ে থাকে বাংলা ভাষাকে ইন্টারনেটে সহজলভ্য করে তোলার জন্য, মানুষকে বাংলায় লেখার জন্য আগ্রহী করে তোলার জন্য অভ্র একটি যুগান্তকারী ইতিহাস সৃষ্টি করে। ফোনেটিক বাংলা টাইপিং এর কারনে অভ্র প্রবাদ সমতুল্য জনপ্রিয়তা অর্জন করে। মেহেদী হাসানের বাংলা ভাষার প্রতি ভালোবাসার কারনে এমন চমৎকার একটি সফটওয়্যার সম্পুর্ন বিনামুল্যে ব্যবহারের জন্য তিনি প্রকাশ করেন। চাইলেই তিনি এর মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা অর্জন করতে পারতেন। কিন্তু শুধুমাত্র বাংলাকে ভালোবেসে তিনি যে কাজ করেছেন তা জাতীয় পর্যায়ে স্বীকৃতি প্রয়োজন। ভুলে গেলে চলবে না - আজকে অভ্র না থাকলে আমরা এত সহজে বাংলায় লিখতে পারতাম না।
তাই একুশে পদক যেহেতু ভাষা শহীদের স্মরনে দেয়ার রীতি, সেহেতু অভ্র বা মেহেদী হাসান অবশ্যই একুশে পদক পাওয়ার শ্রেষ্ঠতম দাবিদার। তার চেয়ে আরো অনেক কম গুরুত্বপূর্ন কাজ করে এমন কি বিতর্কিত ব্যক্তিগণ একুশে পদকে মনোনিত হয়েছেন। কিন্তু অদ্ভুত কোন এক কারনে তিনি এখন পর্যন্ত একুশে পদকের জন্য মনোনয়ন পান নি। একজন সাধারন নাগরিক হিসেবে এই প্রশ্নটি আমার মনে এসেছে, এর কারন জানতে চাই। কোন মহলের চাপে অভ্রকে জাতীয়ভাবে মুল্যায়ন করা হচ্ছে না তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
সবশেষে, আমি দাবি জানাই - অভ্র এর প্রতিষ্ঠাতা মেহেদী হাসান খানকে একুশে পদকে ভুষিত করে প্রকৃত মেধাবী এবং দেশপ্রেমিক ব্যক্তিদের মুল্যায়ন করা হোক।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:০২