ইদানিং কিছু বলতে গেলেই কর্তা খালি বলেন, চুপ চুপ! একদম চুপ!
ভৃত্য ভাবিলো, আহা! মশাই আমার কি কষ্টেই না আছেন??
কি খাইবেন জনাব? বলার চেষ্টায় ঠোঁট দুখানা মৃদ্যু ফাঁক হইতেই কর্তা বাজখাঁই গলায় রণ হুংকার দিয়ে বললেন, চুপ চুপ! একদম চুপ!
আমার খেয়ে, আমার পরে, আমার দয়ায় চলে ফিরে আমারই ভুল ধরিস!
একদম চুপ! কোন কথা নেই।
নন্দ দুলাল বলল, আজ্ঞে কর্তা! ঠিক বলেছেন! দারুন বলেছেন! উচিত বলেছেন। এত কথা কিসের! এ্যাই সবাইকে চুপ করা! থামা!!! ওরে! কে আছিস! কর্তা আজম খানের গান শুনবেন। জোরসে বাজা, 'চুপ চুপ অনামিকা চুপ! কথা বলো না।'
কর্তা আরামে ঘুমাতে গেলেন। স্বপ্নে দেখলেন কারা যেন তাঁকে কথার মাঝে টেনে ডুবাচ্ছেন। সেই কালো ডোবায়, কত রকম কথা! ফিসফিস, চিৎকার, প্রেমালাপ, আহাজারী, প্রতিবাদ কিংবা হয়ত আবৃতি।
চমকে উঠে কর্তার ঘুম ভেঙে গেলো। সবে ভোর হয়েছে। জানালায় কড়া নাড়ছে সকালের মিষ্টির রোদ। কি সুন্দর নিথর নীরব চারিদিক। হঠাৎ দেখলেন, জানালায় এসে বসেছে দুটো চড়ুই। তারা ঠোঁট নেড়ে আপন মনে গান গাইছে। অদ্ভুত ব্যাপার! গানের কোন সুরেলা শব্দ নেই।
এককাপ চা খেতে বড্ড ইচ্ছে হচ্ছে কর্তার।
এ্যাই কে আছিস - কি অবাক ব্যাপার! হাত তালির ডাকে কোন শব্দ নেই!
কম্পিত হাতে গ্লাসে এক চুমুক পানিতে গলা ভেজাবার ছলে, হাত থেকে পড়ে গেলো কাচের গ্লাস। শব্দবিহীণ ভাঙ্গনে চমকে উঠে কর্তার বুকে চিড়!
আচমকা পুরানো ভৃত্যের প্রবেশ! হাতে ভোরের কাগজ।
মশকরা করিস?? সাদা কাগজ কি কখনও খবরের কাগজ হয় রে গাধা?
ভৃত্য জবাব দিলো, দুই ঠোঁট নাড়িয়ে। বাতাস কাঁপছে না, কথা বের হচ্ছে
নন্দ কোথায়? নন্দ?
ভৃত্য আবারো জবাব দিলো, দুই ঠোঁট নড়ছে। কি যে সে বলছে, কোন শব্দ নেই।
তবে রে! তোর এত সাহস! পাগলের মত ভৃত্যকে প্রহার করলেন কর্তা। কথা বল! বল কথা?? নন্দ কোথায়? নন্দ?
শেষমেষ নন্দ এলো বটে। হাসি মুখে কত কিছু বলছে, প্রবল বেগে নড়ছে ঠোঁট। শুধু শব্দ হচ্ছে না কোন।
কর্তা এবার ছুটে গিয়ে নন্দের বুকে বসিয়ে দিলেন, দুম দুম কিল। বেঈমান! কথা বল! ব্যাথায় মলিন নন্দের মুখে শব্দহীনতার কঠোরতা।
আচমকা চারিদিকে গ্রাস হলো, প্রচন্ড তীব্র নিরবতা ঠনঠনে শব্দ! কর্তা শিউরে উঠলেন। দুহাতে মাথা খামচে ধরলেন নিজের মাথা।
কথা বল নন্দ! কথা বল ভাই আমার!!
নন্দ কথা বলছে, প্রাণপনে মাথা নেড়ে কথা বলছে। শুধু ঠোঁট নড়ছে, কোন শব্দ হচ্ছে না।
শীতের সকালে আজ ঝাকিয়ে বসেছে প্রচন্ড নীরবতার শৈত্যপ্রবাহ!