ঘটনার সুত্রপাত গত নভেম্বরে। ক্রমাগত ব্যর্থতায় যখন বাংলাদেশের ক্রিকেট সমালোচনার তীক্ষ্ণ বাণে জর্জরিত তখন এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই শুরু হয়েছিল যে বিজয়ধারা, এই নভেম্বরেই তাদেরকে আবারও বাংলাওয়াস করে যেন সাফল্যের একটি বড় বৃত্ত পূর্ন করল বাংলাদেশ। মাঝখানে ছিল স্বপ্নের এক বিশ্বকাপ, পাকিস্থানকে ঐতিহাসিক বাংলাওয়াস, ভারত এবং সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে স্মরনীয় সিরিজ জয়। একই সাথে অর্জিত হলো দেশের মাটিতে এক টানা পাঁচটি সিরিজ জয়ের দুর্লভ রেকর্ডও।
কিছুদিন আগে যখন দেশের বিদ্যমান নিরাপত্তার অযুহাতে প্রতীক্ষিত অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সফর বাতিল হলো, তখন বাংলাদেশের সাধারন জনগন দারুনভাবে আশাহত হয়েছিল। আমি যদিও এই সব নিরাপত্তার ব্যাপারে সঠিক জানি না, তথাপি আমার মনে হয়, বার বার ডেকে এনে বিভিন্ন দলকে যদি এইভাবে নাজেহাল করা হয় তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই অন্য ক্রিকেটদলগুলোর জন্য অনিরাপদ হিসেবে চিহ্নিত হবে।
যাইহোক, আজকে খেলায় টস জিতে মাসরাফি যখন ব্যাটিং নিলেন, তখনই বুঝেছিলাম বাংলাদেশ আজকে ভালো কিছু করবে এবং দেশের পক্ষে পঞ্চম সর্বোচ্চ উদ্বোধনী জুটি করে যার প্রতিদান দিলেন আমাদের দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল এবং ইমুরুল কায়েস। দুইজনই করেন ৭৩ রান। লিটনদাস আজকেও মোটামুটি ব্যর্থ হলেন। তিনি প্রতিভাবান বলেই দলে সুযোগ পেয়েছেন, কিন্তু হতাশাজনকভাবে তিনি তা প্রমাণ করতে আবারও ব্যর্থ হলেন। আমি জানি না, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এখন যে শক্তি এবং রিজার্ভে যে ধরনের খেলোয়াররা অপেক্ষায় আছেন, তাদের সাপেক্ষে তিনি আর কতদিন এমন সুযোগ পাবেন নিজেকে প্রমাণ করার। তার জন্য রইল শুভ কামনা। তবে আজকের ম্যাচে গুরুত্বপূর্ন বিষয় হচ্ছে মাহমুদুল্লাহ রানে ফিরেছেন। গত কয়েক ম্যাচে তার মধ্যে যে জড়তা ছিল, তা আজ বহুলাংশেই কেটে গিয়েছে বলে আমার মনে হয়। তিনি ৪০ বলে ৫২ রান করে নিজেকে আবারও খুঁজে পেয়েছেন।
যে দলে মুস্তাফিজুর রহমানের মতো বোলার থাকে সে দল প্রতিপক্ষের থেকে একটু এগিয়ে থাকবেই। ফলে জিম্বাবুয়ে যখন ব্যাটিং এ নামল, তারা শুরুতেই হোঁচট খেলো। প্রথম দুই ম্যাচে মুস্তাফিজুর কিছুটা গুটিয়ে থাকলেও আজকে ফিরে এলেন স্বরুপে। ফলাফল তার বিধ্বংসী বোলিংয়েই উড়ে গেল জিম্বাবুয়ে। তাঁর প্রথম ওভারেই বোল্ড হয়ে ফিরে যান জিম্বাবুয়ের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান চামু চিবাবা (৪)। এরপর ব্যক্তিগত চতুর্থ ওভারে বোল্ড করলেন আরেক উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান রেজিস চাকাভা (১৭)।
মুস্তাফিজের পর জিম্বাবুয়ের শিবিরে আঘাত হানেন অফ স্পিনার নাসির হোসেন। তার বলে এলবিডব্লুর ফাঁদে পড়েন ক্রেইগ আরভিন। দলীয় অর্ধশতকের আগে তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়ে জিম্বাবুয়ে। চিগুম্বুরার বিদায়ের পর রানের চাকা সচল রাখতে থাকেন শন উইলিয়ামস।জুটি গড়তে থাকেন নতুন ব্যাটসম্যান ম্যালকম ওয়ালারকে নিয়ে। ৬৫ বলে পাঁচ চারের সাহায্যে ক্যারিয়ারের ২৪তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। তবে দুই ওভারের ব্যবধানে দুই উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছে সফরকারীরা। ৩৫.৪ ওভারে আল আমিন হোসেনের বলে আউট হন ম্যালকম ওয়ালার (৩২)। ৩৬.৫ ওভারে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাঁধা শন উইলিয়ামসকে (৬৪) ফেরান মাশরাফি বিন মুর্তজা।
দ্বিতীয় স্পেলে বোলিং করতে এসে ফের চমক দেখান কাটার বিশেষজ্ঞ মুস্তাফিজুর রহমান। তার জোড়া শিকারে ফিরে যান সিকান্দার রাজা(৯)ও লুক জঙউই (১১)। শেষের দিকে পানিয়াঙ্গারাকে (৩) মুস্তাফিজ ও মুজারাবানিকে (০) আরাফাত সানি ফিরতি ক্যাচে আউট করলে জয় নিশ্চিত করে মাশরাফিরা।
জিম্বাবুয়ের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৪ রান করেন শন উইলিয়ামস। এছাড়া এলটন চিগুম্বুরা করেন ৪৫ রান। বাংলাদেশের পক্ষে ৮ ওভারে ৩৪ রান খরচায় পাঁচ উইকেট নেন মুস্তাফিজুর রহমান। ম্যাচ সেরা হয়েছেন তামিম ইকবাল ও ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছেন মুশফিকুর রহিম।
বিজয়ের এই মুহুর্তে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে সামহোয়্যারইন ব্লগের পক্ষ থেকে জানাই আন্তরিক অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা শত সমস্যার মাঝেও ১৬ কোটি মানুষকে একটু নির্ভার হাসির উপলক্ষ করে দেয়ার জন্য।
কৃতজ্ঞতাঃ
ইসএসপিএন ক্রিক ইনফো , বাংলা ট্রিবিউন, প্রথম আলো।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০৪