সাম্প্রতিক সময়ে সামহোয়্যারইন ব্লগে অনেক নতুন ব্লগার এসেছেন। ইতিমধ্যে অনেকেই তাদের সুলেখনী, মেধা এবং সুনির্দিষ্ট বিষয় যৌক্তিক আলোচনায় অংশগ্রহন করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করতে সক্ষম হয়েছেন। ফেসবুকের এত চরম উৎকর্ষতার যুগেও মানুষজন ব্লগিং এ আগ্রহী হচ্ছেন এটা সত্যি আনন্দেরই কথা।
তবে খুবই আশংকার সাথে লক্ষ্য করা যাচ্ছে যে, গত কয়েক মাসে ভালো মৌলিক পোষ্টের তুলনায় কপিপেষ্ট পোষ্টের সংখ্যা ভয়ংকরভাবে বেড়েছে। এই সব পোষ্ট অনেক সময় নির্বাচিত পাতায় যাচ্ছে, মানুষ কমেন্ট করে বাহবা দিচ্ছেন আবার পোষ্টদাতা খুব আনন্দের সাথে এই অন্যায্য বাহবা মাথা পেতে নিচ্ছেন। এই প্ল্যাটফর্ম হোক বা অন্য প্ল্যাটফর্ম হোক যারা কষ্ট করে রাত দিন খেটে একটি ভালো লেখা বা পোষ্ট তৈরী করেন, তাদের লেখা যদি কেউ অন্যের নামে চালায় সেটা নিশ্চয় তার অনুপ্রেরণার স্থানটিকে নষ্ট করে। এটা নিঃসন্দেহে ভীষন হতাশাজনক এবং সামহোয়্যারইন ব্লগের মত একটি বিশাল স্বনামধন্য ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের জন্য বেশ অস্বস্তিকরও বটে।
যারা কপি পেষ্ট পোষ্ট দিচ্ছেন তারা ব্লগকে ফেসবুকের মত মনে করলে বিপদে পড়বেন! তাদের মনে রাখা উচিত ব্লগের পাঠক আর সাধারন পাঠকদের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য আছে। এরা আম ফেসবুক ইউজারের মত 'মূর্খ' নয়। আমি কিছুটা বাধ্য হয়েই এই 'মুর্খ' টার্মটি ব্যবহার করলাম। কারন আপনি যদি সময় করে কখনও ফেসবুকে বিভিন্ন সেলিব্রেটিদের ছবিতে মানুষের মন্তব্যগুলো পড়েন কিংবা বিভিন্ন পেইজে কোন একটি মিথ্যা বানোয়াট ঘটনার সংবাদে আমজনতার মন্তব্য ও লাইক বিশ্লেষন করবেন তখন 'সরলতা' এবং 'আবালতা' এই দুই এর সংজ্ঞা নিয়ে আপনি নিশ্চিন্তে বিভ্রান্ত হবেন।
সুতরাং কেউ যদি ফেসবুকের ঐ সব ক্যাটাগরীর পাঠকদের সাথে মিলিয়ে ব্লগে পূর্ব প্রকাশিত বিভিন্ন লেখা নিজের নামে ব্লগে প্রকাশ করে তখন সে লেখা চুরির মত একটি ঘৃন্য নোংরা কাজের পাশাপাশি ব্লগের পাঠকদেরকেও অসম্মান করেন। এখানে ক্ষেত্র বিশেষে একজন পাঠক পোষ্টাদাতার চাইতে বেশি জ্ঞান রাখেন। তাছাড়া একটি লেখা কপি পেষ্ট কিনা তা জানতে আহামরি কিছু করতে হয় না। লেখাটির কিছু অংশ নিয়ে গুগলে সার্চ দিলেই সুন্দর মত ঐ লেখাটির ইতিহাস বের হয়ে আসে।
যদি এমন কোন জনগুরুত্বপূর্ন লেখা কেউ ব্লগে শেয়ার করতে চান, সেই ক্ষেত্রে যিনি পোষ্টটির মূল লেখক তার পুরো নাম, কোথায় কবে প্রকাশিত হয়েছে তা পোষ্টে প্রথমেই উল্লেখ্য করতে হবে। সম্ভব হলে মূল লেখকের অনুমুতিও নিতে হবে এবং পাশাপাশি ছোট্ট হলেও নিজের একটি বক্তব্য সেখানে তুলে ধরা উচিত। এতে কারোই অসম্মান হবে না।
আর একটি বিষয় নিয়ে না বলে পারছি না। অনেকেই ইন্টারনেট থেকে বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে চমৎকার সব ফিচার দিচ্ছেন। পোষ্টে নিচে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ্য করছেন, - ইন্টারনেট ও গুগল মামা। সত্যি বলতে, এটা সঠিক রেফারেন্স দেয়ার নিয়ম নয়। অথচ একটি পূর্ণাঙ্গ রেফারেন্স একটি ফিচার বা লেখার মান অনেকখানি বাড়িয়ে দেয়। অনেক সিনিয়র ব্লগাররাই যেমন এই বিষয়টিতে উদাসীন তেমনি অনেকেই আছেন এই বিষয়ে জানেন না। কিভাবে রেফারেন্স লিখবেন, তা নিয়ে সহব্লগার আরজুপনি আপু খুবই প্রয়োজনীয় একটি পোষ্ট দিয়েছেন। পোষ্টটি সবাইকে পড়ে দেখার অনুরোধ রইল।
♣তথ্যসূত্র (References) লেখার সহজ পাঠ♣
কেউ ব্লগিং করতে এসেছেন, লেখালেখির আগ্রহ আছে কিন্ত কোন কারনে লিখতে পারছেন না- এটাতে দোষের কিছু নেই। প্রথমদিনেই সবাই সব কিছু পারে না। সময়ের সাথে সাথে নিজের লেখার মান বৃদ্ধি ঘটে। সামুতে আমরা অনেকেই যা লিখি তা সাহিত্যের হয়ত কোন মানদন্ডেই পড়ে না। কিংবা যে সকল তথ্য আমরা সবার সাথে শেয়ার করছি, সেগুলোও হয়ত এমন কোন আহামরি তথ্য নয়। ইন্টারনেটে খুঁজলে হাজারো তথ্য পাওয়া যায়। কিন্তু সেই হাজারো তথ্য থেকে কিছু কাজের তথ্য বাছাই করে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করাটা একে বারে সহজ কোন কাজ নয়। যথেষ্ট মেধা এবং পরিশ্রমের ব্যপার। তাই অন্যের লেখা কখনও আপনি বা আমি নিজের নামে চালাতে পারি না। অন্যের লেখা দেখে অনুপ্রানিত যে কেউ হতেই পারে। যেমন হুমায়ূন আহমেদের লেখা। অনেকে আছেন হুমায়ূন আহমেদের মতই লেখার চেষ্টা করেন। এতে কি কোন খারাপ কিছু হচ্ছে? হচ্ছে না। খারাপ হবে তখনই যখন আপনি হুমায়ূন আহমেদের কোন লেখা নিজের নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন । কিংবা আপনি যদি উল্লেখ্য করেন, আপনি হুমায়ূন আহমেদ দ্বারা অনুপ্রানিত হয়ে লিখেছেন, আপনার লেখা কি কেউ পড়বে না? অবশ্যই পড়বে বরং আগ্রহ নিয়েই পড়বে।
ব্লগ হচ্ছে স্বাধীন মত প্রকাশের প্ল্যাটফর্ম। এখানে সবাই নিজের ইচ্ছামত স্বাধীন মত প্রকাশ করতে পারেন, লিখতে পারেন। কিন্তু তাই বলে অন্যের লেখা চুরি বা মেধা চুরি কোন ভাবেই সুস্থ ব্লগিং এর মধ্যে পড়ে না এবং তা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। এই কপিপেষ্ট ভাইরাসের ব্যাপারে আমি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছি।
পাশাপাশি যারা নতুন ব্লগার আছেন, যারা এখনও ব্লগিং সম্পর্কে ঠিক ভাবে জানেন না, তারা ♣ব্লগ টিউটোরিয়ালঃ (ওয়াচে থাকা এবং নতুন ব্লগারদের জন্যে অবশ্য পাঠ্য)♣ নামক পোষ্টটি অবশ্যই পড়বেন।
ধন্যবাদ সবাইকে। হ্যাপি ব্লগিং!