somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

কাল্পনিক_ভালোবাসা
বহুদিন আগে কোন এক বারান্দায় শেষ বিকেলের আলোয় আলোকিত উড়ন্ত খোলা চুলের এক তীক্ষ্ণ হৃদয়হরনকারী দৃষ্টি সম্পন্ন তরুনীকে দেখে ভেবেছিলাম, আমি যাদুকর হব। মানুষ বশীকরণের যাদু শিখে, তাকে বশ করে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিব সারাটি জীবন।

ফিচারঃ The Kelpies- মিথ ভাস্কর্য।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় পাঠক, এই পোষ্টটিতে একটি প্রাচীন মিথ এবং তাকে কেন্দ্র করে একটি ভাস্কর্য সৃষ্টির প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোকপাত করা হয়েছে। সাধারন পাঠকদের পরিপূর্ন পাঠ আনন্দ লাভের জন্য দুই একটি ছবি এবং বর্ননাও সংযুক্ত করা হয়েছে। যদিও আমাদের দৈনন্দিন জীবনে আমরা এর চাইতে অনেক বেশি নগ্নতার বহিঃপ্রকাশ দেখি তথাপি দুই একটি ছবি হয়ত অনেক কোমল মনের পাঠকদের কাছে অনভিপ্রেত কিংবা আপত্তিজনক মনে হতে পারে। তাই সম্মানিত পাঠকদের কাছে অনুরোধ রইল, পোষ্টটি পড়ার সময় কিছুটা সতর্কতা অবলম্বন করুন। এটা কোন ভাবেই 'অতি' কোমল মনের অধিকারী পাঠকদের জন্য অবশ্য পাঠের কিংবা দর্শনের পোষ্ট নয়।

সমুদ্রগামী বিভিন্ন জাহাজ সেন্ট্রাল স্কটল্যান্ডকে যেন সহজেই অতিক্রম করতে পারে সেই লক্ষ্য মাথায় রেখে ১৭৯০ সালে স্কটল্যান্ডের সবচেয়ে নিচু এবং প্রস্থের দিক দিয়ে ছোট অঞ্চলের ফির্থ অফ ফোর্থ (Firth of Forth) এবং ফির্থ অফ স্লাইডের (Firth of Clyde) মধ্য দিয়ে ৩৫ মাইলব্যাপী একটি সংযোগ খাল উদ্ভোদন করা হয়েছিল। খালটির নাম দেয়া হয়েছিল ফোর্থ এন্ড স্লাইডি খাল (Forth and Clyde Canal)।

ম্যাপ ভিউঃ ফোর্থ এন্ড স্লাইডি খাল (ছবি সূত্রঃ বিবিসি )

এই খালটি স্কটল্যান্ডের ফালক্রিক (Falkirk) অঞ্চলের যে অংশ দিয়ে অতিক্রম করেছে সেখানে খালের কিনারায় ঘোড়ার মুখ আকৃতির কিছু দৃষ্টি নন্দন সুউচ্চ ভাস্কর্য আছে। এদের নাম The Kelpies। যা মূলত প্রাচীন স্কটল্যান্ডের শিল্প কারখানায় ঘোড়ার ঐতিহ্য এবং কেলটিক (Celtic) মিথের উপর কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছ। ফালক্রিকের পশ্চিমে যে ক্যারন নদী বহমান, সেদিক থেকে খালটিতে প্রবেশের পথে এই ভাস্কর্যগুলো একটি চমৎকার গেট বা ল্যান্ডমার্ক হিসেবেও কাজ করে।

দ্য কেলপিস (The Kelpies) মিথঃ

দ্য কেলপিস (The Kelpies) নামটা নেয়া হয়েছে মূলত, কেলটিক (Celtic) মিথোলজির একটি চরিত্র কেলপি (Kelpie) থেকে। স্কটিস বিভিন্ন অঞ্চলে এই কেল্পাই ঘোড়াগুলো নিয়ে নানারকম মিথ প্রচলিত আছে। তবে সবচাইতে বেশি জনশ্রুত যে মিথটি, তা অনুযায়ী কেলপি হচ্ছে এক ধরনের শক্তিশালী “জল ঘোড়া” যা একাই দশটি ঘোড়ার সমতুল্য। এদেরকে স্কটল্যান্ডের নিচু জলাভূমিগুলোতে প্রায় দেখা যায়। প্রথম দর্শনেই এই ঘোড়াগুলোকে দেখে যে কেউই মুগ্ধ হবে। এদের শান্ত এবং নিরিহ ভাব দেখে মনে হবে কারো প্রিয় কোন ঘোড়া বুঝি হারিয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা নয়। এরা ছদ্মবেশে মানুষ শিকার করার জন্য মাটিতে উঠে আসে। তারা একটা নিরিহ ভাব ধরে মানুষকে তাদের কাছে যেতে উৎসাহ দেয়, আদর দেখিয়ে পিঠে চড়ার ইংগিত দেয়। যখনই ঐ দূর্ভাগ্য ব্যক্তিটি তাদের পিঠে চেপে বসত, সাথে সাথে তাদের গায়ে একটি পরিবর্তন চলে আসত। তাদের শরীর থেকে এক ধরনের আঠা নিঃসৃত হত, যার ফলে ঐ শিকার কোন ভাবেই আর ছুটতে পারত না এবং নিমিষের মধ্যে ঘোড়াগুলো শিকার নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ত। তারপর পানির নিচে গিয়ে প্রচন্ড নৃসংশভাবে কলিজা এবং হৃদপিন্ড বাদে বাকি সব চিবিয়ে খেয়ে ফেলত। কেন তারা কলিজা আর হৃদপিন্ড খেত না, তা নিয়ে কোন সঠিক কারন জানা যায় নি। এই সংক্রান্ত আরো একটি গল্প স্কটল্যান্ডে প্রচলিত আছে। কয়েকটি শিশু মিলে একবার একটা জলার পাশে খেলা করছিল। তারা সংখ্যায় ছিল নয় জন। হঠাৎ সেখানে একটি কেলপি উপস্থিত হয়। বাচ্চাগুলো ঘোড়াটিকে দেখে তার কাছে গেলে সবাইকেই সে তার শিকারে পরিনত করে যখনই পানিতে ঝাপ দিতে যাচ্ছিল তখনই দূর থেকে আর একজন ব্যক্তি ব্যাপারটি দেখে ফেলে কিছুটা বাধা দিতে চেয়েছিল বিধায় কেল্পাই ঘোড়াটি তাকেও আক্রমন করেছিল। এক পর্যায়ে লোকটির হাত কেল্পাই ঘোড়াটি কামড়ে ধরে। শেষমেষ তিনি বাঁচার জন্য নিজের হাত ছুরি দিয়ে কেটে ফেলে বনের মাঝে পালিয়ে যান। এই ধরনের বিভিন্ন প্রচলিত গল্পের উপর ভিত্তি করে জানা যায়, কেল্পাই ঘোড়াগুলোর রং হত সাদা কিংবা হালকা আকাশী। তাদের ঘাড়ের কেশর গুলো থাকত কিঞ্চিত ভেজা ও কোঁকড়ানো। শরীরের চামড়া ছিল সীল মাছের মত পুরু, মোটা এবং কিছুটা তেলতেলে। কথিত আছে, এই কেল্পাই ঘোড়াগুলো অনেক সময় সুন্দরী নারীদের রুপ ধারন করেও শিকার করত। কেল্পিস নিয়ে আরো ভালো ধারনার জন্য এই ভিডিওটি দেখার অনুরোধ রইলঃ

এখন চলুন দেখে নেয়া যাক শিল্পীর চোখে কিছু কেল্পাই ঘোড়ার ছবিঃ



কবি e.a.s. demers কেলপিস মিথ নিয়ে একটি ভয়ংকর কবিতা লিখেছেন। সেখান থেকে কিছু অংশ শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
In the waters dark and deep,
where none of sunlight dare to go,
there in the cold and brackish depths,
are the souls of those you once did know.

Far below, where cries fall silent,
and those who'd help, know not your plight,
the Kelpie claims your ghost to sate her hunger,
your flesh and bone seized in savage rite.

সম্পূর্ন কবিতাটি পড়তে চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

মিথ থেকে ভাস্কর্যঃ

গ্লাসগো স্কুল অব আর্টের এন্ডি স্কট নামের একজন ভাস্কর এই প্রচলিত কেল্পাই মিথের উপর ভিত্তি করে

এই কেল্পিস ভাস্কর্য গুলোর ডিজাইন করেন। এই ভাস্কর্যগুলো দ্বারা মূলত স্কটল্যান্ডের কৃষি, অর্থনীতি, কলকারখানা ইত্যাদির উন্নতি এবং ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে ঘোড়ার ভূমিকা বা অবদান সম্পর্কেই বোঝান হয়েছে। এই ভাস্কর্যগুলো সম্পূর্ন স্টীল দিয়ে তৈরী করা হয়েছে। একটি একটি ভাস্কর্যের ওজন প্রায় ৩০০ টন। টানা কয়েক বছর ধরে যুক্তরাজ্যের ইর্য়কশায়ারের এসএইচ স্ট্রাকচারে (SH Structures) পুরো ভাস্কর্যটিকে স্টীলের ছোট ছোট অংশে নির্মান করা হয়। এই বছরের মাঝামাঝি অর্থাৎ ২০১৩ সালের জুন মাসে ফালক্রিক অঞ্চলের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া ফোর্থ এন্ড স্লাইডি খালের পাশে এর পূর্নাঙ্গ প্রতিস্থাপনের কাজ শুরু হয় এবং অক্টোবরে এসে তা শেষ হয়। সম্প্রতি ভাস্কর্যগুলোর ১:১০ অনুপাতের মডেল স্কটল্যান্ডের বিভিন্নস্থানে প্রদশর্নীর জন্যও স্থাপন করা হয়েছে। আশা করা যাচ্ছে ২০১৪ সালে মূল ভাস্কর্যটি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে।

চলুন এই অসাধারন ভাস্কর্যগুলোর কিছু ছবি দেখে নেয়া যাকঃ



ছবি দেখা শেষ, এবার চলুন এই সংক্রান্ত কিছু ভিডিও দেখি।



ব্লগার সুফিয়া এই বিষয়ে ইতিমধ্যে এই বিষয়ে ((The Kelpies, বা হর্স টাওয়ার-চোখ ধাঁধানো কিছু ভাস্কর্য। ) একটি পোষ্ট দিয়েছেন। সেখানেও চাইলে ঢুঁ মেরে আসতে পারেন। পাশাপাশি যারা আরো জানতে চান তাদের কাছে অনুরোধ রইল নিচে বর্নিত তথ্যসূত্রে একবার ঢুঁ মারার পাশাপাশি ইন্টানেটে আরো খুঁজে দেখুন। প্রচুর তথ্য পাওয়া যাবে।


এবার একটি ছোট্ট কৌতুকঃ
জনৈক বিরহ ক্লান্ত বন্ধুর সাথে আড্ডা মারছিলাম। কথা প্রসংগে এই কেলপিস মিথের কথা উঠল। যখন তাকে বলছিলাম, কথিত আছে যে কেলপিস ঘোড়াগুলো অনেক সময় সুন্দরী নারীদের রুপ ধারন করেও শিকার করত।
সে লাফাইয়া উঠিয়া বলিল, বন্ধু! এটা মিথ নয়! এটা তো বির্বতনের গল্প! এখন বুঝেছি 'ও' আসলে একটা কেলপিস ঘোড়া ছিল আর আমি ছিলাম নিরিহ সওয়ারী!
-------------------------------------------------------------------
ছবি এবং তথ্যসূত্র সমূহঃ
১) উইকিপিডিয়া
২) www.kuriositas.com
৩) explodingdoughnut.blogspot.com
৪) www.dailyrecord.co.uk
৫) www.scotsman.com
৬) www.elfwood.com
৭) easdemers.blogspot.com
৮) porceliandoll.deviantart.com
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৪ ভোর ৬:৩০
৪৫৬ বার পঠিত
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার সাজিদ কমেন্ট অফ রাখায় এখানে লিখছি (সাময়িক)

লিখেছেন মিরোরডডল , ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:০৫


সাজিদের বিদায় পোষ্ট দেখলাম, কমেন্ট সেকশন বন্ধ রাখায় ভাবলাম এখানেই লিখে যাই।

জানিনা কি বলবো, হয়তো এটাই দেখা বাকি ছিলো।
চলে যাবার কারণ জানিনা কিন্তু অনুমান করতে পারছি।
Man! you shouldn't leave.

ব্লগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখ হাসিনা রাজনৈতিক নিপীড়নের শিকার হতে যাচ্ছেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:৫৭


আজকাল মানুষ চেনা বড্ড কঠিন হয়ে পড়ছে। কে কোন উদ্দেশ্য নিয়ে কার পক্ষে দাঁড়াচ্ছে তা বুঝা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতিতে এই কথা আরো বেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কখনো বিদায় বলতে নাই

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



ব্লগে কিছুদিন ধরে অনিয়মিত হওয়ায় কখন কি ঘটে জানি না।
কিছুক্ষণ আগে মিররডলের একটা পোস্টে জানতে পারলাম , ব্লগার আমি সাজিদ ঘোষণা দিয়ে ব্লগ ছেড়েছেন । তার সাথে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তীব্র নিন্দা জানাই

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৭



চাঁদগাজী একজন গ্রেট ব্লগার। তার তুলনা হয় না।
সামু তার সাথে বারবার অন্যায় করেছে। একটা দিন তাকে শান্তিতে ব্লগিং করতে দেওয়া হয়নি। সামুর ইতিহাসে তাকে সবচেয়ে বেশি বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

দৃষ্টি আকর্ষণঃ সৌহার্দ্যপূর্ণ ব্লগ কমিউনিটি গঠনের আহ্বান।

লিখেছেন সামহোয়্যারইন ব্লগ টিম, ২৪ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:২৫

সম্মানিত ব্লগারগণ,

আপনাদের সবাইকে আন্তরিক শুভেচ্ছা। সামহোয়্যারইন ব্লগ টিমের পক্ষ থেকে আমরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের উপর আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই, যা আমাদের এই কমিউনিটির পরিবেশকে আরও সুন্দর, সমৃদ্ধ এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

×