বিয়ে। মানবজীবনের একটি গুরত্বপূর্ন অংশ। সামাজিক এবং ধার্মিক প্রেক্ষাপটেও বিয়েকে বেশ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যদিও অনেকেই একে দিল্লীকা লাড্ডু বলে থাকেন যা খেলেও পস্তাতে হয় এবং না খেলেও নাকি পস্তাতে হয়। না খেয়েও যদি পস্তাতে হয় তাহলে খেয়ে পস্তানোই ভালো। আপনার ভাবনা যখন 'খেয়ে পস্তানো' পর্যন্ত আসবে তখন ধরে নিতে হবে আপনার মস্তিস্ক থেকে বিয়ের ব্যাপারে সবুজ সিগন্যাল দেয়া হয়েছে। এখন আপনি বিয়ের জন্য প্রস্তুত।
এই পর্যায়ে এসে দেখতে হবে আপনি কোন সফল প্রেমের সাথে জড়িত আছেন কিনা, যদি থাকেন তাহলে পারিবারিক সম্মতির একটা ব্যাপার আছে। সেটা সেরে ফেলুন। আর যদি কোন সফল বা অসফল প্রেমের সাথে জড়িত না থাকেন তাহলে পরিবারের উপর ভরসা করতে হবে। তারাই আপনাকে আপনার পছন্দমত জীবনসঙ্গী/সঙ্গীনী খুঁজে বের করে দেয়ার চেষ্টা করবেন। এই প্রসঙে বলে রাখা ভাল, বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে অনেক পরিবার থেকেই বলে দেয়া থাকে 'বাবা-রা মা-রা তোমরা তোমাদের পছন্দমত ছেলে মেয়ে দেখে রেখো; তোমাদের পছন্দই আমাদের পছন্দ '।
অনেকেই ব্যাপারটা আধুনিকতার উদহারন হিসেবে দেখাবেন। কিন্তু প্রক্রিয়াটি আধুনিক হলেও এর মধ্যে রয়েছে সুক্ষ দায় এড়ানোর প্রচেষ্টা। কারন সমসাময়িক সময়ের সর্ম্পকগুলো বেশ ঠুনকো হয়ে পড়েছে। সেটা বিয়ে হোক আর প্রেমই হোক। তাই কেউই চায় না দায়িত্ব নিতে।
যাইহোক, ধরে নিচ্ছি আপনার জন্য পাত্রী বা পাত্র নির্বাচন করা শেষ। এখন সরাসরি বিয়ের প্রস্তুতি। আমাদের দেশে বিয়ের অনুষ্ঠানগুলো মোটামুটি ৫/৬ টি ধাপে বিভক্ত। যেমন প্রথমে এনগেজমেন্ট, তারপর আখত, মেয়ের গায়ে হলুদ, ছেলের গায়ে হলুদ, বিয়ে বা মেয়ে পক্ষের অনুষ্ঠান, বৌ-ভাত বা ছেলে পক্ষের অনুষ্টান এবং সর্বশষ শোকরানা খাবার। এই অনুষ্ঠানগুলো আমাদের দেশীয় সংস্কৃতির একটা অংশ। যদিও এর মধ্যে অনেক গুলো অনুষ্ঠানই অপ্রয়োজনীয়। যেমন, এনগেজমেন্ট। এটা একটা বেহুদা খরচ। মুসলিম বিবাহ রীতিতে এনগেজমেন্ট বলে কিছু নেই। অনেকই এনগেজমেন্ট করে রাখতে চায়, কারন এটা নাকি পাকা কথা। আমি ব্যক্তিজীবনে অনেক দেখেছি ধুমধাম করে এনগেজমেন্ট করা হচ্ছে। আত্মীয়স্বজনদেরকে অনেকটা বিয়ের খাওয়া ই খাওয়ানো হচ্ছে। কিছুদিন পর মেয়ের সাথে ছেলে মতের অমিল হলো কিংবা ছেলের সাথে মেয়ের মতের মিল হচ্ছে না। পরিনতিতে বিচ্ছেদ এবং এনগেজমেন্ট বাতিল বলে ঘোষিত হয়। এবং সর্বপরি কিছু ফাও টাকা খরচের মাধ্যমে সমগ্র বিষয়টাকে তিক্ত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমার অভিজ্ঞতা থেকে দেখেছি যারা প্রেম করে বিয়ে করেছেন, মূলত তারাই এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠানটি করেন। বিশেষ করে সমবয়সী প্রেমের ক্ষেত্রে এই ব্যাপারটি বেশি লক্ষ্য করা যায়। তাদের ক্ষেত্রে কিছু যুক্তি থাকলেও যারা পারিবারিক ভাবে বিয়ে করতে গিয়ে এনগেজমেন্ট করে আসেন, এটা তাদের জন্য শুধুই একটা অপচয়। তবে সবচেয়ে বড় কথা এটা যার যার ব্যক্তিগত শখ আহলাদের ব্যাপার। তাই আমার এই পর্যবেক্ষনকে আমার একান্তই ব্যক্তিগত বলে ধরে নিবেন।
তাই ধরে নিচ্ছি আপনার এনগেজমেন্ট হচ্ছে। তাহলে কেমন খরচ হতে পারে একটা ধারনা দেয়ার চেষ্টা করছি। যদি আপনি পাত্র পক্ষ হন তাহলে, আপনাকে পাত্রীর জন্য এনগেজমেন্ট এর শাড়ি কিনতে হবে সাথে অন্যান আনুসঙ্গিক জিনিসপত্র যেমন, চুড়ি, কসমেটিসক ইত্যাদি। আপনার সার্মথের উপর ভিত্তি করে এই জিনিসগুলো কিনবেন। শাড়ি এবং অন্যান আনুসঙ্গিক জিনিসগুলো কিনতে প্রায় ১২,০০০ - ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে। ( আমি মধ্যবিত্ত দৃষ্টিভঙ্গী থেকে খরচ গুলো বলছি, এটা যার যার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে বাড়তে পারে বা কমতে পারে)। তারপর গুরুত্বপূর্ন হচ্ছে এনগেজমেন্ট রিং। এটা আপনি আনুমানিক, ৪০,০০০/- হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৭০,০০০/- হাজার টাকার মধ্যে পাবেন। এর কমেও চাইলে পাওয়া যাবে। সংগত কারনেই কেউ কমদামী খুঁজেন না। তবে এই অংক আরো বাড়তে পারে আপনার সামর্থ্যের উপর ভিত্তি করে। এনগেজমেন্ট উপলক্ষে কেক কাটা হয়। এটা ছেলেপক্ষই সাধারনত আনে। আনুমানিক ৫০ জনের জন্য মোটামুটি ভাবে আপনার ৩ পাউন্ডের কেক হলেই চলবে। যদিও দোকানদার আপনাকে বলবে মিনিমাম ৫ পাউন্ডের অর্ডার দিতে। কিন্তু সেটা দরকার নেই। আপনি সুমী'স হটকেক, সিএফসি, মিঃবেকার, কিংস ইত্যাদি দোকান থেকে অর্ডার দিতে পারেন। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে সিএফসির কেক বেশি পছন্দ করি। তাদের একটা কেক আছে 'মেলটেড চকলেট', অতি অসাধারন। আপনি এক পিস খেয়ে শান্তি পাবেন না। এই কেক অর্ডার করতে চাইলে প্রতি পাউন্ড ১২০০ টাকা করে দিতে হবে। কিংস এর কেকও ভাল। তবে একটু বেশি দাম। এই দাম এ আপনি রুপসী বাংলা কিংবা সোনারগাঁ থেকে কেক অর্ডার করতে পারবেন। এছাড়া এনগেজমেন্ট উপলক্ষের আরো কিছু খরচ আছে সেগুলো আশা করি আপনি ১০,০০০/ হাজার টাকার মধ্যে সেরে ফেলতে পারবেন।
আর যদি আপনি পাত্রীপক্ষ হন তাহলেও আপনার খরচ মোটামুটি একই। সেই ক্ষেত্রে যদি ছেলেকে শেরয়ানী কাট পাঞ্জাবী দেন তাহলে ৮,০০০/- হাজার থেকে ১২,০০০/- হাজারের এর মধ্যে অনেক ভালো মানের পাঞ্জাবি পাবেন। এই ক্ষেত্রে ভাসাবি, শর্পাস ওয়াল্ডে না গিয়ে বনানী বাজারের পাশেই একটা দোকান আছে 'মান্যভার' সেখানে যেতে পারেন। (আপনি গেলেই বুঝবেন কেন যেতে বলেছি। আর ছেলের অন্যান জিনিশ পত্র কিনতে গেলে যাই কিনেন না কেন সর্বোচ্চ ৫,০০০/- থেকে ৭,০০০/- টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা। এনগেজমেন্ট রিং আমি যে রেঞ্জ বলেছি তার মধ্যে পেয়ে যাবেন। আপনার এনগেজমেন্ট যদি বাসায় না হয় তাহলে সেই ক্ষেত্রে কমিউনিটি সেন্টার বা চাইনিজ এর খরচ আপনাকে বহন করতে হবে। ১০০ লোকের জন্য আনুমানিক আপনাকে নুন্যতম ৩৫,০০০/- থেকে নিয়ে ৬৫,০০০/- হাজার টাকা খরচ করতে হবে। যদি চাইনিজে করেন তাহলে আগে মনে রাখবেন কাচ্চি বিরিয়ানী, কাবাব, রোষ্ট, বোরহানী/কোল্ড ড্রিংস, পিস সালাদ এবং জর্দা বা ফিরনী এই ক্যাটাগরীর খাবারের জন্য কোনভাবেই ৪৫০/- টাকার বেশি দেয়া যাবে না। এর বেশি হলেই বুঝবেন আপনি ঠকছেন। কারন আপনি বর্তমান বাজার দর অনুযায়ী আপনি যদি নিজে বাজার করে বাবুর্চীকে দিয়ে রান্না করেন তাহলে আপনার ১০০ লোকের জন্য সর্বোচ্চ খরচ হবে ৩২০/- - ৩৯০/- পর্যন্ত।
এরপর আসা যাক ফটোগ্রাফির ব্যাপারটিতে। যারা ব্যাবসায়িক ভাবে ছবি তুলেন এমন কারো কাছে গিয়ে খোঁজ নিন শুধু বিয়ের ছবি কারা তোলেন। মনে রাখবেন বিয়ের ছবি তোলা গুরত্বপূর্ন বিষয়। সবাই বিয়ের ছবি তুলতে পারেন না। আর হাতে ডিএসএলআর থাকলেই কেউ ভালো ফটোগ্রাফার হয়ে যান না। ফেসবুক তো এখন আরো একটি গুগল। অনেক কিছুই আপনি এখানে খুঁজে পাবেন। এই ক্ষেত্রে আপনি ৮,০০০/- থেকে নিয়ে ১৫,০০০/- এর মধ্যে অনেক ভালো ফটোগ্রাফার পাবেন। তবে আপনি যদি নামকরা কোন ফোটোগ্রাফারকে দিয়ে ফটোতুলতে চান তাহলে
আগে খোঁজ নিন ফটোগ্রাফার হিসেবে তার ক্লায়েণ্ট সার্ভিস কেমন এবং জেনে নিন ঐ সুনির্দিষ্ট টাকার বিনিময়ে আপনি কি কি সার্ভিস পাবেন এবং ঐ ফটোগ্রাফার নিজে যাবেন কিনা। সবকিছু জানার পর তারপর বুকিং মানি দিন।
এখন আপনি বলুন এত টাকা খরচ করে আপনি একটা অনুষ্ঠান করছেন যার কোন ধার্মিক ভিত্তি নেই, নেই আইনগত কোন ভিত্তিও তাহলে শুধু শুধু এই অনুষ্ঠানটি করার কোন মানে হয়? তাই যদি একান্ত বাধ্য না হোন তাহলে এনগেজমেন্ট করার দরকার নেই। আর যদি করেনও সেটা মেয়েদের বাসায় পারিবারিক ভাবে করাই ভালো। (আমি আগেই বলেছি এটা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত মতামত)
এরপর আসেন বিয়ে বা আখতের প্রসংঙ্গে। মুসলিম বিয়েতে আখতই মূল অনুষ্ঠান। সাধারনত বিয়ের দিন সকালে আখত পড়ানো হয়। কন্যা পক্ষের বাসায় কিংবা তাদের কাছাকাছি কোন মসজিদে আখত পড়ানো হয়। কন্যা পক্ষই এই আখতের সকল আয়োজন করে থাকেন। শুধু মাত্র কাজীর যে চার্জ তা পাত্রপক্ষ পরিশোধ করবেন। দেনমোহর ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত কাজীর চার্জ হচ্ছে ২,৫০০/- টাকা। তারপর প্রতি লাখে ১০০ টাকা করে দিতে হবে। যদিও এটা নিয়ে কাজী অনেক আইন দেখায়। তার সব কিছু আপনার শোনার দরকার নেই। তবে যেহেতু বিয়ে করছেন চেষ্টা করবেন সবাইকে খুশি রাখতে। অনেক মসজিদে আবার ছবি তুলতে দেয় না কিংবা ভিডিও করতে দেয় না। সর্ম্পূন অজ্ঞাতার কারনে এমনটা বলা হয়। ভিডিও বা ছবি তুলতে কোন সমস্যা নেই। তবে এমন কোন কাজ করবেন না যাতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হয়। আখত বা বিয়ে পড়ানো শেষ হলে সবাকে 'খেজুব' বা 'খুর্মা' খেতে দিন। তারপর কাজি যে বিয়ের রেজিস্ট্রি আপনাকে সই করতে দিবে তাতে ভালো করে নাম, ঠিকানা, বাবার নাম, মায়ের নাম, জন্ম তারিখ দেখে নিন। এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন একটা দলিল। বিশেষ করে যারা বিয়ের পর স্ত্রী বা স্বামীকে দেশের বাইরে নিয়ে যেতে চান তাদের জন্য খুবই গুরত্বপূর্ন ব্যাপার। কোন ভূল হলে পরে বিশাল ঝামেলায় পড়বেন।
বিয়েতে আরো গুরুত্বপূর্ন একটা দিক হলো গায়ে হলুদ। যদিও ধার্মিক ভাবে এর কোন ভিত্তি নেই তারপরও গায়ে হলুদ আমাদের বিয়ে সংস্কৃতির সাথে মিশে গিয়েছে। তাই এটি অবশ্য পালনীয় একটি অনুষ্ঠান। তবে যদি যৌথভাবে হলুদের অনুষ্ঠান করেন সেই ক্ষেত্রে আগেই আখত করে নিতে হয়। এটাই এখন প্রচলিত। যদি আলাদা আলাদা হলুদ হয় সেই ক্ষেত্রে খরচ কিছুটা বাড়লেও মজাও বেড়ে যায়। হলুদ নিয়ে দুই পক্ষের বেশ প্রতিযোগিতা দেখা যায়। এখন অনেক থীম বা ভাবধারা নিয়ে হলুদের অনুষ্ঠানগুলো হয়ে থাকে যার উপর নির্ভর করে হলুদের শাড়ী, ছেলের পাঞ্জাবী, ডালাকুলা, স্টেজ, লাইটিং ইত্যাদি হয়ে থাকে। বাজারে এখন অনেক রেডিমেট ডালাকুলা পাওয়া যায়। যদি আপনার যথেষ্ট লোকবল এবং সৃজনশীল বন্ধুবান্ধব বা ভাইবোন থাকে তাহলে আপনি শুধু ডালাকুলা কিনে তা পছন্দমত সাজিয়ে নিতে পারেন। আর যদি বেশি ঝামেলা না করতে চান তাহলে ডেকোরেটরস এর লোক দিয়ে সাজিয়ে নিতে পারেন। আমার পরিবারে যতগুলো বিয়ে হয়েছে তার অধিকাংশ আমি নিজেই ডিজাইন করেছি আমার নির্বাচিত কিছু লোক দ্বারা। এতে কষ্টও কম হয় আর পাশাপাশি আমি মনমত ডিজাইনও পাই। পোষ্টের শেষে আমি কিছু দরকারী ফোন নাম্বার দিয়ে দিব। যা আপনাকে পরবর্তীতে কাজে লাগতে পারে।
হলুদের দিন সকালে আরো একটা কাজ হলো মেয়েদের বাড়িতে মাছ পাঠানো। আপনি মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজার, মিরপুর বেড়িবাঁধ, কাওরানবাজার এখান থেকে ভালো মাছ পাবেন। তবে মোহাম্মদপুর কাঁচাবাজারে আপনি যদি আগে বলে রাখেন, তাহলে একদম তাজা মাছ পাবেন। আপনি ৩০০০/-৪০০০/- এর মধ্যে মোটামুটি বড় সাইজের ২টা মাছ পেয়ে যাবেন।
মাছ কিনতে আপনাকে অনেক ভোর বেলা যেতে হবে। মাছ কিনে বাসায় ডালাতে সাজিয়ে দিন। ২টা মাছের একটাকে ছেলে আর একটাকে মেয়ে হিসেবে সাজিয়ে দিন।
বাজারে সুন্দর মাছের ডালা কিনতে পাওয়া যায়। মাঝারি সাইজের একটা ডালা কিনতে আপনার নুন্যতম ৫০০/- টাকা খরচ করতে হবে। বেশি বড় সাইজের মাছ কিনলে ২টা ডালা লাগবে।
এরপর আসেন হলুদের স্টেজ এ। আপনার কমিউনিটি সেন্টারের আকারের উপর ভিত্তি করে আপনি কেমন স্টেজ চান তা নির্ধারন করবেন। মনে রাখবেন ছবিতে দেখা সব স্টেজই কিন্তু অনেক সময় বাস্তবে ভালো দেয়ায় না। তাই কতখানি যায়গা পাওয়া যাবে তার উপর নির্ভর করে আপনাকে ডিজাইনের প্ল্যান করতে হবে। সাধারন কমিনিউনিটি সেন্টারগুলোতে আপনি ১০,০০০/- থেকে ১৫,০০০/- এর মধ্যে বেশ ভালো রুচি সম্মত স্টেজ করতে পারবেন। যদি আরো কমে চান সেটাও সম্ভব। তবে তার জন্য আপনার মোটামুটি অভিজ্ঞ লোকবল লাগবে। স্টেজের সাথে আরো একটা জিনিস গুরুত্বপূর্ন, তা হলো হল ডেকোরেশন। এটাও হলের সাইজ এর উপর নির্ভর করবে। সাইজভেদে নূন্যতম ১০,০০০ থেকে ৩০,০০০/- পর্যন্ত হল ডেকোরেশনের জন্য খরচ হতে পারে।
আমার ডিজাইন করা ২ টা স্টেজঃ
এখন হলুদে সাধারনত লেবুর সরবত, জিলাপী, চটপটি, ফুচকা, নানা রকম পিঠা ইত্যাদি সহ আইটেম হিসেবে থাকে। আর মূল আইটেমে তেহারী, সালাদ এবং কোল্ড ড্রিংস দেয়া হয়। তবে অনেকে আবার পলাউ, গরু ভূনা সালাদ কোল্ড ড্রীংস দেয়। ভালো মানের লেবুর শরবত, জিলাপী, চটপটি, ফুচকা ইত্যাদি আইটেমে জনপ্রতি ৫০/- করে পড়ে। আর যদি তেহারী সালাদ এবং কোল্ড ড্রিংস দেন তাহলে জনপ্রতি ১৬০/-১৭০/- টাকা পড়বে। আর যদি পলাউ , গরু ভুনা খাওয়ান তাহলে প্রায় ১৮০/- ২০০/- জনপ্রতি পড়বে। তবে খাওয়ার খরচ নির্ভর করে আপনার রুচির উপর। অনেকে বিয়েতে খাওয়াতে খুব বেশি খরচ করতে চান না। ১০/২০ টাকা বাঁচাতে গিয়ে খাওয়ার মান নষ্ট করেন। এমনটা আপনি অবশ্যই করবেন না।
বিয়ে বাড়ি একটা উৎসবের জায়গা। আর উৎসবের জায়গায় গানবাজনা হবেই। এটাই স্বাভাবিক। ছেলে বা মেয়ের ভাইবোন বন্ধুবান্ধব মিলে নানারকম পারফরম্যান্সও করে। আর শেষ এ হয় ডিজে। সাধারন পাবলিক তো আর ডিজে পার্টিতে যেতে পারে না। তাই হলুদ হলেই সবাই জিজ্ঞেস করে ডিজে আছে নাকি। তাছাড়া পারিবারিকভাবে নাচলে অনেকের লুকানো নাচের প্রতিভা আপনি আবিষ্কার করতে পারবেন। । তো যাই হোক মোটামুটি মানের একটা ডিজে আনতে গেলে আপনাকে সাউন্ড সিস্টেম সহ নূন্যতম ১০,০০০/- থেকে ২০,০০০/- পর্যন্ত খরচ করতে হবে।
তবে আপনি যদি আলাদা সাউন্ড সিস্টেম আনেন তাহলে ভালো মানের ২ পেয়ার সাউন্ড সিস্টমের জন্য নুন্যতম ৩,৫০০ টাকা দিতে হবে। যদি ব্যাকআপ জেনারেটর নেন তাহলে আরো ১,৫০০/- টাকা খরচ করতে হবে। মোটামুটি ভালোমানের একজন ডিজে আপনি ৮,০০০/- এর কমে পাবেন না। যদি পরিচিত কেউ থাকে তাহলে সেটা আলাদা হিসাব। তখন আরো কমে ম্যানেজ হয়ে যাবে।
এখন আসুন বিয়ে বা মেয়ের বাড়ীর অনুষ্ঠানে। যদি একসাথে হলুদ না করে থাকেন এবং যদি আপনি ছেলে পক্ষ হন, তাহলে এইদিন সকালবেলা আপনাকে বিয়ে পড়ানোর কাজ সেরে রাখতে হবে। ছেলেপক্ষ হিসেবে আজকের দিনে তেমন কোন কাজ নেই শুধু মাত্র গাড়ী, বাসর এবং বাসাবাড়ী সাজানো ছাড়া। এইকাজ গুলো করার জন্য দায়িত্ববান কারো উপর ছেড়ে দিন। ওহ একটা গুরত্বপূর্ন কথা, অনেক সময় মেয়েদের গলার কিছু অলংকার থাকে, যা তারা পার্লার থেকে শাড়ির সাথে সেটিং করে আসে, সেগুলো সকালবেলাই পাঠিয়ে দিন। কারন অনেক সময় ঘোমটা খোঁপার সাথে আটকানো থাকে, যা অনুষ্ঠানের সময় আবার খুলে সেটিংস করানোটা অনেক ঝামেলার। তাই আপনার হবু স্ত্রীকে এই ঝামেলাটুকু থেকে মুক্তি দিন। কোন কারনে ঘোমটার সেটিংস নষ্ট হয়ে গেলে তিনি মন খারাপ করবেন। আর ছবিতেও ভালো আসবে না।
এখন আসা যাক, বিয়ের শপিং এর বিষয়ে। বিয়ের জন্য গয়না একটি খুবই গুরত্বপূর্ন ব্যাপার। অন্তত আমাদের দেশের যে প্রেক্ষাপট, তাতে স্বর্নের অলংকারের বেশ ভালো ভূমিকা রয়েছে। এখন ২১ ক্যারট স্বর্নের ভরি প্রায় ৬০,০০০ থেকে ৬৫,০০০ টাকার মধ্যে উঠানামা করছে। একটা বিয়ের মূলখরচই এখানে। অনেক ছেলে এই কারনে বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন কম দুঃস্বপ্নই বেশি দেখে। (যেমন আমি ) কিন্তু তারপর দিতে হবে, এটাই আমাদের সংস্কৃতি। আপনি আপনার সামর্থ অনুযায়ী গয়না দিবেন। তাই এই প্রসংগে বিস্তারিত বলছি না। তবে কি কি দেখে বিয়ের স্বর্ন কিনবেন সেটা নিয়ে আগামিতে একটা পোষ্ট দেয়ার ইচ্ছা আছে। এর পর আসা যাক মেয়ের বিয়ের অন্যান্য কেনাকাটার বিষয়ে। এটাও আপনার সামর্থ্যের উপর নির্ভর করে দিবেন। তবে সাধারন ক্ষেত্রে বলতে পারি মেয়ে এবং তার পরিবারের জন্য আনুমানিক কেনাকাটা আপনার ১,৫০,০০০ মধ্যেই হয়ে যাবার কথা।
আর ছেলের জন্য কেনাকাটা সর্বোচ্চ ৫০,০০০/- ৭০,০০০/- এর মধ্যেই হয়ে যাবে। ছেলেদের শপিং জন্য ৫০,০০০/- টাকা মানে অনেক টাকা। তা আপনি যে শ্রেনীরই হোন না কেন। এছাড়া আরো টুকটাক কিছু খরচ আছে, যা আনুমানিক ১০,০০০ / - ১৫,০০০/- এর মধ্যে হয়ে যাবে।
এরপর আছে কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করার বিষয়। আপনি যদি ভালো কোন সেণ্টার ভাড়া করতে চান তাহলে নুন্যতম ৬ মাস আগে থেকে আপনাকে সেন্টার খুজতে হবে। মোটামুটি ভালোমানের একটা কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করতে গেলে আপনার নুন্যতম ৬৫,০০০/- থেকে ১,০০,০০০/- টাকা খরচ করতে হবে। আর যদি একটু দামী খুঁজেন তাহলে ১,৯৫,০০০/- থেকে ৩,৫০,০০০/- মধ্যে আপনি পেয়ে যাবেন। অনেক কমিনিউটি সেন্টারে যদি আপনি খাওয়া অর্ডার করেন, তাহলে সেইক্ষেত্রে হল ভাড়া লাগে না। তখন জনপ্রতি আপনার ৫৫০ টাকা থেকে নিয়ে শুরু করে ৯৫০ টাকা পর্যন্ত খরচ হবে। আর যদি নিজস্ব বাবুর্চি দিয়ে রান্না করেন কিংবা কোন ক্যাটারিং ফার্মে অর্ডার করেন তাহলে জনপ্রতি ৪০০ টাকা থেকে ৬৫০/- পর্যন্ত সর্বোচ্চ খরচ হবে। নিজস্ব বাবুর্চি বা কোন ক্যাটারিং ফার্ম দিয়ে করালে আপনি আপনার মন মত করে করতে পারবেন। আর খাওয়া মানও নিঃসন্দেহে ভালো হবে।
এরপর ছেলে পক্ষের বাকি থাকে বিয়ের গেট ধরার বিষয়। এটাও এখন পূর্বনির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে মজা করতে কোন বাধা নেই। যেমন আমি আমার এক বন্ধুর বিয়েতে কিছু টাকা ছাপিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম। যদিও এটা প্রিন্ট করতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আমি তা প্রিন্ট করি।
এই টাকাকে আমরা ব্যাপক ভাবে ব্যবহার করেছিলাম। মেয়েপক্ষ আমাদের টাকার এইরকম বহর দেখে প্রথমে ভড়কে গিয়েছিল। পরে ভালো করে লক্ষ্য করতেই গোমর ফাঁস । এই জাতীয় মজা বিয়েতে করাই যেতে পারে। আপনিও চেষ্টা করতে পারেন।
বৌভাতের খরচের ব্যাপারটিও অনেকতা একই রকম। তাই আর বিস্তারিত বললাম না। এমনিতে অনেক বড় পোষ্ট হয়েছে।
আমি যা যা বললাম, এটা ছাড়াও আরো বেশ কিছু খরচ আছে, যেমন হলুদ ও বিয়ের কার্ড ছাপানো। এতে ১০,০০০/- ১৫,০০০ পর্যন্ত খরচ হতে পারে।
পরিশিষ্টঃ
আমি একান্নবর্তী পরিবারের ছেলে। আমার পরিবারের অনেক বিবাহ আমি দেখেছি। তাই বিয়ের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো নিয়ে আমার অল্প বিস্তর ধারনা আছে। আমার এই অভিজ্ঞতার কারনে মোটামুটি সব বিয়েতেই আমার বেশ কদর। হা হা হা। সামনে ঈদের পর অনেকে বিয়ে করবেন, তাই আমার কিছু অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম। আপনাদের মতামত জানাবেন। বিয়ের অগ্রীম শুভেচ্ছা রইল। শুনেছি অন্যের বিয়েতে কাজ করলে নাকি লক্ষী একটা বউ পাওয়া যায়। আমি তো কাজ করে করে ক্লান্ত। এখন লক্ষী আসার পালা। একটা ছোট্ট মোরাল গল্প দিয়ে শেষ করব।
প্রত্যেকটা পুরুষের ভাবনাঃ-
''আমি হয়ত রাজকুমার নই, কিন্তু আমার বউটা নিশ্চয়ই রাজকুমারীর মতো হবে
একজন সত্যিকারী পুরুষের ভাবনাঃ-
''আমার বউ হয়তো রাজকুমারীর মতো নাও হতে পারে, কিন্তু আমি তাকে রাজকুমারীর মতই রাখব ''
ধন্যবাদ
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৪১