হে সর্বশক্তিমান "ধর্ম গ্রন্থে বর্ণীত আছে যুগে যুগে অসৎ কাজে লিপ্ত ও বিশৃঙ্খল বিভিন্ন জাতীকে ধ্বংস করে দিয়েছ তোমার অসীম শক্তি দিয়ে। বঙ্গোপসাগরে তো প্রতি বছর ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে। নিজেদের ভাগ্য উন্নয়নে সাগর পাড়ি দেওয়া চরম দারিদ্র অসহায় ও দুস্থ মানুষ; যারা গত ২ সপ্তাহ হতে অবর্ণনীয় কষ্টে ধুকে ধুকে মারা যাচ্ছে তাদের বঙ্গোপসাগরে ডুবিয়ে মৃত্যু দাও একটা ঘূর্ণিঝড় পাঠিয়ে"। ভাসমান ৮০০০ মানুষের মধ্যে যদি একজন ও খারাপ মানুষ থাকে তবে তার কৃতকর্মের জন্য নৌকা গুলো ডুবিয়ে দাও অথবা, একজন ও যদি ভাল মানুষ থাকে তবে তাকে সম্মানের মৃত্যু নিশ্চিত করো। তাদেরকে "ক্যানিবাল" হওয়া থেকে রক্ষা করো; ক্ষুধার তাড়নায় মানুষকে মানুষের মাংস খাইতে বাধ্য করিয়ো না"।
বণের রাজা ওসমান গনির মতো প্রবাসী শ্রমিকদের মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রায় শুয়ে মহাথির হবার স্বপ্ন দেখেন বাংলাদেশের রাজনীতিবিদরা; কিন্তু যে প্রবাসী শ্রমিকরা এই স্বপ্ন দেখাতে সাহায্য করেন তাদের মৃত্যুর খবরও তাদের বিচলিত করে না। আজকে সংবাদ মাধ্যমে বিবিসি এর হোম পেজে ভবিষ্যৎ মাহাথিরের দেশের নাগরিকরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে নৌকায় অবশিষ্ট খাদ্যে নিয়ে লড়াই করে ১০০ জনের প্রানহানীর সংবাদ ছাপিয়েছে।
"Migrants rescued from a sinking boat off Indonesia have told the BBC that about 100 people died after a fight broke out over the last remaining food." SE Asia migrants 'killed in fight for food' on boat
আশাকরি আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ভবিষ্যৎ মাহাথিরের দেশের নাগরিকদের নিজেদের জীবন বাঁচাতে "ক্যানিবাল" হয়ে প্রথমে মৃত মানুষের ও পরে জীবিত মানুষের মাংস খাওয়া শুরু করেছে সেই কাহিনী স্থান পেয়েছে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
ছবি: বিশ্বের কোন কোন দেশে প্রধানত প্রবাসী বাংলাদেশীরা থাকে।
যে দেশের GDP এর ১০% আসে জীবন বিপন্ন করে বিদেশ পাড়ি দেওয়া প্রবাসী শ্রমিকদের কাছ থেকে Bangladesh Expatriate Workers and their Contribution to National Development , সেই দেশেরই কিছু মানুষ অর্থনৈতিক মুক্তির সন্ধানে একই ভাবে নিজের জীবন বিপন্ন করে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করে সফল না হওয়ায় গত ২ সপ্তাহ সাগরে ভাসছে; জীবন বাঁচাতে একজন অন্যজনকে মারতেছে; হয়ত বা আগামী ২/৩ দিনের মধ্যে ক্যানিবাল হয়ে একজন মানুষের মাংস অন্যজন ভক্ষন করবে।
ছবি: বিদেশে যে বাংলাদেশিরা কর্মরত তাদের যোগ্যতা কেমন?
ছবি: বাংলাদেশে প্রতিবছর প্রবাসীরা যে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠায় তা কোন অন্বচল থেকে কত ভাগ আসে?
বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যান মন্ত্রনালয় এর ওয়েবসাইটে কি লেখা আছে তা পড়ে দেখুন:
"Bangladeshi workers are mainly engaged in 143 countries of the world but about 90% of the migration takes place in the Middle East and Malaysia. ----------------------- The trend of remittance has accelerated in recent years from $2.07 billion in 2001 to $11.00 billion in 2010--------------The oil-rich Middle Eastern countries with more than 80 percent of the total stock of Bangladesh migrants accounts for a lion’s share of remittances. The Kingdom of Saudi Arabia is the most important source of remittances. Its share is about 29 percent of the aggregate remittances received in Bangladesh."
২০১৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত প্রবাসীরা ১৪ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছিল দেশে। এই ১৪ বিলিয়ন ডলারের ৩০% এসেছে শুধু সৌদি আরবে বসবাসরত প্রবাসীদের কাছ থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক এর বর্তমান রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার হতে প্রবাসীদের পাঠানো ১৪ বিলিয়ন বিয়োগ করে দেৌন কয় বিলিয়ন ডলার থাকে বাংলাদেশ সরকারের হাতে।
ভাগ্য বিড়ম্বিত এই সকল দারিদ্র, অসহায় ও দুস্হ্য মানুষের জীবনের মূল্য একটা ব্লাক বেঙ্গল ছাগলের মূল্যের সমান। তারা নিহত হইলে আমাদের জনদরদী রাজনৈতিক নেতারা ইস্ত্রি করা সাদা পান্জাবির বুকে কালো ব্যাচ লাগিয়ে পাজেরো গাড়িতে করে গিয়ে নিহতদের পরিবারকে ১ টা করিয়া ছাগল দিয়া তৃপ্তির ঢেকুর তুলিবেন ; পশ্চিমা দেশের ট্যাক্সের টাকায় ২৪ ঘণ্টা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত অফিসে বসা মানবাধিকার কর্মীরা আমদানি করা সৌর ক্রিম (sunscreen) মেখে ব্যানার নিয়ে ঢাকার পল্টনের প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফটো-সেশন করিতে পরিবেন আগামী বছরের ফান্ড যোগাড় করিবার জন্য।
টেলিভিশনের সাংবাদিকারা আবারও সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখিয়া ব্যস্ত হইয়া পড়িবেন টিএসসি তে যৌন নির্যাতন কারীদের মুখে দাঁড়ি ছিল কি ছিল না তা উদ্ধার করিতে? দৈনিক পত্রিকার সম্পাদকরা আবারও ভারতে সাংবাদিক পাঠিয়ে দীর্ঘদিন পরে জনসম্মুখে আসা কোন বিরোধীদলীয় রাজনীতিবিদ এর জুতা কর্দমাক্ত ছিল নাকি পোলিশ ছিল? মুখে খোঁচা-খোঁচা দাঁড়ি ছিল নাকি ক্লিন শেভ ছিল? তা জানাইতে উদগ্রীব থাকিবেন। সম্পাদকের কাছে এই সকল ভাগ্য বিড়ম্বিত মানুষের কোন নিউজ ভ্যালু নাই। পত্রিকার কাটতি হইবে না এদের খবর ছাপিয়ে।
হল্ফ করিয়াই বলা যায়, বাংলাদেশের মানুষরা আগামী ৭ দিনের মধ্যেই সাগরে ডুবিয়া কয়েক হাজার বাংলাদেশির মৃত্যুর ঘটনা (যদি আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করিয়া নেন) ভুলিয়া যাইবে; যেমন করিয়া ভুলিয়া গিয়েছে রানা প্লাজায় চাপা পড়িয়া নিহত প্রায় ২০০০ জন গার্মেন্টস শ্রমিকের কথা। দেশের মানুষ বা গণমাধ্যম যেন রানা প্লাজা দুর্ঘটনার দিনটা মনে করিতে না পারে তাই সরকার বাংলাদেশ-পাকিস্তান ক্রিকেট ম্যাচের আয়োজন করেন জনগণকে মাদকে আসক্ত ব্যাক্তির মতো নেশাগ্রস্ত করিয়া রাখিতে।
হে দারিদ্র জনগোষ্ঠী জন্মই তোমাদের আজন্ম পাপ। প্রথম অপরাধ গরিবের ঘরে জন্ম নিয়েছ। দ্বিতীয় পাপ অর্থনৈতিক মুক্তির সন্ধানে জীবন বিপন্ন করে সাগর পাড়ি দিয়ে বিদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছো।
গ্রীক মিথলোজিতে গল্প আছে রোম শহর যখন পুড়ছিল তখন রোম সম্রাট নিরো বাঁশি বাজাচ্ছিল। গ্রীক মিথলোজিতে বর্ণীত গল্পের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে পারলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের মন্ত্রী-এমপিরা প্রবাসী বাংলাদেশী শ্রমিকদের লাশের স্তূপের উপর বসে শেখ হাসিনাকে মহাথীর হবার স্বপ্ন দেখাচ্ছেন মাহাথিরের পথেই হাসিনা: নাসিম তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করার কোন উপায় নাই।
মঙ্গোল সম্রাট চেঙ্গিস খান ও হালাকু খান সারা এশিয়া দখল করে; বাগদাদ নগরীর শিল্প সাহিত্য স্থাপত্য ধ্বংস করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে নিজের বীরত্বের পরিচয় দিলেও মানব সভ্যতার ইতিহাসে একজন ঘৃণিত ব্যক্তি হিসাবেই পরিচিত। অসহায় দুস্থ মানুষের জীবনের বিনিময়ে অর্জিত শক্তি, সম্পদ, নাম কোনদিনও কাউকে মানসিক শান্তি দিতে পারে না।
হে সর্বশক্তিমান আবারও প্রার্থনা করে বলি "বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় দিয়ে ভাসমান মানুষ গুলোকে গৌরবের মৃত্যু দাও; তাদেরকে "ক্যানিবাল" হওয়া থেকে রক্ষা করো; মানুষের মাংস মানুষকে খাইতে বাধ্য করিয়ো না"
অবৈধ ভাবে বিদেশে যাওয়া শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্সের যেমন মূল্য আছে সরকারের কাছে তেমনি তাদের জীবনের মূল্য দেওয়া উচিত। প্রবাদে আছে "পেটে খেলে পিঠে সয়"। তাই অবৈধ ভাবে বিদেশের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়ে সফল না হওয়া বাংলাদেশিদের ফিরিয়া আনার ব্যবস্হা করাটা সরকারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৪৩