গ্রীক মিথোলজিতে আছে রোম যখন আগুনে পুড়তেছিল, রোম সম্রাট নিঁরো তখন বাঁশি বাজাচ্ছিল। ঐ ঘটনা আদৌ ঘটে ছিল কি না তা নিয়ে সংশয় থাকলে থাকতে পারে কিন্তু আমি হলফ করে বলতে পারি অভিজিৎ রায়কে হত্যাকরে যখন হত্যা-করিরা চলে যাচ্ছিল তখন সেখানে উপস্থিত পুলিশের হৈমন্তী শুক্লার গানে ঠোট মিলাচ্ছিলেন:
"আমার বলার কিছু ছিল না
না-গো আমার বলার কিছু ছিল না
চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে চলে
তুমি চলে গেলে চেয়ে চেয়ে দেখলাম
আমার বলার কিছু ছিল না"
গতকালকে দৈনিক প্রথম আলোতে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে একটা রিপোর্ট ছাপা হয়েছে যার শিরোনাম ছিলো "খুনিরা দিব্যি চলে গেল, পুলিশ নীরবে দেখল"।
রিপোর্টের সাথে একটা ম্যাপে হত্যাকান্ডা সংগঠিত হওয়ার স্থান, পুলিশের অবস্থান ও হত্যাকারীদের পালিয়ে যাওয়ার পথ দেখানো হয়েছে। ঐ ম্যাপ দেখে আমার মনে প্রথমেই যেই ভাবনা টা আসলো সেটা হলো হত্যাকারীরা পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মামা-ভাগ্নে সম্পর্কের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করেছে।
আপনাদের নিশ্চয় কোন দ্বিমত করবেন না আমার সাথে যে গত ৬ বছরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রলীগ প্রকাশ্য খুন, ধর্ষণ, ইভ-টিজিং, চাঁদাবাজির কার্যক্রমে নির্যাতিত মানুষকে রক্ষা করতে এগিয়ে এসেছে। বইমেলার সময় ফুটপাথের দোকান হতে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি ও সোরোয়ার্দি উদ্যানে বইমেলায় আগত মানুষদের সিনতাই পূর্ণিমার চাঁদের আলোর মতই ফখফখা।
#### এক সপ্তাহ পূর্বেও পত্রিকার পাতায় দেখলাম বইমেলায় আগত একটা মেয়েকে ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা শত-শত মানুষের সামনে তুলে নিয়ে গেছে।
#### গতবছর পত্রিকায় দেখেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রোক্টর ছাত্রলীগের বিভিন্ন হল শাখাকা বইমেলার বিভিন্ন দিকের রাস্তার ফুটপাথের উপরের দোকানগুলা হতে চাঁদা তুলার ইজারা দিয়েছিলেন। ঐ ইজারার একটা নির্দিষ্ট অংশ পেত পুলিশ ও প্রোক্টর। তাই বই মেলার সময় ঐ এলাকায় সংগঠিত সকল অপ-কর্মে চোখ বন্ধ করে থাকে পুলিশ। কারণ তারা ধরেই নিয়েছে যে বনে বাঘ (ছাত্র লীগের সোনার ছেলেরা) আছে সেই বনে শিয়াল (বিরোধী রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের সদস্য) আসবে না বাবা-মা প্রদত্ত প্রাণের ভয়ে।
#### পুলিশের সামনে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের কথা মনে আছে? পুলিশ কেন বাধা দেয় নাই সেটা মনে আছে?
#### প্রতিবছর ১লা বৈশাখের দিন টিএসসিতে ছাত্রলীগ ক্যাডারদের হাতে শ্লীলতাহানি ও নির্যাতনের শিকার হওয়ার খবর নতুন করে বলে দিতে হবে না নিশ্চয়।
#### অপহরণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে রেখে টাকা আদায় করতে গিয়ে হাতে নাতে পুলিশের হাতে ধার পরা ও সগৌরবে বেড় হয়ে আসার খবরও নতুন কিছু না।
#### কিছুদিন পূর্বে দিনের আলোয় শহিদুল্লা হলের পুকুর পাড়ে একজন মেয়ের কামিজ ছিঁড়েছিল তার ফটো-সাংবাদিক মামার উপস্থিতিতে সেটা নিশ্চয় ভুলে যান নি।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হলো ঐ এলাকায় অবস্থান করা পুলিশ বাহিনীর অবস্থা হয়েছে ইশপের মিথ্যাবাদী রাখাল বালকের গল্পে মতো। হত্যাকারীরা নিশ্চিত ছিল এই এলাকায় অভিজিৎ রায় এর উপর হামলা করলে পুলিশ এগিয়ে আসবে না। তাই তো পুরো ঢাকা শহর রেখে টিএসসিতে এসে পুলিশের চোখের সামনে হামলার পরিকল্পনা করে হত্যাকারীরা ও তা সফল ভাবে বাস্তবায়ন করে পালিয়ে যায়।
পুলিশ বরাবরের মতো মনে করেছিল ছাত্রলীগ কাউকে পিটাইতেছে যা তারা প্রত্যেক বইমেলা কিংবা ১লা বৈশাখ সহ সারাবছরই নিয়মিতই করে থাকেন; যেহেতু টিএসসি, শাহবাগ, নীলক্ষেত, চাঙ্খার পুল ও বঙ্গ বাজার এলাকার অ-লিখিত প্রশাসক তারাই। তাইতো, অভিজিৎ এর বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার শুনেও পুলিশ এগিয়ে আসেনাই।
হত্যাকারীরা পুলিশ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের মামা-ভাগ্নে সম্পর্কের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে এই সুযোগে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যার।
চোখের সামনে দিয়ে হত্যাকারীকে চলে যেতে দেখে ডিউটি-রত পুলিশ অফিসারটি চোখ বন্ধকরে আই ফোনে চালু করে দিয়েছিলেন হৈমন্তী শুক্লার বিখ্যাত গান:
"আমার বলার কিছু ছিল না
না-গো আমার বলার কিছু ছিল না
চেয়ে চেয়ে দেখলাম তুমি চলে চলে
তুমি চলে গেলে চেয়ে চেয়ে দেখলাম
আমার বলার কিছু ছিল না"
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মার্চ, ২০১৫ দুপুর ১:৫০