পৃথিবীর ইতিহাস সাক্ষ দেয় মানুষের উপর জোড় করে আস্তিকতা কিংবা নাস্তিকতা চাপিয়ে দেওয়া হলে ফলাফল বিপরীত হয়
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
২০১৪ সালের নভেম্বর মাসে The Economist ম্যাগাজিনে একটা আর্টিকেল প্রকাশিত হয়ছে যার শিরোনাম ছিলো "Religion in China: Cracks in the atheist edifice" যে আর্টিকেলে বলা হয়েছে চিন সরকার নতুন করে চিন্তা করতেছে নাগরিকদের উপর বাধ্যতামূলক ধর্মহীনতা চাপিয়ে দেওয়া নিয়ে। আর্টিকেলে আরও লিখা আছে
The rapid spread of Christianity is forcing an official rethink on religion
উক্ত প্রবন্ধ থেকে কয়েকলাইন তুলে দিচ্ছি:
"Christians in China have long suffered persecutiont. Under Mao Zedong, freedom of belief was enshrined in the new Communist constitution (largely to accommodate Muslims and Tibetan Buddhists in the west of the country). Yet perhaps as many as half a million Christians were harried to death, and tens of thousands more were sent to labour camps."
উপরে উদাহারন দেওয়া হলো মানুষের উপর জোড় করে ধর্মহীনতা চাপিয়ে দিলে ফলাফল কি হতে পারে। এবারে উদাহারন দেই মানুষের উপর জোড় করে ধর্ম চাপিয়ে দিলে কি হতে পারে?
একই মাসে একই ম্যগাজিনের কভার স্টোরি করা হয় ইরান কে নিয়ে যার টাইলেট ছিলো "The revolution is over"। ঐ সংখ্যার ভিতরে একটা আর্টিকেল ছিলো ইরানের মানুষের ধর্ম পালন নিয়ে যার টাইটেল ছিলো "Religion: Take it or leave it" যার বিষয়বস্তু ছিলো
Ordinary Iranians are losing interest in the mosque
ইরানে ১৯৭৯ সালে ইসলামিক বিপ্লব সংগঠিত হবার পূর্বে শাসক ছিল শাহ্; যিনি রাষ্ট্রীয় ভাবে ছিলেন ধর্ম নিরপেক্ষ (বাস্তবে ধর্ম বিদ্বেষী)। শাহ্ ১৯৫৩ সালে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসার পরে অনেক ধর্মীয় নেতাকে ফাঁসির দড়িতে ঝুলান। ফলে যা হাওয়ার তাই হয়েছিল; ইরানের মানুষরা শাহ্ এর বাধ্যতামূলক ধর্মহীনতা চাপিয়ে দেওয়া হইতে বিপরীত হয়; ফলাফল আয়াতুল্লাহ খোমেনির নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লব সংগঠিত হয় ১৯৭৯ সালে। উক্ত প্রবন্ধ থেকে কয়েক লাইন তুলে দিচ্ছি আপনাদের জন্য:
"The transformation of Shia Islam into an ideology undermined both the state and the mosque. The great irony of the Islamic revolution is that inadvertently it did more to secularise the country than the tyrannical shah, who ruled Iran after a coup in 1953 and persecuted clerics. By forcing religion on people it poisoned worship for many. They are sick of being preached at and have stopped listening."
ইরানের ধর্মীয় শহর "কউম" এর কি অবস্হা তা পড়ে দেখুন:
"Nowhere is change more apparent than in Qom, the religious capital. Pilgrims throng the shrines and listen to anti-Western sermons given by turbaned ayatollahs. But this is mostly a veneer. Government offices and seminaries on Martyr Street, which the locals call Time To Have Fun Street, are dwarfed by the multi-storey Pearl shopping mall, where the female mannequins wear tight jeans"
আপনি হয়ত মনে করতে পারেন The Economist ম্যাগাজিন ইরাকে নিয়ে অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশন করেছে। তবে আপনাকে আমার নিজের অবিজ্ঞতা বলি। আমার ৭ জন ইরানি ছেলে ও মেয়ে বন্ধুর মধ্যে ৪ জন শুয়োরের মাংস খায়; আর পানির বদলে খায় মদ। এদের মধ্যে মাত্র ২ জনকে দেখেছি রোজা ও ঈদ পালন করতে।
প্রাথমিক ভাবে মনে করছি ধর্মীয় উগ্রবাদীদের চাপাতির কোপে ব্লগার অভিজিৎ রায়ের মৃত্যু। আমি হলফ করেই বলতে পারি এই হ্যতাকান্ড পৃথিবীর ৭০০ কোটি মানুষের অগণিত নাস্তিকের মধ্যে ১ জনকেও আস্তিক বানাবে না। বরং উগ্রবাদিতার জন্য ধর্মপালন কারীদের উপর ধর্ম নিরপেক্ষ মানুষদের ক্ষোভ জন্মাতে পারে।
চরম উগ্রতা কোনদিনও কোন ক্ষেত্রে কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না। চরম আস্তিকের চাপাতির কোপের ভয়ে কোন নাস্তিকের মুখ বা কলম সাময়িক ভাবে বন্ধ হয়ে যাবে হয়ত; কিন্তু সেই নাস্তিক ব্যক্তিটিকে আস্তিক বানানো সম্ভব হবে না। বিপরীতক্রমে, চরম নাস্তিকের ধর্ম নিয়ে খিস্তি-খেউর ও ফ্রি স্টাইল গালা-গালি শুনে কোন আস্তিকই তার ধর্ম বিশ্বাস ত্যাগ করবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
চাপাতির কোপে ব্লগার অভিজিৎ রায়ের অস্বাভাবিক মৃত্যুর সংবাদ পড়ে বিখ্যাত মার্কিন দার্শনিক মার্কিন লুথার কিং জুনিয়র এর বিখ্যাত "Darkness cannot drive out darkness; only light can do that. Hate cannot drive out hate; only love can do that." উক্তির কথা মনে পড়ে গেল।
প্রবাদের আছে "A pen is mightier than a sword"।
ধর্মীয় উগ্রবাদীরা যদি চাপাতির পরিবর্তে কলম বা কিবোর্ড দিয়ে অভিজিৎ রায়ের সাথে লড়াই করত তবে হয়তবা একজন ধর্ম বিদ্বেষী এর ধর্ম প্রেমিক হবার সম্ভাবনা থাকলেও থাকতে পারত। কিন্তু মূর্খরা হেঁটেছে ভুল পথে; তুলে নিয়েছে কলম ও কিবোর্ডের পরিবর্তে চাপাতি।
আমার ব্যক্তিগত মতামত হলো সমাজ থেকে যে কোন উগ্রবাদীতা দূর করার একটাই উপায় শিক্ষা। Nelson Mandela এর একটা উক্তি দিয়ে শেষ করতেছি "Education is the most powerful weapon which you can use to change the world."
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
হাসান মাহমুদ গর্ত থেকে বের হয়েছে
যুক্তরাষ্ট্রের একটি বাংলা টেলিভিশন চ্যানেল হাসান মাহমুদের সাক্ষাৎকার প্রচার করেছে। আমি ভাবতেও পারি নাই উনি এতো তারাতারি গর্ত থেকে বের হয়ে আসবে। এই লোকের কথা শুনলে আমার গায়ের লোম... ...বাকিটুকু পড়ুন
দারিদ্রতা দূরীকরণে যাকাতের তাৎপর্য কতটুকু?
দরিদ্র দূরীকরণে যাকাতের কোনো ভূমিকা নেই।
যাকাত দিয়ে দারিদ্রতা দূর করা যায় না। যাকাত বহু বছর আগের সিস্টেম। এই সিস্টেম আজকের আধুনিক যুগে কাজ করবে না। বিশ্ব অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন
শেখস্তান.....
শেখস্তান.....
বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন
সেকালের বিয়ের খাওয়া
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
১৯৬৮ সালের ঘটনা। বর আমার দূর সম্পর্কের ফুফাতো ভাই। নাম মোঃ মোফাত আলী। তার বিয়েটা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল। বাবা ছিলেন সেই বিয়ের মাতব্বর।... ...বাকিটুকু পড়ুন
বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে মৈত্রী হতে পারে?
২০০১ সাল থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত আওয়ামী লীগের ওপর যে নির্যাতন চালিয়েছে, গত ১৫ বছরে (২০০৯-২০২৪) আওয়ামী লীগ সুদে-আসলে সব উসুল করে নিয়েছে। গত ৫ আগস্ট পতন হয়েছে আওয়ামী... ...বাকিটুকু পড়ুন