আমার আড়াইতলা বাড়ির ছাদে প্রায়ই একা একা পায়চারি করতাম। আড়াইতলা বললাম, কারণ বাড়ির ছাদে ছোট্ট একটা চিলেকোটা ছিল। সেখানে কিছু সুখপাখিদের বসবাস। একটা সুখ পাখি প্রায়ই আমার দিকে চেয়ে থাকতো। আমার বন্ধু হতে চাইতো।
একদিন আমি আর সুখপাখিটা ভালো বন্ধু হয়ে গেলাম। দুজনে বিকেলে ছাদে বসে গল্প করতাম। কত কথার ফুলঝুড়ি আর ছোট ছোট খুনসুটি। কথা যেন দুজনার ফুরোতো না। সুখপাখিটা শুধু বলতো আর আমি শুনে যেতাম। আমার কাছে সব কিছু স্বপ্নের মত লাগতো।
সুখপাখিটার কবিতা বলার অভ্যাস ছিল। মাঝে মাঝেই আমাকে তার কবিতা শোনাত। তার সাথে চুক্তি ছিল, প্রতি সপ্তাহে সে একটা করে কবিতা শোনাবে। আমি মুগ্ধ হয়ে তার কবিতা শুনতাম। তার কবিতাগুলো শুনতে শুনতে কখন যে সুখপাখিটার প্রেমে পড়ে গেলাম বুঝতে পারি নি। কয়েক বছর কেটে গেল, আমার প্রেমটাও বেড়ে গেল।
ঠিক এমন সময় কোথা থেকে যেন তার সঙ্গীপাখি এসে তাকে ডাকতে শুরু করলো। শুনলাম অনেক আগেই সেই সঙ্গীপাখিটার সাথে তার পরিচায়, পরিচয় থেকে তাদের মন দেওয়া-নেওয়া। সুখপাখিটা যখন সেই সঙ্গীপাখিটার ডাকে সাড়া দিয়ে চলে যেতে চাইলো; ঠিক তখনি আমি আমার প্রেমের কথা তাকে জানালাম। তখন পাখিটার এইরূপ অবস্থা হলো যে, সে না পারে তার সঙ্গীপাখিটার সাথে যেতে, না পারে আমার প্রেমে সাড়া দিতে। সুখপাখিটা দোটানায় পড়ে গেল।
কিছুদিন এভাবেই কেটে গেল। একদিন সুখপাখিটা আমাকে জানালো সে তার সঙ্গীপাখির সাথেই যেতে চায় সেখানেই সে ঘর বাধতে চায়, আর তার সঙ্গীপাখিটার সাথেই সে সুখি হতে চায়। আমিও চেয়েছিলাম সুখপাখিটা সুখে থাকুক। তাই তাকে যেতে বাধা দেয়নি। যাওয়ার আগে শেষবারের মত আমাকে এই কবিতাটি শোনাল__
অবশেষে তুমি এলে, যখন ঝরা পালক ঝরে যায়
পাখিরা নীড়ে ফেরে।
কিন্তু কেন আমি ফিরতে পারি না?
ভালোবাসায় নাকি ঘৃণায়!
নিমগ্ন ছিলাম তোমার ভালোবাসার ইন্দ্রজালে,
মানুষ হয়েও কেন তলিয়ে গেলাম?
কোন এক ভুলে, নাকি ভালোবাসার প্রতারণায়!
আজকের পরে তুমি অন্যের হবে,
ঘৃণায় নয়, বিশ্বাস করো- শুধু ভালোবাসায়।
স্বীকারোক্তিঃ ২৫ শে ডিসেম্বর এলেই সুখপাখিটার কথা বেশি মনে পড়ে। অনেকদিন পরে আজ আবারো সেই সুখপাখিটার সাথে ফোনে কথা হল। কিন্তু দুঃখের কথা হলো- তার সেই সঙ্গীপাখিটা তাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্য পাখির খোজে। তাই সুখপাখিটা আজ সুখে নেই। এটা শুনে কেন জানি বুকের বাম পাশটা চিনচিন করে উঠলো। চেয়েছিলাম, সুখপাখিটা চির সুখে থাকুক। কিন্ত...