দুর্বৃত্তর সংজ্ঞায়নই দুর্বৃত্তায়ন হয়ে গেছে...পরিচয় জেনেও,ঘটনার মোটিভ জেনেও আমাদের মিডিয়াবন্ধুদের ঘটনা ভিন্ন ধারায় প্রবাহিত করার চেষ্টা মিডিয়াকেই দুবৃত্তদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল করে তুলেছে!
খুব জানার ইচ্ছা হয়,মিডিয়া বন্ধুদের কেউ যদি ভবিষ্যতে কোন দিন এই নাম-পরিচয় জানা দুবৃত্তদের লাঞ্ছনার শিকার হন, তখনও কি তারা 'দুর্বৃত্ত' থাকবে না আসল নাম-পরিচয় প্রকাশ হবে না স্বাভাবিক ভাবেই ঘটনাগুলো নিয়ে ব্যবসা চলবেই...অতীততো বলে মিডিয়াগুরুরা সংবাদকর্মীদের চরম দুঃসময়টা নিয়েও ব্যবসা করে,এটা যে ওদের মজ্জাগত!
কিছু পরিসংখ্যান দেখুনঃ
>> ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাস, ২৬ টি ঘটনায় মত ৭২ জন সাংবাদিক নিগৃহের শিকার হন। এরমধ্যে ৫৭ জন আহত, লাঞ্ছিত ৬ জন, নানাভাবে মানসিক নির্যাতনের শিকার ৪ জন, হত্যার হুমকি পান ৫ জন। বলে রাখা ভালো, এই মাসে 'দুর্বৃত্তরা' জাতীয়ভাবে সাংবাদিক নির্যাতন করেছেন মানে সারাদেশে সাংবাদিকরা হামলার শিকার হয়েছেন।এমনও দিন গেছে এই মাসে যে দিনে ৫০ জন সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।১২টি ইসলামী দলের ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতালের সময় বান্দরবানে চ্যানেল আইয়ের রিপোর্টার কবির হোসেন সিদ্দিকীর উপর প্রকাশ্যে হামলা চালায় 'দুবৃত্তরা'। কোন এক বিরোধের সূত্র ধরে 'দুর্বৃত্ত'বান্ধব বলে পরিচিত এক পত্রিকার সম্পাদকের গাড়িতে 'দুর্বৃত্তরা' হালকা ঠেসে দিয়েছিল এই মাসেই।
>>দৈনিক অর্থনীতি প্রতিদিনের দাউদকান্দি উপজেলা প্রতিনিধি সাংবাদিক শহিদ উল্লাহ সাদা ২৮ নভেম্বর,২০১৩ সকাল সাড়ে ১০টায় দুর্বৃত্তদের অবরোধ চলাকালে শহীদনগরের বাগুলপুরে ছবি তুলতে গেলে দাউদকান্দি উপজেলা 'দুর্বৃত্ত' ক্যাডার বাহিনী রড, পাইপ, লাঠি ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে এলোপাতাড়ি ভাবে হামলা চালিয়ে তাকে গুরুতর আহত করে।
>>ডিসেম্বর ১২, ২০১৩ সালে বগুড়ার কাহালুতে কাহালু প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি তানসেন আলম ও বর্তমান সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিনকে বেদম মারধর করেছে দুবৃত্তরা, উল্লেখ্য সরাসরি 'দুর্বৃত্তদের' মিছিল থেকেই এই হামলার সূচনা।
>> ডিসেম্বর ১৫, ২০১৩ সালের পত্রিকাগুলো ঘেটে দেখুন।সাতক্ষীরায় 'দুর্বৃত্তদের ' হাতে ২২ জন স্থানীয় সাংবাদিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।মানবজমিন পত্রিকার সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ইয়ারব হোসেন ও কলারোয়ার সাংবাদিক আব্দুর রহমানকে 'দুর্বৃত্তরা' পিটিয়ে হাত-পা ভেঙ্গে দিয়েছিল।
>>৩০ শে জানুয়ারী,২০১৪, রাজশাহীতে দুর্বৃত্তদের ছোড়া বোমায় ৩ সাংবাদিক আহত।উল্লেখ্য, ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলার রায়ের প্রতিবাদে রাজশাহীতে 'দুর্বৃত্তদের' বিক্ষোভ মিছিল থেকে এই হাতবোমাটি ছোড়া হয়।
এখানে অল্প কিছু পরিসংখ্যান দিলাম।সাংবাদিক বন্ধুরা,আপনারা ভালো করেই অবগত আছেন এই দুঃসময়গুলোতে মিডিয়া মালিকেরা কতটুকু আপনাদের পাশে দাঁড়িয়েছিল,আর,কতটুকু আপনাদের নিয়ে ব্যবসা করে পকেট ভরিয়েছে! আপনারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেন আর মিডিয়া মোগলরা উঁচু দালানে বসে দুর্বৃত্তদের সাথে সন্ধি করে নিরাপদে বেঁচে থাকার,বিশাল অর্থের বিনিময়ে খবর বদলে দেওয়ার। আপনাদের জীবন,আপনাদের কষ্টের দাম তাদের কাছে দুই পয়সাও না!
তাহলে কেন আপনারা চুপ করে থাকবেন! কেন জেনেও দুর্বৃত্তদের পরিচয় প্রকাশ করছেন না, চাকরি বড় না জীবন বড়! মিডিয়াতে প্রকাশ করতে না পারুন,অন্ততপক্ষে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে তাদের পরিচয় প্রকাশ করে নিজের দায়বদ্ধতার প্রশ্নে নিজেকে স্বচ্ছ রাখুন,সাধারণ মানুষের সচেতনতার জন্য কাজ করুন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই নভেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৮