কেমোথেরাপি সাধারণত সেসব কোষকেই ধ্বংস করে যারা দ্রুত বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। শরীরের অন্যান্য টিস্যুগুলো যেভাবে বাড়ে ক্যান্সারের টিস্যুগুলো তার চেয়ে কয়েকগুণ হারে বিভাজিত হয়ে সংখ্যা বৃদ্ধি করে। আর যার বিভাজন ক্ষমতা যতবেশী তার বিরুদ্ধে কেমোথেরাপির অ্যাকশনও তত বেশী।
আমাদের বডি টিস্যুগুলো বিলিয়ন-বিলিয়ন আলাদা আলাদা সেল নিয়ে তৈরি। যখন আমরা পূর্ণবয়স্ক হয়ে যাই, তখন অধিকাংশ বডি সেলই তাদের সংখ্যা বৃদ্ধির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া বা বিভাজন বন্ধ করে দেয়। শুধুমাত্র ড্যামেজ সেলগুলো রিপেয়ার করার প্রয়োজনেই তারা আবার বিভাজিত হয়। যখন সেল গুলো বিভাজিত হয় তখন একটা সেল থেকে ২ টা, ২টা থেকে ৪ টা, ৪ টা থেকে ৮টা এভাবে সংখ্যাধিক্য ঘটায়।
ক্যান্সার সেলগুলোর ক্ষেত্রে এই বিভাজনের কোন সীমা-পরিসীমা নেই। যেহেতু তারা অন্যান্য বডি সেলের চেয়ে দ্রুত বাড়ে এবং নির্বোধের মতই বাড়তে থাকে, তাই,আক্রান্ত অঙ্গে টিউমার হতে খুব বেশী সময় নেয় না।
প্রতিটি জীবিত সেলের কেন্দ্রে একটা গাড় রঙ্গের বস্তু লক্ষ করা যায়, যাকে নিউক্লিয়াস (এটাই কোষের প্রাণ) নামে ডাকা হয়।এই নিক্লিয়াসটাই হচ্ছে পুরো সেলের cpu বা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। সেলগুলো ক্রোমসোম বহন করে যেটা আবার অনেকগুলো 'জিন' নিয়ে গঠিত। যখন ১ টা সেল থেকে ২ টা সেল হয় তখন ক্রোমসোমের জিনের structure টা হুবুহ কপি হয়ে যায়।
কেমোথেরাপির কাজ হচ্ছে গিয়ে বিভাজমান কোষগুলোর জিনের structure টা নষ্ট করে দেওয়া। কিছু ড্রাগ সেলের বিভাজনের সময় ধ্বংস করতে কাজ করে আর কিছু ড্রাগ তখনই কাজ করে যখন মাত্র সেলগুলো বিভাজনের জন্য জিনের structure কপি করে মানে বিভাজন প্রক্রিয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে।
এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, সাধারণ অনেক সেলইতো বিভাজনের তালে থাকে,সবার তো আর বিভাজন বন্ধ হয় না বা প্রয়োজনের সময় চালু করে; তাদের ক্ষেত্রে কি হবে? সোজা বাংলায় উত্তর দিতে গেলে,কেমোথেরাপি তাদেরকেও ছাড়বে না,দ্রুত বিভাজন হচ্ছে দেখলেই সাথে সাথে অ্যাকশন নিবে। তাহলেতো শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে,এখন উপায়? উপায়ের ব্যাপারটায় কিছুক্ষন পরেই আসছি।
কেমোথেরাপিগুলো একের অধিক ড্রাগের সমন্বয়েও গঠিত হতে পারে। কম্বিনেশন যত ভালো হবে,বিভিন্ন স্টেজে বিভাজনের ধান্ধায় থাকা কোষগুলোর দুঃখও তত বাড়বে।
এখন আসি সেই উত্তরে, কেমোথেরাপিতো নরমাল বিভাজমান সেলগুলোও ধ্বংস করে যেমনঃচুল, বোনমেরুর টিস্যু, ত্বকের বিভাজমান টিস্যু ইত্যাদি যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর,তাহলে উপায়? হ্যাঁ,অবশ্যই কেমোথেরাপির এই বাড়াবাড়ি রকম আচরণের কারনে শরীরে কিছু সাইড এফেক্ট দেখা দিতে পারে যেমনঃ চুল পড়ে যাওয়া, বোনমেরুতে ব্লাড সেল উৎপাদন কমে যাওয়া,শারীরিক দুর্বলতা,ডায়রিয়া ইত্যাদি। কিন্তু,আপনার মনে রাখা উচিত শরীরের নরমাল বিভাজমান সেলগুলোর শরীরে এত্তগুলান ভালো পুষ্টি থাকে যে এগুলোকে যতই ধ্বংস করা হোক না কেন, এরা নিজেদেরকে পুনরায় গড়ে নিতে সক্ষম।যতদিন কেমোর সাইকেল গুলো চলতে থাকবে,ততদিন কিছুটা সমস্যা হবে।কেমোর সাইকেল শেষতো ভুল যায়গায় মামুজানের কেরামতি দেখানোও শেষ। তখন,স্বাভাবিক বিভাজমান সেলগুলো সাধারণের মতই আচরণ করতে শুরু করবে।তবে,অবশ্যই,আপনাকে ডায়েটের ব্যাপারে কোন আপস করা চলবে না,মানে,চোখ-নাক বন্ধ কইরা প্রচুর খেতে হবে। অন্যদিকে,ক্যান্সার সেলগুলো দ্রুত বিভাজিত হওয়ার ক্ষমতাসম্পন্ন হলেও কেমোথেরাপির বিরুদ্ধে অধিকাংশ সময়ই তারা মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারে না। মিয়া, 'খালি মোটা হইলেই দারগা হওয়া যায় না :p '
কেমোথেরাপি কিভাবে দেয়? দেয় না নেয় !
>> রক্তস্রোতের মধ্যে ইনজেকশন (সাধারণত শিরার মাধ্যমে)
>> স্যালাইনের সাথে মিক্স করে ফোঁটায় ফোঁটায় নরমাল স্যালাইন দেওয়ার মত করে রক্তে মিশিয়ে দেওয়া (এটাও সাধারণত শিরার মাধ্যমে দেওয়া হয়)
>> ট্যাবলেট আর ক্যাপসুল প্রসেসতো আছেই
যখন যেখানে যেভাবে বুঝ দেওয়া যায় আরকি!
কেমোথেরাপির ড্রাগগুলো রক্তের সাথে মিশে শরীরের প্রায় সব যায়গায় যেখানে বিভাজমান সেলগুলো আছে সেখানে পৌঁছে তার কারিশমা দেখায়। আর,এই প্রক্রিয়াটাকেই সাধারণত ক্যান্সারের সিস্টেম্যাটিক ট্রিটম্যানট হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
#আমি কোন ডাক্তার বা বিজ্ঞানী না বা এই রিলেটেড কেউ না।সাধারণ একজন মানুষ। নিজের একান্ত ব্যাক্তিগত কিউরিসিটি থেকে যা জানতে পেরেছি,তাই,লেখার চেষ্টা করলাম।আশা করি,ভুল হলে সংশোধন করে সাধারণের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করবেন। ধন্যবাদ!