আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, ৪০ বছর আগে হলেও ৭১-এর মুক্তিযুদ্ধকালে যারা গণহত্যা, ধর্ষণ, দেশ ত্যাগে বাধ্য করা, যুদ্ধাপরাধ, শান্তির বিরুদ্ধে অপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদের বিচার অবশ্যই হবে। এ বিচারের ব্যাপারে কারো দ্বিধা-দ্বন্দ্ব ও সন্দেহ থাকা উচিত নয়। তদন্ত কাজ বিচারকাজেরই অংশ। বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সহসাই চার্জশিট দাখিল করা হবে। চার্জশিট দেয়ার পর তিন সপ্তাহের মধ্যে আনুষ্ঠানিক বিচার কাজ শুরু হবে।
আইনমন্ত্রী আজ ঢাকার ধানমন্ডির ডব্লিউভিএ মিলনায়তনে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবিরের গ্রন্থ প্রকাশ উপলক্ষে আয়োজিত ‘যুদ্ধাপরাধের বিচার : অতীতের অভিজ্ঞতা এবং বর্তমানের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় একথা বলেন।
একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি বিচারপতি মোঃ গোলাম রাব্বানীর সভাপতিত্বে সভায় অন্যান্যের মধ্যে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রধান আইনজীবী এডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ঢাকা সহায়ক মঞ্চের সদস্য বিচারপতি সৈয়দ আমীরুল ইসলাম, হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনরিটিজের সভাপতি অধ্যাপক অজয় রায়, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির এবং আইন সম্পাদক ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ বক্তৃতা করেন।
আইনমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। কাজেই এ বিষয়ে অন্য কোন রাষ্ট্র বা সংস্থার নাক গলানোর এখতিয়ার নেই। বিচার প্রক্রিয়ায় আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার কথা বলেছেন বিচার প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষক। তিনি তাদের পর্যবেক্ষক পাঠানোর আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ১৯৭৩ সালের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আইনটি যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানের। যুগোপযোগী ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন করতে আইনটির কিছু সংশোধন করা হয়েছে। বিদেশ থেকে যারা এসেছেন আইনটির মান নিয়ে তারা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। বিচার স্বচ্ছ ও খোলামেলা হবে। বিচারের স্বচ্ছতা নিয়ে কারো প্রশ্ন থাকা উচিত নয়।
আইনমন্ত্রী বলেন, কাউকে রাজনৈতিকভাবে হেনস্থার জন্য যুদ্ধাপরাধের বিচার করা হচ্ছে না। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালে যারা যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধ করেছে তাদেরকেই বিচারের আওতায় আনা হবে। অপরাধী কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য হলে বলা যাবে না যে রাজনৈতিক কারণে বিচার হচ্ছে। অপরাধ মার্জনার সংসকৃতি থেকে মুক্ত, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সুবিচার পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত এবং জাতির ৪০ বছরের ক্ষত নিরাময় করতে বিচার করা হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের লক্ষ্যে তদন্তকাজ অনেক দূর এগিয়েছে। বিচারকাজ সুষ্ঠু করতে তারা সতর্কতার সাথে তথ্য যাচাইয়ের কাজ করছে। বিচাকাজ সমৃদ্ধ করতে তথ্য-উপাত্ত দিয়ে সহযোগিতার জন্য তিনি গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান। বিচারকাজ অধিকতর গতিশীল করতে প্রয়োজনে তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবী প্যানেলের সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন।