জেলার নাম দিনাজপুর
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
দেশের উত্তরাঞ্চলের অন্যতম জেলা দিনাজপুর। এই জেলার উত্তরে ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা, দেিণ গাইবান্ধা ও জয়পুরহাট জেলা, পূর্বে নীলফামারী ও রংপুর জেলা এবং দণি পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য। এই জেলার ইতিহাস থেকে জানা যায়, প্রাচীণ পুণ্ড্রবর্ধন রাজ্যের অংশ ছিলো দিনাজপুর। দিনাজপুর নামের ছোট্ট একটি পাড়া থেকে গড়ে উঠেছে আজকের বিশাল দিনাজপুর জেলা।
আগে এই জেলার নাম ছিলো ঘোড়াঘাট জেলা। তবে দিনাজপুর জেলার নামকরণ নিয়েও আছে একাধিক বক্তব্য।
দিনাজপুর জেলা সৃষ্টি হয় ১৭৮৬ সালে। ১৭৯৩ সালে এই জেলায় বৃটিশ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। জেলার ১৩টি উপজেলা: দিনাজপুর সদর, বিরামপুর, বীরগঞ্জ, বিরল, বোচাগঞ্জ, চিরিরবন্দর, ফুলবাড়ী, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর, কাহারোল, খানসামা, নবাবগঞ্জ এবং পার্বতীপুর। ১৮৩৩ সাল থেকে ১৮৭০ সাল পর্যন্ত দিনাজপুরের বিভিন্ন অংশ পূর্ণিয়া, রংপুর ও রাজশাহীর অন্তর্ভূক্ত হয়। বৃটিশ আমলে গঠিত দিনাজপুর অঞ্চলের কিছু অংশ ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের অন্তর্ভূক্ত হয়ে এর নামকরণ করা হয় পশ্চিম দিনাজপুর। পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে এই জেলার দুটি মহকুমা ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় আলাদা জেলায় রূপ নেয়। পলি নির্ভর এলাকা হওয়ায় বিশেষ কিছু ফসলের নামেও প্রসিদ্ধ এই দিনাজপুর।
কথিত আছে, খৃষ্টীয় তের শতকে ইসলামের বাণী প্রচার করতে অন্তত চল্লিশ জনের একদল দরবেশ দিনাজপুরে আসেন। আগেই বিভিন্ন যুদ্ধে কৃতিত্বের জন্য গাজী স্বীকৃতি পাওয়া এই চল্লিশ দরবেশ এখানকার স্থানীয় এক হিন্দু রাজার সৈন্যদের সাথে সম্মুখ সমরে শহীদ হন। তাদের স্মরণে এখানে তৈরি করা হয়েছে চেহেলগাজীর মাজার। মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন হিসেবে এখানে আরো আছে গোরা শহীদের মাজার, আওকর মসজিদ, নয়াবাদ মসজিদ এবং প্রায় শত বছরের পুরোনো খাজা নাজিম উদ্দিন মুসলিম হলসহ বিভিন্ন স্থাপনা ও প্রতিষ্ঠান। দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ বৃটিশ শাসন বিরোধী ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের সাথে জড়িত ছিলো।
দিনাজপুরের নাম আসলেই আসে রামসাগর, কান্তজিউ মন্দির আর স্বপ্নপুরীর নাম। দিনাজপুর শহর থেকে কিলোমিটার দূরে অবস্থিত রামসাগর। সাগর না হয়েও এই দীঘির নাম রামসাগর। দৈর্ঘ্যে ১১৩৩ গজ এবং প্রস্থে ৪০০ গজ নিয়ে প্রায় দেড়শ একর জায়গা নিয়ে এই রামসাগর এলাকা। কথিত আছে, খৃষ্টীয় সতের শতকে এই এলাকায় সৃষ্টি হয় প্রচন্ড খরা। কৃষকদেরকে সেই খরা থেকে বাঁচাতে স্বপ্নাদেশ অনুসারে অনেক লোক নিয়োগ করে রাজা এই দীঘি খনন করেন। খনন করা দীঘির মাটি দিয়ে রামসাগরের চারপাশে তৈরি হয় এই পাহাড়।
দিনাজপুর জেলা শহর থেকে ২০ কিলেমিটার উত্তরে কাহারোল উপজেলার কান্তনগর এলাকায় অবস্থিত কান্তজিউ মন্দির। ঢেপা নদীর তীরে টেরাকাটা অলংকরনে ইন্দো-পারস্য ভাস্কর্য্যরে অপূর্ব অলংকরণ এই কান্তজিউ মন্দির। কালিয়াকন্দ জিউ বা শ্রী কৃষ্ণের বিগ্রহ অনুষ্ঠানের জন্য এই মন্দির নির্মিত হওয়ায় এর নাম কান্তজিউ মন্দির। মন্দিরের উচ্চতা ৭০ ফুট। বর্গাকারে নির্মিত মন্দিরের প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৫২ ফুট। মন্দিরের চারপাশেই আছে বারান্দা। মন্দিরের ভাঁজে ভাঁজে সুনিপুণভাবে গড়ে তোলা নকশায় একেকটি ইতিহাসকে চিত্রায়িত করা হয়েছে।
তিনতলা বিশিষ্ট মন্দিরের নয়টি চূড়া বা রতœ ছিলো। এজন্য একে নবরতœ মন্দিরও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু ১৮৯৭ সালে এক ভূমিকম্পে এ চূড়াগুলো ভেঙ্গে যায়। কান্তজিউ মন্দিরের পাশেই আছে একই সময়ে নির্মিত মুসলিম ঐতিহ্যের নিদর্শন নয়াবাগ মসজিদ। কিন্তু দুর্বল যাতায়াত ব্যবস্থার কারণে পর্যটকরা সেখানে যেতে আগ্রহ বোধ করেন না।
দিনাজপুর শহর থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে নবাবগঞ্জ উপজেলায় গড়ে তোলা হয়েছে স্বপ্নপুরী নামের অপূর্ব এক জগত। ১৯৮৯ সালে মোট ৪০০ বিঘা জমির উপর তৈরি করা হয় এই স্বপ্নপুরী। এখানে আছে মিনি চিড়িয়াখানা, কৃত্রিম চিড়িয়াখানাসহ চিত্ত বিনোদনের নানা সামগ্রি। সেই সাথে আপনি মুগ্ধ হবেন এখানাকার সাজানো গোছানো প্রকৃতি দেখে।
দিনাজপুর শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে নিরিবিলি এক গ্রাম্য পরিবেশে কালের সাী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দিনাজপুরের রাজবাড়ি। হিন্দু, মুসলিম ও ইংরেজ এই তিন যুগের স্থাপত্য বৈশিষ্ট্যের বিচিত্র সমাবেশ এই রাজবাড়ি। দিনাজপুরের এই রাজবাড়ি কোনো একক রাজার কীর্তি নয়, এখানকার রাজবংশের প্রতিষ্ঠাকাল থেকে মহারাজা জগদীশ নাথ রায় পর্যন্ত প্রায় চারশ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে গড়ে উঠেছিলো এই রাজবাড়ি।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর উপজেলা শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বিশাল এলাকা জুড়ে রয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি ও কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প। দিনাজপুরের প্রধান নদী: ঢেপা, পুনর্ভবা, কাঞ্চন যমুনা ও আত্রাই। দিনাজপুরের একমাত্র বিশ্বদ্যিালয় হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এছাড়া এখানে মেডিকেল কলেজ, পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট, আণবিক শক্তি কমিশন কেন্দ্র, হোমিও কলেজ, সরকারি ও বেসরকারি কলেজ এবং মাদরাসাসহ অসংখ্য শিা প্রতিষ্ঠান। দিনাজপুরের দৈনিক পত্রিকাগুলোর মধ্যে দৈনিক উত্তরা, প্রতিদিন, তিস্তা অন্যতম। আর সাপ্তাহিক দুটি পত্রিকা হচ্ছে, অতঃপর এবং আজকের বার্তা। দিনাজপুরে দেখার মতো আরো যেসব জায়গা রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হলো, সিংহদুয়ার প্রাসাদ, সীতার কুঠরী, হাবড়া জমিদার বাড়ি, গড় গোবিন্দ গুপ্ত যুগের তাম্রলিপি। অবসরে সুযোগ করে কাটারীভোগ চালের জেলা দিনাজপুরে ঘুরতে আসলে আপনার সময় ভালোই কাটবে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আলোচিত ব্লগ
বাংলাদেশের রাজনীতিতে জামায়াত: ব্ল্যাক হর্স নাকি তুরুপের তাস?
বর্তমানে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শাসনকাল ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধ থেকে মুক্তি, এনসিপির সঙ্গে গোপন সম্পর্ক ও সেনাবাহিনীর সঙ্গে বৈঠক—সব মিলিয়ে কী ইঙ্গিত দিচ্ছে?
বাংলাদেশের... ...বাকিটুকু পড়ুন
বড়শি
পুকুরে গোছল করা একদম নিষেধ ছিল আমার। কানের অসুখ,তাই গোছলের সময় তুলার ভেতর সামান্য নারিকেল তেল ভিজিয়ে নিয়ে দুই কানে সিপি দিয়ে গোছল করতে হতো। সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন
বাংলাদেশের পাঁঠারা দুধ দেবে, বীজ দেবে, গাভী-ছাগীদের চাকরি খাবে!
গাইবান্ধা, কুষ্টিয়া আর জয়পুরহাট - তিন জেলার তিন পাঁঠা মিলে বাংলাদেশের প্রাণিসম্পদ খাতে এক নতুন বিপ্লব সৃষ্টি করেছে। এই পাঁঠারা শুধু প্রজননেই সীমাবদ্ধ নেই, বরং এখন দুধ দিচ্ছে, এমনকি গাইবান্ধার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আপনাদের মতামত জানতে চাই।
প্রিয় ব্লগার,
আশা করি আপনারা ভালো আছেন।
বিগত এক দশকের বেশি সময় ধরে সামহোয়্যারইন ব্লগ শুধু একটি লেখার প্ল্যাটফর্ম নয়, এটি হয়ে উঠেছে এক ধরনের লেখালেখির মাধ্যমে সামাজিক সংলাপ তৈরির জায়গা—যেখানে গড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন
মহানবী (সা) - ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে শক্তিশালী পুরুষ
আমরা অনেকেই চিন্তা করি, মুসলমানদের মাঝে অনেক বীরের জন্ম হয়েছে। ইসলামের ১৪০০ বছরের ইতিহাসে এই বীরদের অনেক নাম শোনা যায়। কিন্তু, তাঁদের মাঝে সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যক্তিটি কে?
অনেকেই বলবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন
১. ২৮ শে জুন, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:৩৯ ০