জেলার নাম ঠাকুরগাঁও
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
হিমালয়ের কোল ঘেঁষে অবস্থিত দেশের সর্ব উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁও। জনশ্রুতি আছে, জেলার টাঙ্গন নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম রাজা গোবিন্দ নারায়ন ঠাকুর তার প্রথম আস্তানা গড়ে তোলেন ।ধর্ম চর্চার জন্য তিনি এখানে তৈরি করেন মন্দির ও বিভিন্ন ধর্মশালা। আর এ কারণেই পুরোহিত, সন্ন্যাসী, ও ঠাকুরদের পদভারে পূর্ণ হয়ে উঠে এ গ্রামটি। ক্রমেই এ গ্রামটি পরিচিতি লাভ করে ঠাকূরগ্রাম হিসাবে।
এছাড়া অন্য আরেক ইতিহাস থেকে জানা যায়, জেলাশহর থেকে আট কিলোমিটার দুরে অবস্থিত আচকা ইউনিয়ন । এ ইউনিয়নের একটি গ্রামে বাস করতেন নারায়ন ও সতিশ চক্রবর্তী নামের দুই জমিদার । তাদের বসতবাড়ী ঠাকুরবাড়ী নামে পরিচিত ছিল। ধারনা করা হয় ঠাকুরগ্রাম ও ঠাকুরবাড়ী এ দুটি নাম থেকেই ঠাকুরগাঁও নামের উৎপত্তি।
১৮ হাজার ৯ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের এ জেলার উত্তরে পঞ্চগড়, পূর্বে পঞ্চগড় ও দিনাজপুর জেলা, দনি ও পশ্চিমে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য অবস্থিত ।
প্রাচীন কালে এ জেলা ছিল পুন্ড্রবর্ধন জনপদের অংশ। এ জেলাতেই জোরদার ভাবে সংগঠিত হয়েছিল তেভাগা আন্দোলন। আন্দোলন নস্যাৎ করতে জেলা সদরের একটি বিশাল মিছিলে বৃটিশ সরকারে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ৩৫ জন আন্দোলনকারী। মুক্তিযুদ্ধে এ জেলার ভুল্লি, গরেয়া ও সালন্দরে পাক বাহিনীর সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়।
ঠাকুরগাঁয়ের ঐতিহ্য ও প্রাচীন নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম রাজা টংকনাথের বাস ভবন, জামালপুরের মসজিদ, গেবিন্দ জিউ মন্দির, হরিনমারির শিবমন্দির, নেকমরদ মাজার ও মসজিদ ।
শহর থেকে ছয় মাইল দূরে অবস্থিত শিবগঞ্জ হাট। এ হাট থেকেই দু’মাইল পশ্চিমে জামালপুর জমিদার বাড়ী জামে মসজিদ। প্রায় দের’শ বছরের পুরানো এ মসজিদটি বাংলাদেশের একটি ব্যতিক্রমী মসজিদ। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদ মুঘল আমলের স্থাপত্য রীতির চিহ্ন বহন করছে। মসজিদের দেয়াল গুলো চার ফুট চওরা। তিরিশটি ছোট ছোট মিনার যেন মসজিদটিকে দিয়েছে নজরকারা সৌন্দর্য্য। এ মসজিদের নির্মান কাজ শেষ হয় আঠার’শ সাতষট্টি সালে ।
টাঙ্গন নদীর তীরে অবস্থিত গোবিন্দজিউ মন্দির । রাজা গোবিন্দ নারায়ন ঠাকুর আনুমানিক ১৭০৭ সালে এ মন্দির নির্মান করেন । এখানে রয়েছে রাধা কৃষ্ণের স্বর্ন মুর্তি ।
ঠাকূরগাঁও এর প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে অন্যতম রাজা টংকনাথের বাসভবন। এটি রাণীশংকৈল জমিদার বাড়ী নামেও পরিচিত । বৃটিশ সরকারে কাছ থেকে রাজা উপাধী পান জমিদার টংকনাথ। তারপর থেকে এটি রাজবাড়ী নামে পরিচিত। রাণীশংকৈল থানার পূর্বপাশে কুলিক নদীর তীরে মালদুয়ারে রাজা টংকনাথের রাজবাড়ী। ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে নির্মিত হয় এ রাজবাড়ী । রাজবাড়ী নির্মানের কাজ শুরু করেন জমিদার বুদ্ধিনাথ চৌধুরি । আর শেষ করেন রাজা টংকনাথ চৌধুরি । বর্তমানে ধ্বংশের শেষপ্রান্তে কালের সাী হয়ে দাড়িয়ে আছে এ রাজবাড়ীটি। তিনতলা এ রাজবাড়ী এখন পুরোপুরি ঝুকিপূর্ণ। রনাবেন করার কেউ নেই । পশ্চিমে সিংহদরজা । দরজার চুড়ায় দিক নির্দেশক হিসাবে লোহার রডে এস.এন.ই.ডাঝ.ঘ.ঊ.ড চিহ্ন অঙ্কিত আছে । রাজ বাড়ীর উত্তর-পূর্ব কোনে কাছারীবাড়ী অবস্থিত । এখানে বসেই রাজা টংক নাথ তার রাজ কার্য পরিচালনা করতেন । পূর্বদিকে রয়েছে দুটি পুকুর ।
ঠাকুরগাঁও জেলার রয়েছে দেশের সব চাইতে বড় আম গাছ । বালিয়াডাঙ্গী থানার মন্ডমালা গ্রাম আম গাছটি অবস্থিত । গাছটির নাম সূর্যপুরী আমগাছ । অসংখ্য শাখাপ্রশাখা নিয়ে গঠিত আম গাছটি দুর থেকে দেখলে মনে হয় একটি আম বাগান । তিন একর জমি জুড়ে রয়েছে এ প্রকান্ড আমগাছটি। গাছটির বেড় ২০ বান । মন্ডুমালা গ্রামের সাইদুর রহমান গাছটির মালিক। গাছটিতে এখনো আমের প্রচুর ফলন হয় ।
ঠাকুরগাঁয়ের সুফি সাধকদের মধ্যে সৈয়দ নাসির উদ্দিন শাহ অন্যতম । বার শতকের শেষে অথবা তের শতকের শুরুতে তিনি এ অঞ্চলে আগমন করেন । বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচার করার পর তিনি স্থায়ী ভাবে খানকাহ স্থাপন ভবানন্দপুর গ্রামে । আর এখান থেকেই তিনি এ অঞ্চলে ইসলাম প্রচার করেন । তার সদ্বস^ভাব চারিত্রিক মাধুর্য এবং ধর্মপরায়নতায় মুগ্ধ মুরিদরা তাকে "নেকবাবা” বা ”নেকমরদ” বলে ডাকতেন । এরপর তারপ্রতি সম্মান প্রদর্শন করে এলাকার নাম করন করা হয় নেকমরদ। এখন এলাকাটি নেকমরদ নামেই পরিচিত। আর এখানেই রয়েছে পীর নেকমরদের মাজার শরিফ । পীর নেকমরদের প্রতিষ্ঠিত খানকাহতে প্রতিবছর উরস ও মেলা অনুষ্ঠিত হয় । আগে ্এ মেলা ১লা বৈশাখে শুরু হয়ে এক মাস ব্যাপি চলত । এখন তা শুরু রাসপূর্ণিমার দিন ।
বালিয়াডাঙ্গী থানা থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে রয়েছে প্রায় চারশ বছরের পুরানো শিব মন্দির । তিরিশ ফুট উচু মন্দিরটি মাটির নীচে বেশ খানিকটা বশে গেছে। দনি দিকে আছে দরজা । আর দরজার লতাপাতার নকশার সাথে ছিল বিভিন্ন দেবদেবির প্রতিকৃতি।
জেলা সদর থেকে ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত ঠাকুরগাঁও সুগার মিল। ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত এ মিলটি এ জেলার একমাত্র ভাড়ি শিল্প হিসেবে পরিচিত। এ মৌসুমে চিনির কলের ৫০ তম আখ মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতিবছর লোকসান হলেও চিনিকল কর্তৃপ আশা করছে এবার এ কলটি লাভের মুখ দেখবে। এ বছর চিনিকলটি নিজস^ উদ্যোগে তের হাজার একর জমিতে আখ চাষের জন্য কৃষকদের ঋণ প্রদান করেছে।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর


আলোচিত ব্লগ
জুলাই বিপ্লবের মাস্টার মাইন্ড এবং কেন্দ্রীয় সমন্বয়কগনের কিছু বক্তব্য!!!
আমরা সবাই জানি যে, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বাংলাদেশে এক রক্তক্ষয়ী বিপ্লবে স্বৈরাচারী আওয়ামিলীগের পতন ঘটে। কয়েক হাজার প্রানের বিনিময়ে বিপ্লবের সফল পরিসমাপ্তির পর বিপ্লবের প্রতিশ্রুতি রক্ষার দ্বায়িত্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন
শিবির সন্ত্রাসীর নারীকে লাথি মারা কিভাবে দেখছেন?
৩৬ জুলাই অভিশপ্ত ছাত্রলীগের পতনের পর আমরা পুরা দেশ জুড়ে বিজয় উল্লাস শুরু হয়। হাসিনা সাম্রাজ্যের পতনের পায় দেশের মানুষ ২য় বার স্বাধীনতার সাধ উপভোগ করে। শুকরান নামাজ পর্যন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন
প্রিয় কন্যা আমার- ৭৬
ফারাজা তাবাসসুম খান,
প্রিয় কন্যা আমার। কলিজা আমার। তুমি গভীর ঘুমে ছিলে, তাই তোমাকে জাগাইনি। তবে আলতো করে তোমার কপালে একটা চুমু খেয়েছি। তোমার পাশে তোমার মা শুয়েছিলো, সে-ও তোমার... ...বাকিটুকু পড়ুন
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ইসলামী ছাত্রী সংস্থা
ইসলামী ছাত্রী সংস্থার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার নেতারা প্রকাশ্যে এসেছেন। নারী শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের কয়েকটি দাবি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার মাধ্যমে প্রকাশ্যে... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমার ১৮ নম্বর বাসা পর্ব: ৭ (ভূতুরে ঘটনা)
২০১৪ সালের ২৪ তারিখ আমার মেয়ে জন্ম নেয়। ওর জন্মে সময় আমার মা বাবা ছিল। তারা চলে যাবার দিনে শাশুড়ি, শালা আর এক শালি আমার বাসায় আসে। সবকিছু ঠিক ঠাক... ...বাকিটুকু পড়ুন