কি বলব? বাংলাদেশে ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে সাহসের দরকার আছে বৈকি। কিন্তু ইদানিংকালে, ধর্মান্ধদের লাফালাফি দেখে এবং অনেকের সুচিন্তিত লেখায় অনেক মাইনাস দেখে আমার ভীরু মনে সহসের উদ্রেক হতে সময় লাগল না।
আমি ভাগ্যবান, এইজন্য যে, আমার শিক্ষাজীবনে আমাকে মাদ্রাসা, মন্দির, চার্চ অথবা প্যাগোডায় যেতে হয়নি। গেলে হইতো, আমিও ধর্মান্ধ হয়ে যেতাম। যাহোক, তারপরও ধর্ম নিয়ে লেখাপড়া করেছি মোটামুটি। যা পড়েছি, জ্ঞান অর্জন করেছি তাতে বুঝেছি, ধর্ম খারাপ নয়, মানুষেরা খারাপ। আরও বুঝেছি, কোন ধর্মই আর ১০০ ভাগ খাঁটি নেই। সব ধর্ম কতিপয় মানুষের হাতে “manipulate” (বাংলা শব্দটি মাথায় আসছে না) হয়েছে। তাই শেষ-অব্দি কোন ধর্মই আমার দ্বারা পালনযোগ্য মনে হলনা।
# প্রিয় পাঠক, আমাকে বলতে পারবেন, কেন আমাকে আল্লাহ্র ভয়ে ভীত হতে হবে? আল্লাহ্ যদি পিতৃসম হন তবে ভয়ের কি আছে? আমিতো আমার বাবাকে ভয় করিনা, করার প্রয়োজনও বোধ করিনা বরং শ্রদ্ধা করি। তবে, লোকজন আমাকে কেন বলে, আল্লাহ্কে ভয় কর।
# ছোটবেলা থেকে জানি, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’ (অনেকের কষ্ট হলে ‘গুনাহ্’ মনে করে নিবেন)। তারপর যখন স্কুলে ধর্মের শিক্ষক বললেন, ধর্ম মেনে চল, তাহলে বেহেশতে যেতে পারবে। বেহেশতে সুন্দরী হুরপরী আছে, বেহেশতে সবকিছু আছে। হুরপরীরা অতীব রূপবতী, তাদের এক লোম দুনিয়ায় আনলে, সারা দুনিয়া আলোকিত হয়ে যাবে। সেই শুনে, আমার অনেক সহপাঠী নিয়মিত নামাজ-কালাম পড়া শুরু করলো। আর আমি ছোটবেলার কথাটি modify করে নিলাম, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। কিন্তু ধর্মের ক্ষেত্রে লোভ করলে, বেহেশত লাভ’। শুধু ইসলাম নয়, সব ধর্মে এই বেহেশত-স্বর্গ-নির্বাণ এর লোভ দেখান হয়েছে।
# কেন জানিনা, ধর্মীয় ব্যক্তিদের যৌনইচ্ছাটা একটু বেশী। কিশোরদের প্রতি যেন তাদের বিশেষ দুর্বলতা। (এটি শুধুই কৌতুহল, আলোচনার অংশ হিসেবে নিবেন না) । হয়ত নিশিদ্ধের প্রতি স্বাভাবিক আকর্ষন থেকেই তাদের এই আকর্ষন।
# ‘নিশিদ্ধ’ শব্দের সাথে কেন জানি মেয়েদের এক নীবিড় সম্পর্ক আছে। এক বিবি হাওয়ার সাথে সাথে জন্মাবার আগেই সব মেয়ে নিশিদ্ধের প্রতিরূপ হয়ে যায়। তাদের জন্য এটা নিশিদ্ধ, ওটা নিশিদ্ধ। এমনকি অনেককে বলতে শুনেছি, বিবি হাওয়ার কৃতকর্মের জন্য মেয়েদের প্রতিমাসে নাকি কষ্ট পেতে হয়। এই দুনিয়ায় সবকিছু যদি আল্লাহ্র ইচ্ছায় হয়, তবে একটি মেয়েকে কেন মেয়ে হিসেবে জন্ম নিতে হবে । সে কোন অপরাধে অপরাধী যে মেয়ে হিসেবে জন্ম নিয়ে তাকে তার সাজা ভোগ করতে হবে?
# আমার বাবা মার কাছে তাদের ছেলেমেয়েরা শুধু সন্তান নামে পরিচিত। মানুষ হয়ে তারা সন্তানের মাঝে ছেলেমেয়ে এমন কোন ভাগাভাগি করেন না। তবে ধর্ম কেন ছেলে মেয়ে ভাগ করে। ছোটবেলায় ধর্মশিক্ষক ছেলেদের বহুবিবাহের ব্যাখা দিয়েছিলেন এভাবে, ছেলেদের দ্বারা মেয়েদের গর্ভে সন্তান হয়। সন্তান বড় হয় বাবার পরিচয়ে। মেয়ে যদি বহুবিবাহ করে তাহলে কার দ্বারা গর্ভে সন্তান এলো তার পরিচয় থাকবে না। তাই ছেলেরা বহুবিবাহ করতে পারে কিন্তু মেয়েরা পারেনা। ছোট ছিলাম বলে সেদিন ধর্মশিক্ষককে জিজ্ঞেস করতে পারিনি, যে মা আমাকে কষ্ট করে পেটে ধরে, সারাজীবন কোলে পিঠে করে মানুষ করেছেন, তার পরিচয়ে বড় হতে দোষটা কোথায়। আমি খুশীমনে, মায়ের পরিচয়ে বড় হতে রাজী আছি। পাঠক, প্রশ্নটা আপনাদের কাছে রাখলাম।
# ‘খোদা বলেছেন, দুনিয়ার সকল সৃষ্টি মানুষের জন্য। আবার এই মানুষ খোদার প্রিয় এবং শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি’। কি আমার সাথে একমত? যদি তাই হন, তাহলে কি খেয়াল করেছেন আমি একবারও বলিনি মুসলমানেরা, বলেছি মানুষেরা। বিধর্মীরাওতো মানুষ, তবে তারা কেন বেহেশতে যেতে পারবেনা? আর যে মুসলমান নয়, সে কি কারনে এমন দুর্ভাগা যে সে মুসলমান হয়ে জন্মালো না আর আপনি কি কারনে সৌভাগ্যবান যে মুসলমান হয়ে জন্মালেন। অথবা বলতে হয়, কি কারনে তাকে বেশী পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে ( যেহেতু তাকে তার জন্মসূত্রে পাওয়া ধর্ম পরিত্যাগ করতে হবে তাই পরীক্ষা বৈকি), আর আপনাকে হতে হবেনা? কেন সবাই মুসলমান হয়ে জন্মায়না, তাহলে সবার একটা সমান সুযোগ থাকতো। (একবার নিজেকে অন্যদের জায়গায় চিন্তা করে দেখুন। যে ধর্মকে আপনি ছোটবেলা থেকে সত্যি বলে জেনে আসেছেন তা ত্যাগ করা কি এতো সহজ? আপনাকে বললে আপনি করতে পারবেন?)
# আমরা বাচ্চাদের কোন প্রাণী মারতে দেখলে বারণ করি। কারণ সুশীল মানুষের কাছে প্রাণীহত্যা-অত্যাচার-ধ্বংস ভালো নয়। আমাদের সন্তানদের ভালোভালে মানুষ করার জন্য তাদের এই শিক্ষা দিই, প্রাণীহত্যা বা অত্যাচার করোনা। কাওকে আঘাত করোনা। অথচ পৃথিবী নাকি একদিন ধ্বংস হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে, কারন সেদিন আর কোন মুসলমান থাকবে না। খোদা কি তাহলে এতোই নিষ্ঠুর যে তার ইবাদত্ করার কেউ নেই বলে তার সৃষ্টি করা দুনিয়া ধ্বংস করে ফেলবেন। তারি দ্বারা সৃষ্ট মানুষদের কথা একবারও ভাববেন না! তাহলে কি দুনিয়া সৃষ্টি তার কাছে খেলা ছাড়া কিছুই নয়? যেখানে মানুষের জন্য তা জীবন মরণের প্রশ্ন! মাঝে মাঝে এই প্রশ্ন আমাকে ছোটবেলায় পড়া ব্যঙ এবং বাচ্চাদের গল্পটি মনে করে দেয়। যেখানে কিছু ছেলে খেলাচ্ছলে পুকুরের ব্যঙদের প্রতি পাথর ছুড়ে মারে। ফলে অনেক ব্যঙ মারা যায়। পরে এক ব্যঙ ছেলেদের বলে, “তোমাদের জন্য যা খেলা আমাদের জন্য তা মৃত্যুর কারণ”।
বাংলা টাইপ করতে সময় লাগে বলে আজ আর লিখতে পারলাম না। আজ ইসলাম নিয়ে আলোচনা হল, এরপর একে একে বাকী ধর্ম নিয়ে আলোচনা করার অভিপ্রায় আছে।
(চলবে)