আগেই বুঝেছিলাম কেমন হবে পিকনিক। পিকনিকের নামে সকলকে হয়রানি করার যে ষড়যন্ত্র চলছিলো তা আগে থেকেই আন্তাজ করতে পারছিলাম। তাই চেনা পরিচিত-অপরিচিতজনদের খুব করে সাবধান করছিলাম। ঠিক যা ভেবেছিলাম তেমনটিই হয়েছে। আমি এবং আমার সমমনা ব্লগাররা কখনোই চাইনি এমন একটি বাজে পিকনিক হোক। এমন অসফল পিকনিক হওয়ার চাইতে না হওয়াটাই সকলের জন্য আনন্দের হতে পারতো।
আমরা হাতে হাত পায়ে পা রেখে শপথ করেছিলাম, কিছুতেই এই পিকনিক হতে দেয়া যাবে না, তাই বানিয়ে বানিয়ে মিথ্যে বানোয়াট ক্যাচাল পোষ্টগুলো একের পর এক দিয়েছিলাম। কিন্তু কাজ হয়নি তাতে এতটুকু, বদ পোলাপানের দল পিকনিক করেই ছাড়লো। সবগুলোকে দিক্কার।
(উপরের কথাগুলো তাদের, যারা অমূলক ক্যাচাল পোষ্টগুলো দিয়েছিলেন পিকনিকটা বাতিল করা হোক, এই উদ্দেশ্যে) প্রাণঢালা আফসোস তাদের জন্যে (কাঁটা ঘায়ে নুনের ছিঁটা, দিতে লাগে বড় মিঠা)
খি খি খি, পিকনিক ২০১২ - পুরাই সফল
প্রাককথন :-<
সকাল ৮.৩০ এ বাস ছাড়বে, ডেমরা থেকে পৌছোতে কমপক্ষে ১.৩০ ঘন্টা লাগবে, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম ঠিক ৭ টায় বের হবো, ঘুম থেকে উঠবো ঠিক ৬টায়। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আগের দিন অনেক কষ্টে রাত ১ টার মধ্যেই ঘুমোতে গেলাম। কিন্তু হায় হায় ঘুম আর আসে না! যতই চেষ্টা করি ঘুম এর দেখা নাই, মাথায় ঘুরতেছে এক চিন্তা সকাল ৬ টার মধ্যে উঠতে হবে। যাই হোক অবশেষে ঘুম এলো, কিন্তু হায় হায় এ আমি কোথায়? স্বপ্নে দেখি পিকনিক করতে বরিশাল যাচ্ছি সবাই, তাও আবার নৌকায়, পদ্মার জলে নৌকা ভাসে, তার উপর ব্লগাররা হাসে, সাথে হাসে ঢেউ, হায়রে ঢেউ, মনে হয় সাগরে এসে পড়লাম। হঠাৎ মিউজিক এর ছন্দ, ছন্দে ছন্দে নৌকা দুলতেছে, দুলতে দুলতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেল, দেখি ফোন আসছে, রিসিভ করলাম, উঠছিস? হুমম, উঠছি। (আগের দিন অনেককেই বলে রাখছিলাম সকালে জাগায়া দিতে, তাদের মধ্যে একজন, আমার প্রিয় একজন) ঘুম ভাঙলো ঠিকই, কিন্তু ঘুম আমায় ছাড়ে না, আর একটু ঘুমাই, এখনো দেড়ি আছে করতে করতে পোনে সাতটায় উঠলাম, উঠে রেডি হয়ে রওয়ানা দিলাম। (৮.০০ টায় এ মির্জা ভাই ফোন দিছে আমাকে ঘুম থেকে জাগানোর জন্য)(ইচ্ছাকৃত)
মূলবক্তব্য
অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে অবশেষে পিকনিক বাস স্পটে পৌছলাম, প্রথমেই জিসান মামার সাথে মোলাকাত, সাথে ছিলেন মোজাম ভাই, ছোট্ট ফটোসেশন শেষ করে বাসে চড়ে একটি মোলায়েম কেদারা নিজের দখলে নিয়ে নিলাম, অবশ্য এরই মধ্যে উপস্থিত ব্লগারদের সাথে হ্যান্ডশেক পর্ব সেড়ে নিলাম। বাস ছাড়লো। গন্তব্য: ভাওয়াল জাতীয় উদ্যান। যেতে যেতে অনেক মজা হলো, খুনসুটি চললো, গান হলো, শাহেদ ভাইয়ের গিটার আর নষ্টকবির হারমোনিকার সুরের মূর্ছনায় ড্রাইভার বেচারা দুলতে দুলতে গাড়ি চালাচ্ছিল আর এদিক সেদিক ছুটছিলো। গন্তব্যস্থলে পৌছবার আগ পর্যন্ত নিশাচর ভবঘুরে ভাইকে সার্বক্ষণিক নজরদাড়িতে রাখা হয়েছিল, যার ফলে ওনার অনেক সফল উদ্দেশ্যই বিফলে পরিণত হয়েছে। ছোটমির্জা ভাই আশকারি বেচারাকে একটা আস্ত কমলার লোভ দেখিয়ে পুরো বাসের ভাড়া কাটায় (সূক্ষ কারচুপির ঘ্রাণ তখনই পাচ্ছিলাম) অন্যদিকে শিপু ভাই, শিপু ভাবী আর একমাত্র শিপু পোলাকে সামনের একটি কেদারায় বসিয়ে রেখে পিছনে গিয়ে অতীত স্মৃতি রোমন্থন করছিলেন আর দুঃখের গান চিৎকার করে করে গাচ্ছিলেন, কিন্তু হায়! কে জানতো মাহীর মনের দুরভিসন্ধি, সেই গানের সুর শিপু ভাবী পর্যন্ত পৌছায়া দিয়া একটা বিস্কুটের পেকেট নিয়া মাহী কেটে পড়লো, অপরদিকে অনেক কষ্টে নিশাচর ভবঘুরে ভাইকে বাসের চাকার ঠিক উপরে অবস্থিত একটি সংরক্ষিত কেদারায় বসিয়ে আমার পাশের গুরুত্বপূর্ণ কেদারাটিতে নিরাপদ জাহিদ ভাইকে বসিয়ে দিলাম। কিন্তু নিশাচর ভবঘুরে পিছনে ধূসরধ্রুব ও নোমান নমি ভাইকে নিয়ে প্রকাশ্যে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিয়েল রিফাত ভাই যে আসলেই রিয়েল তার কিছু প্রমান নেয়ার চেষ্টা করলাম এবং সফল হলাম। অন্যদিকে নীরব দর্শক ভাই পাশের গাড়ি থেকে পিকনিক বাসের দিকে তাকিয়ে ছিলেন এবং নীরবে কাঁদছিলেন। এদিকে সুমন পিছন থেকে কিছু গোপন তথ্য প্রকাশ করছিলো, আর পুশকিন ভাই দূর থেকে গভীর মনোযোগ সহকারে সুমনের পেছনে কে কে থাকতে পারে তা ভাবছিলেন। অন্যদিকে স্বর্ণমৃগ ভাই কাউবয় এর দুর্দান্ত গেটআপ নিয়ে পিছনে ভাব ধরে বসেছিলেন, পরে জানা যায় ওনার একমাত্র ঘোড়াটি বাসে উঠতে রাজি হয়নি বিধায় ওনার মন খানিকটা বিষণ্ণ ছিল। ফারজুল আরেফীন ভাই পেছনে বসে দুরভিসন্ধীতে লিপ্ত ছিলেন এমন সময় হঠাৎ বাসের ছাদে লুকিয়ে থাকা গুরুজী নেমে এলো এবং চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়ে সবাইকে চমকে দিলো। এদিকে ভাড়া কাটার এক পর্যায়ে পরিবহন মালিক সমিতির লোকজনদের সাথে একমাত্র বাস কন্ডাকটর মির্জা ভাইয়ের ভাড়া কাটা নিয়ে ব্যাপক গলযোগের সৃষ্টি হয় এবং মালিক সমিতির সবাই (আমিসহ) মির্জা ভাইয়ের চাকরি খেয়ে ফেলার হুমকি দিলাম, এর পর থেকে মির্জা ভাইয়ের গলা নমনীয় পর্যায়ে চলে এলো এবং কারচুপি কিছুটা কমে এলো। এভাবে অনেক কারচুপিমূলক ষড়যন্ত্রের জাল ছিড়ে অবশেষে গন্তব্যস্থলে পৌছলাম। (পথিমধ্যে ব্লগারকুল প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিয়ে কিছুক্ষণ বিরতিও নিয়েছিল, তবে তা খুবই সামান্য সময়ের জন্য)
গন্তব্যস্থলে পৌছে প্রথমেই হলো পরিচিতিপর্ব। পরিচিতিপর্ব শেষে শুরু হলো এদিক সেদিক ছুটোছুটি, ফডুতুলকেরা তাদের ক্যামেরায় বন্দী করে চললেন স্মৃতিবিজড়িত সব দৃশ্য। তারপর শুরু হলো ঐতিহাসিক ক্রিকেট ম্যাচ। খেলোয়াড় বাছাই পর্বে একে একে সবাই নাম দিতে লাগলেন। চারটা দল হয়ে গেলো, কিন্তু শেষের দলে একজন কম, আরেকজন খোঁজা হচ্ছে এমন সময় সাহস করে নিজের নামটা টুকে দিলাম। আমপায়ারদের চূড়ান্ত কারচূপি সত্ত্বেও প্রাণবন্ত খেলা হলো। কারচূপির তিন খলনায়ক: নিমচাঁদ ভাই, জাহিদ ভাই এবং ছোটমির্জা ভাই আমপায়ারিং এর ইতিহাসকে কালো অন্ধকারে ঢেকে দিলেন সেদিন সেই ঝকঝকে দুপুরে। নিমচাঁদ ভাই ছিলেন নাটের গুরু, উনিই কারচূপির বীজ রোপন করে গিয়েছিলেন আর তাতে পর্যাপ্ত সার ও পানি দিয়েছিলেন জাহিদ ভাই ও ছোটমির্জা ভাই আর তার চূড়ান্ত ফলগাছ হিসেবে শেষের দিকে আবির্ভাব নিয়েছিলেন নিশাচর ভবঘুরে। এই নিশাচর ভবঘুরের দূর্দান্ত ও প্রকাশ্য কারচূপির ফলে সবচাইতে সফল দলটি ফাইনালে উঠেও ফাইনাল খেলতে পারেন নি, এ এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য। অথৈ সাগর ভাই আমার দলে আছেন, এইটা আমি জানতাম না, আজকেই জানলাম (প্রতিপক্ষ দলগুলো এবং আমপায়ারদের কারুচূপির বিরুদ্ধে যুদ্ধ নিয়ে এতো বেশি ব্যস্ত ছিলাম যে নিজের দলের খেলোয়ারদের নামগুলোই জানা হলো না সবার, আফসুস) যাই হোক, সকল দলের সাথেই পর্যাপ্ত ভাব ভালোবাসা থাকায় এবং পেছন থেকে সকল দলকে অপরিসীম সাপোর্ট দেয়ায় সেরা সাপোর্টারের পুরষ্কারও দেয়া হয় একজনকে।
ক্রিকেট খেলার পরপরই ভোজনপর্ব শুরু হলো। তবে ভোজনপর্বের জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় কাতর ব্লগারকুল পানকৌড়ির নেতৃত্বে সাময়িক বিক্ষোভ মিছিল করলেও পরবর্তীতে কাচ্চি খেয়ে সবাই সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। কিন্তু কাচ্চিতে ডিম থাকায় ব্যাপক সমালোচনার স্বীকার হোন ভোজন উপদেষ্টা শিপু ভাই। বাজারে ডিম এর এহেন খরা চলাকালে কাচ্চিতে ইহা পরিবেশন মোটেও উচিত হয়নি। ভোজনপর্ব শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শুরু হলো নারী ব্লগারদের পিলো খেলা। উক্ত খেলায় বিজয়ী হোন আমাদের জাহিদ ভাবী আর রানার্স আপ হোন নীল পরী আন্টি। অন্তরা মিতু আন্টিও ভালো পারফর্মেন্স করেন। পিলো খেলার শুরুতেই বাদ পরেন খেলতে না চাওয়া অপরিনীতা আন্টি।
এরপর বিশিষ্ট রাজাকার গোআ'র গ্রেফতারের খুশিতে মিষ্টি বিতরণ অনুষ্ঠাণে সকলের মধ্যে একটা অন্যরকম আনন্দ লক্ষ্য করা যায়।
নীল পরী আন্টি ভালো কফি রাঁধতে পারেন, এবং এর প্রমান ওনি আবারও রাখলেন এতজন ব্লগারের জন্য কফি রান্না করে। ইতিমধ্যে কফি হেলপার পানকৌড়ি ভাই আহত অবস্থায় ধরা পরেন, কি কারণে উনি আহত হলেন তার কারণ আজও অজানাই রয়ে গেল।
কফি অনুষ্ঠান শেষে শুরু হলো রেফেল ড্র, রেফেল ড্রর পুরষ্কার তুলে দিলেন আশকারীর আব্বা। রেফেল ড্র'র ছয়টি পুরষ্কারের মধ্যে চারটিই একই পরিবারের মধ্যে কিভাবে যায় ইহা নিয়া জাতির মনে প্রবল সংশয় সৃষ্টি হলেও পরবর্তীতে ইহা জাতীয় স্বার্থে চেপে যাওয়া হয়।
অহ বলা হয় নাই, এর মধ্যে সুমন আমাকে একাকী ডেকে নিয়া যায় ফডু তুলিবে বলিয়া, পরবর্তীতে সুমনের আসল দুরভীসন্ধী বুঝিতে পারিয়ে আমি উক্ত স্থান হইতে পালাইয়্যা আসি। (অন্য কিছু ভাইব্বেন না)
আরও একটি সুসংবাদ: সকলের সম্মতিতে আশকারির আব্বাকে আমরা ভাই ডেকে আশকারিকে আদরের ভাতিজা বানালাম।
উপসংহার
অবশেষে ফেরার পালা। ফেরার পথে জাতি নানাবিধ দৃশ্য দেখিতে দেখিতে বন হইতে বাইর হইলো এবং যে পথ যাইবার সময় দেড় ঘন্টায় অতিক্রম করিয়াছিল উহা চার ঘন্টা লাগিয়া গেল, কিন্তু উহাতে জাতি বিন্দুমাত্র বিরক্ত না হইয়্যা বরং সময়টা চমৎকারভাবে কাটাইয়্যা দিলো। উক্ত চার ঘন্টায় বহুবিদ ঘটনা ঘটিয়া গেল যাহার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু ব্যাপার না বলিলেই নয়:
১. প্রচন্ড শীতের মধ্যেও ছোটমির্জা ভাইয়ের হাফ হাতা টি-শার্ট পড়িবার রহস্য উন্মোচন। পেছনে ১৮+ আসরে যারা ছিলেন তারাই শুধু জানেন।
২. মাহী বড় হয়েছে এবং অনেক কিছু বুঝতে শিখেছে।
৩. সুমনের দুর্বার সাহসিকতার পরিচয়। নিশাচর ভবঘুরে ভাই সুমনকে "আপনি কোথাও ঠেকিবেন না" বলিয়া তীব্র সমর্থন।
৪. মোজাম ভাইয়ের বয়সও যে ১৮'র বেশি তা মোজাম ভাইয়ের নিজ মুখে স্বীকারোক্তি।
৫. আশকারিকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বার বার সামনে পাঠানো হলেও কি এক দুর্বার আকর্ষণে বেচারা বার বার পিছনে ছুটে এসেছে। (ওর আব্বুর অগোচরে)
৬. আনারস হইতে কাঠাল অনেক বেশি ভয়ংকর, উহা শিপু ভাইয়ের পার্টিগনিত অঙ্কের মাধ্যমে প্রমান।
৭. স্বর্ণমৃগ ভাই মাথার হেট দিয়া এত কিছু চেপে রেখেছেন, তা বুঝবার সাধ্য কারও ছিলো না, আমরা কয়েকজন ছাড়া।
৮. ইকরাম উল্যাহ ভাইয়ের সাথে পরবর্তী আড্ডায় গভীরভাবে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ। (এই ইচ্ছাটা কিছুক্ষণ আগের)
এছাড়াও বিশিষ্ট মলম বিক্রেতা পানকৌড়ি ভাই মলমের পরিবর্তে সম্পূর্ণ নতুন একটি নকল পণ্য বিক্রয়ের আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছিলেন এবং শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পানকৌড়ি ভাইয়ের বিশ্বাসযোগ্য লেকচারের ফলে উক্ত নকল পণ্য ক্রয়ের জন্য ব্লগারকুলের মধ্যে হিড়িক পড়ে যায়।
..... আড্ডায় আড্ডায় সময় কিভাবে ফুরিয়ে এলো বুঝতেও পারিনি। সকলে আস্তে আস্তে বাস থেকে নামতে লাগলেন। বাস শাহবাগে পৌছল। সবাই বিদায় নিয়ে চলে গেলাম যে যার পথে.. সমাপ্তি হলো আরও একটি স্মৃতিময়ী দিনের।
হেলাল মামাকে মিস করেছি অনেক বেশি। মামীর জন্য শুভকামনা আর দোয়া।
নিমচাঁদ ভাইয়ের ছেলের জন্যও অনেক অনেক শুভকামনা আর দোয়া।
আরও দুইজনকে মিস করেছি খুব: রাষ্ট্রপ্রধান আর জামাই (বাল্যবন্ধু)
রাষ্ট্ররে পাইলেই কিলামু।
পোষ্ট উৎসর্গঃ জিসান মামা।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ১২:২৯