কুঁজো পাহাড়টির দুঃখের গল্প শুনতে শুনতে কখন যে দু'চোখ ভিজে এল বুঝতেও পারিনি। কষ্টের পাথর বুকে চেপে চেপে অদৃশ্য চোখে চেয়ে থাকা নীল আকাশটা ক'ফোঁটা জলে সমবেদনার স্নিগ্ধ ঝাপটায় বুলিয়ে দিয়ে গেল কিছুক্ষণ।
আজ বহুদিন হয় দেখিনা তোমার ভালোবাসাপূর্ণ মায়াবী মুখ। না দেখতে পাওয়া সেই মুখচ্ছবির বিরহে নিভৃতে কান্নায় ভাসে মন জানালার লোহার গ্রীলগুলো। সেই কান্নার চাপা শব্দ কেও শুনতে পায় না, অনেক সময় আমিও পাই না। তবে টের পাই, ভিতরে কিছু একটা হচ্ছে।
চাঁদ হারা আকাশেতে তাকায়ে আমি
খুঁজে খুঁজে ফিরি ফিরি আঁধার চুমি
হৃদয়েরও বাঁকে বাঁকে আসে জোনাকী
মিটিমিটি জ্বলে নিভে সবই যে ফাঁকি
নিভু নিভু জোনাকী হেসে হেসে কয়
তোমার জীবন যেন সুখে ভেসে রয়
জীবনেরও জীবনের খোঁজ মেলে যদি
পাড়ি দিয়ে পার হবো জীবনের নদী
আমাদের প্রেম ছিলো নিশুতি রাতের মতন আঁধারে ঢাকা অতল কালো জলের রঙে রাঙা। অপ্রকাশিত সেই অতল প্রেমের তলানি খুঁজতে খুঁজতে কি করে যে সময় শেষ হয়ে এলো, তার খোঁজ আজও মিলল না।
বিরহের বঞ্চনাটুকুকে শেষ সম্বল ভেবে ভেবে আর কত কাল কাটাতে হবে জানিনা, তবে এটুকু বুঝে গেছি যে.. এ জীবনে তোমাকে পাওয়ার যে অলীক স্বপ্নে বিভোর ছিলাম এতকাল, পাবো না জেনেও.. সেই স্বপ্নের ভরাডুবির স্বপ্ন নিয়ে বাঁচতে হবে আরও কিছুকাল, অযথা পৃথিবীর সময় নষ্ট করে করে।
প্রেমশূণ্য পৃথিবীর বুক আজ নিকষ দুঃখের গুড়ি গুড়ি দানায় ভরপুর। ভালোবাসাহীন আকাশের বুকে খা খা রদ্দুরের ছটায় ফুটে ওঠা মেঘেদের চাপা চাপা বেদনার নিঃশব্দ চিৎকারের ফুলকিতে ভেসে বেড়ায় অসহায় স্মৃতিস্তুপের ছায়ারা। শুভ সময়ের মৃত্যুতে চারিদিকের সমস্ত আলো গোগ্রাসে খাবার হয়ে যায় দুর্বল আঁধারের। রঙিন প্রজাপতি আর ফুল-পাখিরা চমৎকার ভঙ্গিমায় নিজস্ব একটা স্থান করে নেয় মাটির চিত্রকল্পের বুক জুড়ে। জীবনের সমস্ত শব্দ-সুর-সঙ্গীত শোভা পায় কিচির-মিচির অদ্ভুত বর্ণমালার গলায় গলায়। আস্তে আস্তে পৃথিবী থেকে উঠে যেতে থাকে বেঁচে থাকার শেষ শর্তমালার শব্দগুলো।
জীবন সূর্যের বিদায়ে বহুদিন হলো দিনের আলোয় দেখা হয় না পৃথিবী। নীল উজ্জ্বল আকাশ এখন আর ডাকে না আমায়। রাত্রির স্থায়ী বন্ধু হয়ে অন্ধকারের কোলে মাথা রেখেই সময় কাঁটে আমার। ভালোই আছি আমি। চিন্তা নেই ভাবনা নেই, নেই জীবন যাপনের দৈনন্দিন বোঝাপড়া। জীবনের রাক্ষসী নদী এখন আর নাগাল পায় না আমার। এখন আমি সকল দুঃখ, কষ্ট আর ব্যথার সাম্রাজ্যের অনেক দূরে। নিঃস্বার্থ স্মৃতি এখন আর কাঁদাতে পারে না আমায়। কবরের শান্ত-স্নিগ্ধ-হিম আলোয় বড় ভালো আছি এখন।