একজন মানুষ মহৎ হয়ে উঠেন তাঁর কর্মগুণে। পৃথিবীতে এমন অনেক মানুষ আছেন, যাঁরা তাঁদের কর্ম, ধ্যান-জ্ঞান, অর্জন সবকিছু উৎসর্গ করেন দেশের স্বার্থে ,মানুষের কল্যাণে। নিঃস্বার্থভাবে করেন মানুষের উপকার, দেশের কল্যাণ । তাঁরা কর্তব্য কাজে ফাঁকি না দিয়ে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন।এমনই একজন হলেন দেশশ্রেষ্ঠ উপজেলা প্রশাসক ,সরাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা নাহিদা হাবিবা।
অদৈত মল্লবর্মণের জন্মভিটা ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষার হালটা যখন তেলহীন প্রদীপের মতো নিবুনিবু অবস্থা, তখন আলোকবর্তিকা হয়ে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দায়িত্ব নিয়ে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর সরাইলে যোগদান করেন সৈয়দা নাহিদা হাবিবা।
এই কর্মবীর শৈল্পিক মানুষটি সরাইলে যোগদান করেই , শিক্ষার এই কংকালসার ও নিবুনিবু অবস্থা দূর করার জন্য এবং শিক্ষাকে সর্বজনীন, গুণগত ও মানসম্পন্ন করার উদ্দেশ্যে প্রাথমিক শিক্ষার উপর কাজ শুরু করেন।কারণ তিনি বিশ্বাস করেন-প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকেই শিশুর মেধা বিকাশের বুনিয়াদ গঠন হয়। তাই রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে কখনো বাঁশের সাঁকো বেয়ে ,কখনো ক্ষেতের আলপথ দিয়ে হেটে,কখনো ই্ণ্জিন চালিত নৌকায় করে তিনি ছুটে চলেন ভৌগলিকভাবে হাওড়-বাওড়ে অবস্থিত গ্রাম্য প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে।যেখানে পূর্বে কখনো কোন ইউএনওর পায়ের চিহৃ পড়েননি।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিতি নিশ্চিতকরণ ও ঝরেপড়া রোধকল্পে -বিদ্যালয় পরিদর্শন, অভিভাবক সমাবেশ, বিভিন্ন শ্রেণীপেশার মানুষের সাথে যোগাযোগ, মিড ডে মিল উপকরণ (টিফিন বক্স) বিতরণ, দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ(কলম,খাতা,জ্যামিতি বক্স) ও পোশাক বিতরণ, জার্সি ও ক্রীড়াসামগ্রী বিতরণ, পরিষ্কার ও নিরাপদ পানি ব্যবস্থার জন্য পানির ফিল্টার বিতরণ, শ্রেণীকক্ষ এবং বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিষ্কার-পরিছন্ন রাখাসহ বিদ্যালয়কে আকর্ষণীয় করার লক্ষ্যে ফুলবাগান করা, শ্রেণীকক্ষে ঝুড়ি স্থাপন, পরিছন্নদল গঠন, বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বেঞ্চ সরবরাহসহ নানাবিধ প্রশংসনীয় ও শিক্ষাবান্ধব উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এর ফলে সরাইল উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ৪৫ হাজার শিক্ষার্থী বিদ্যালয়মূখী হয়েছে। এতে করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর উপস্থিতির হার বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ঝরেপড়াও রোধ হয়েছে বলে অভিভাবক, শিক্ষক এবং এলাকার গণ্যমান্য সচেতন ব্যক্তিরা আশাবাদ ব্যক্ত করেন।এই অর্থে সৈয়দা নাহিদা হাবিবা শুধু একজন উপজেলা নির্বাহী(ইউএনও) কর্মকর্তা নয়, তিনি একজন আলোকবর্তিকা ।তাছাড়া উক্ত উপজেলার প্রতিটি বিদ্যালয়ের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ, বিদ্যালয়ের জমি সংক্রান্ত নিরোধ নিষ্পত্তি যা স্বাধীনতার ৪৫ বছরেও সমাধান হয়নি তা তিনি একে একে সমাধান করছেন ।
তাঁর বহুমূখী কাজের স্বীকৃতি হিসেবে, প্রাথমিক শিক্ষায় বিশেষ অবদান রাখায় “জাতীয় প্রাথমিক শিক্ষাপদক ২০১৬ “ এর জাতীয় পর্যায়ে তিনি দেশের শ্রেষ্ঠ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ইউএনও) হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন।নিজের মেধা ও যোগ্যতা দিয়ে চমকে দিয়েছেন সবাইকে । কারন সমগ্র বাংলাদেশের ৪৯১ জন ইউএনও’র সাথে হাড়ভাঙ্গা প্রতিযোগীতায় নেমে তিনি হয়ে গেলেন প্রথম, সেরা। পেয়েছেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের’ এক্সেস টু ইনফরমেশন ’হতে সম্মাননা সনদ ।বেগম রোকেয়ার ছায়াখ্যাত সৈয়দা নাহিদা হাবিবা সম্পর্কে প্রাচীন বিদ্যাপীঠ অরুয়াইল বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রিয়শিক্ষক,প্রচারবিমুখ লেখক ফেসবুকের এক কমেন্টে লেখেন –“সমাজে মাঝে মাঝেই এমন সব ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটে ; যাদের তুলনা শুধু তাঁরাই - সৈয়দা নাহিদা হাবিবা এমনই একজন।“
সরাইলের সচেতন নাগরিক সমাজ সৈয়দা নাহিদা হাবিবাকে বাল্যবিয়ে বন্ধের শৈল্পিক কারিগর মনে করেন ।কারণ তাঁর চেষ্ঠা,প্রচেষ্ঠা,কর্মদক্ষতা ও সচেতনতায় দেশের সবচেয়ে বাল্যবিয়ে প্রবণ উপজেলা সরাইল আজ নিরানব্বই ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত উপজেলা। বাল্যবিয়ে রোধকল্পে এলাকায় জনসমাবেশ, উদ্বুদ্ধকরণ সভা, লিফলেট বিতরণসহ তাঁর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার।তিনি শতভাগ চেষ্ঠা চালিয়ে যাচ্ছেন সম্পূর্ণরুপে বাল্যবিয়ে বন্ধ করতে।তাঁর কাছে বাল্যবিয়ের খবর আসা মাত্রই তিনি এলাকার চেয়ারম্যন,পুলিশ প্রশাসন এবং স্থানীয় মেম্বারদেরকে বিয়ে বন্ধের নির্দেশ দেন।এমনকি তিনি তাদেরকে নিয়ে বর-কনের বাড়িতে হাজির হয়ে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ করে দিয়েছেন ।শতজনের খাবারের আয়োজনের দোহাই দিয়েও বাল্যবিয়ের ব্যাপারে কেউ কোন রকম ছাড় পাননি তাঁর কাছে । তিনি মনে করেন,প্রত্যেকটি শিশুর একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ আছে।আর তার সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে দেয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের।একটি কন্যা শিশুর জীবন বাল্যবিয়ের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে তা মেনে নেয়া যায়না। এলাকার সুশীল সমাজ থেকে শুরু করে কৃষক, জেলে কামার-কুমার সবাই ১বছর ২ মাসে জেনে গেছেন, যেখানেই বাল্যবিয়ে সেখানেই এই নীতিবান কর্মকর্তার কঠোর হস্তক্ষেপ।বাল্যবিয়ে সম্পর্কে তিনি কোন ধরনের অনুরোধ মানেন না। তাঁর চেষ্টা ও হস্তক্ষেপে সরাইল উপজেলা প্রায় ৯৯ ভাগ বাল্যবিয়ে মুক্ত।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার স্বপ্নকে বাস্তবায়নের জন্য তিনি অবিরাম কাজ করে যাচ্ছেন।বাংলাদেশে যদি তাঁর মতো আরো ১০০ জন এরকম নিবেদিত প্রাণ,দেশপ্রেমিক ,সৎ ,কর্মবীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা থাকতো তাহলে উন্নত জাতি গঠনের মূলভিত্তি প্রাথমিক শিক্ষার চিত্রটা পাল্টে যেতো এদেশে।সুহাসিনী,চির নবীন এই মানুষটি মন-মননে সব সময় একজন সুচিন্তার মানুষ।আমার অসীম ভালবাসা ,নিরন্তর শুভেচ্ছা ও অপার শ্রদ্ধা রইলো এই সাদামনের উচ্চ শিক্ষিত,উদারমনা ও মুক্তচিন্তার মানুষটির জন্য।
এম.মনসুর আলী
অরুয়াইল বাজার,সরাইল,ব্রাহ্মণবাড়ীয়া
০১৭১১৪৭১৯৬০/[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২৫