শিশু -কিশোরেরাই একটি জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার।একটি জাতির ভবিষ্যৎ পরিণতি কি হবে তা ঐ জাতির শিশু –কিশোরদের মানসিক বিকাশের উপরই নির্ভর করে।তাই বলা হয়-শিশু কিশোরই জাতীর ভবিষ্যৎ।।কিন্তু জাতির ভবিষ্যৎ কর্ণধার এসব কিশোর মা-বাবার উদাসীনতার সুযোগ নিয়ে নির্বিঘ্নে বিপথে পা বাড়াচ্ছে।জাতিকে করছে কলংকিত।মা-বাবার স্বপ্ন ,আশা আকাংখাকে কাঁচের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো করছে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় গত কয়েক বছর যাবৎ কথিত সন্ত্রাসী বড়ভাইদের নামে ১০ থেকে ১৭ বছরের কিশোরেরা শহরে ও মফস্বলের পাড়ায় পাড়ায় গ্রুপ বা বাহিনী গড়ে তুলেছে।তাদের কর্মকাণ্ড দেখলে রীতিমতো শিউরে উঠতে হয় ! এসব কিশোরেরা নিন্দনীয় , ভয়ংকর সব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে । একটু কথা কাটাকাটির জের ধরেই মেরে ফেলছে গ্রুপ থেকে বহিস্কৃত পুরাতন বন্ধুকে। সেবন করছে মদ,গাঁজা ,ফে্ন্সিডিল হেরোইন ইত্যাদি।এরা পাড়ার মোড়ে মোড়ে দল বেঁধে আড্ডা দেয়, মেয়েদের ইভটিজিং করে, বড়দের সামনে প্রকাশ্যেই সিগারেটে সুখটান দেয়। বিপদগামী এসব সন্তান কখন কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, তার বেশিরভাগ খবরই রাখেন না তাদের অভিভাবকরা। শুধু ইভটিজিং ,দল বেঁধে আড্ডা,একের পর এক সিগারেট ফোঁকা নয় সমাজের উচ্চবিত্ত পরিবারের অনেক কিশোরই সঙ্গ দোষে এমন সব অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে,যা বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয়।ফলে সমাজে ,রাষ্ট্রে, পরিবারে নেমে আসছে অশান্তি ।
এলাকার অল্পশিক্ষিত কথিত “বড়ভাই” নামের বেকার যুবকরা নিয়ন্ত্রণ করে এসব কিশোর বাহিনী ।কেউ টোকাই থেকে পেটের ক্ষুধা নিবারণে, কেউ পাড়া-মহল্লার বখাটেদের পাল্লায় পড়ে,কেউ সন্ত্রাসী কথিত বড়ভাইদের খপ্পরে পড়ে, আবার কেউ কেউ নেশার টাকা জোগাড় করতে গিয়ে, কেউ নিজ পাড়ায় প্রভাব কাটানোর জন্য , কেউ মেয়ে বন্ধুর কাছে হিরো সাজার লোভে এসব দলে পা বাড়ায় । উচ্চবিত্ত পরিবারের কিশোরেরাই এ গ্রুপ তৈরীতে বেশি ক্রিয়াশীল । বাবা-মায়ের অসচেতনতা এবং সময় না দেয়ার কারণেই শিশু-কিশোরদের অপরাধে জড়িয়ে পড়ার প্রবণতা বাড়ছে।
আমার মতে পরিবার ও সমাজ এর জন্য প্রত্যক্ষভাবে নিরানব্বই ভাগই দায়ী ।কারণ কোনো শিশু-কিশোরই সন্ত্রাসী হয়ে পৃথিবীতে জন্মায় না । অভিভাবকদের সঠিক পরিচর্যা ও নজরদারীর অভাবে তাদের কিশোর সন্তানেরা পরিবারের অজান্তেই ধীরে ধীরে ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসে পরিণত হচ্ছে ।বাবা-মায়ের সঠিক নির্দেশনা পেলে একটি শিশু ছোট থেকেই ভালোভাবে বেড়ে ওঠে। আর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সমস্যা থাকলে তার প্রভাব শিশুটির ওপর পড়তে বাধ্য।’
একটি শিশুর বিকাশের প্রধান সুতিকাগার হচ্ছে তার পরিবার। পরিবারে মা-বাবা যদি শিশুর বিকাশ কালে তার আবেগ,মন ,আচরণ সম্পর্কে অপরিপক্ব থাকে তাহলে সেই পরিবারে শিশুর বিপথগামিতার সম্ভাবনা অধিকতর। এ ছাড়া বাবা-মা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের অসদাচরণ, মিথ্যাচার, দুর্নীতিপরায়ণতা, ভারসাম্যহীন ব্যবহার শিশু -কিশোরকে বিপথগামী করে তোলে। তাই উপসংহারে বলা যায়- কিশোরদের সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সম্পৃক্ত হওয়ার জন্য মা-বাবার নজরহীনতা, অজ্ঞতা অনেকাংশেই দায়ী।
এম.মনসুর আলী(কলামিস্ট)
অরুয়াইল বাজার,,ব্রাহ্মণবাড়ীয়া
০১৭১১৪৭১৯৬০/[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:১৬