আজ সারারাত ঘুমাতে পারিনি ভাল করে।একটা ঘটনা দেখে আর নিজের দেশের মানুষের মানষিকতার কথা ভেবে শুধু ঘৃণায় শিহরে উঠেছি।আমাদের পতনের দিন বোধহয় আসছে।স্বাধীনতার ৪০ বছর হয়ে গেল,কিন্তু পাকিস্তান প্রেম এখনো গেলনা।কীকরে যে স্বাধীন হয়েছে নাকি আদৌ স্বাধীন হয়েছে দেশটা বুঝতে পারছিনা।
যাহোক ঘটনা হল,গতকাল এই খবরটা দেখলাম বিডিনিউজ এ।এখানে যারা পাকিস্তানিজমের,রিপোর্টারে বা ব্লগারের বিরোধীতা করেছেন,তাদের মানষিকতা দেখে খুব খারাপ লাগল।আমার facesbook ওয়ালে লিংক দিলেও একজন এমন ছাগুর সন্ধান পেলাম।
যাহোক,একজন প্রতিবাদ করল এই বলে যে,এটি জাতিগত ঘৃণা।"পাকিস্তান একটি রাষ্ট্র। কোনো একক জাতিগোষ্ঠী নয়। এটি সবার জানা এই রাষ্ট্রের পত্তন হয়েছিল ধর্মের ওপর ভিত্তি করে। আজও পাক্তিস্তানের রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে অনেক জাতিগোষ্ঠী নিপিড়িত, শোষিত ও নির্যাতিত হচ্ছে। যেমনটি আমরা হয়েছি ১৯৪৭-১৯৭১ পর্যন্ত। পাক্তিস্তান রাষ্ট্রের ভেতরে যেমন জাতিগত শোষণ আছে তেমনি আছে শ্রেণি ও লিঙ্গীয় শোষণ। অর্থনীতির প্রধান ঝোঁকটি পুজিঁতান্ত্রিক, কিন্তু এখনও সেখানে প্রবল ক্ষমতাধর ভূস্বামীরা। সেখানে নারীদের ওপর চলে মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন। শাস্তি সবরূপ নারীকে প্রকাশ্যে প্রুপ রেপ করা হয়। হর্নাড কিলিং করা হয়। রাষ্ট্রে আছে ব্রাসফেমি আইন। এ বৈশিষ্ট্যগুলোর প্রবল উপস্থিতি পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের প্রতি আমাদের বিপুল ক্ষোভ উদ্রেক করতে পারে। আমাদের এ ক্ষোভ আরো বাড়িয়ে দেয় জাতি হিসেবে যখন আমরা ১৯৭১ সনে পাকিস্তানী দখনদার-হানাদার বাহিনীর নির্মম অত্যাচার, হত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন-এর শিকার হয়েছি। কিন্তু যে কোটি কোটি পাকিস্থানী নারী-পুরুষ প্রতিদিন তাদের রাষ্ট্র, সেনাবাহিনী, মার্কিন বাহিনী, মৌলবাদী শক্তি, ভূস্বামীদের নির্যাতিত হচ্ছে, নিপিড়িত হচ্ছে, নিহত হচ্ছে বোমার আঘাতে, গুলিতে- তাদের পাশে আমরা কি দাঁড়াব না? রাষ্ট্র ও জনগণ এক নয়। ভুলে গেলে চলবে না, আমাদের দেশেও আদিবাসীরা জাতিগত নিপিড়নের শিকার। এখানেও ফতোয়ার নামে নারীদেরকে নির্যাতন করা হয়। প্রতিদিন ধর্ষণের শিকার হয় একাধিক নারী। ভিন্ন ধর্ম-এর অনুসারীরা এখানে প্রায় ২য় শ্রেনীর নাগরিক। পাশের দেশে ভারতেও একই অবস্থা।বিঁগত কয়েক বছরে শুধু কাশ্মীরেই নিঁখোজ হয়েছে ১০ হাজার মানুষ। গুজরাটের দাঙ্গায় হত্যা করা হয়েছে প্রায় ২ হাজার মুসলমানকে। ভারতে প্রতি বছর কয়েক হাজার ভ্রুণ হত্যা করা হয় লিঙ্গীয় চিহ্ন নির্ণয়ের পর। প্রতি বছর সেখনে হারিয়ে যায় কয়েক লক্ষ নারী (এ বিষয়ে অমর্ত্য সেনে গবেষণা রয়েছে)। ভারতে গত এক বছরে দশ হাজারের বেশি কৃষক আত্মহত্যা করেছে মহাজনের দেনার না মেটাতে পেরে। আসলে শেষ পর্যন্ত জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোনো রাষ্ট্রের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারি, সেটি পাকিস্তান হতে পারে, ভারতও হতে পারে। হতে পারে যুক্তরাষ্ট্র-চীন-যুক্তরাজ্য। এগুলোর দরকারও আছে। কিন্তু সব রাষ্ট্র কাঠামোর ভেতরে সেই দেশের জনগণ- নারী-পুরুষ, ধর্মীয় মাইনরিটি, এথনিক্যাল মাইনরিটি, প্রতিবন্ধী নিপিড়িত হচ্ছে, নির্যাতিত হচ্ছে, শোষিত হচ্ছে। এক এক রাষ্ট্রে এর ধরনগুলো একেক রকম। সে কারণে কোনো জাতির প্রতি, কোনে রাষ্ট্রের নাগরিকদের প্রতি অসম্মান, অমর্যাদা দেখানো ঠিক নয়। বরং দুনিয়া জুড়ে প্রতিবাদের এই অভিব্যক্তিকে ছড়িয়ে দিতে হবে, আমরা ৯৯%। আমরা সব ধরনের শোষণ, নির্যাতন, নিপিরনমুক্ত একটি সমাজ, রাষ্ট্র ও দুনিয়া চাই।"
আমি তার উত্তরে বললাম,"নিজেকে ছাড়া আপনাদের সবাইকে গড বা ফেরেস্তার মত শুদ্ধ চিত্তের মনে হচ্ছে যারা ঘৃণা করতে শেখেননি।"পাপকে ঘৃণা কর,পাপীকে নয়",একথা বোধহয় আপনাদের জন্যই তৈরী হয়েছে।আবার এও হতে পারে,শিক্ষা বা সংস্কারের দিক থেকে আমি আপনাদের তুলনায় পিছিয়ে বলে আমার মন আপনাদের মত ঘৃণাহীন হতে পারছেনা।সেযাক,আমি আপনাদের কাছ থেকে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানতে চাই(যদিও জানি পারবেননা দিতে উত্তর,কারণ এখনো তা এপৃথিবীতে তৈরি হয়নি,যদি পাওয়া যেত,পৃথীবীতে এত জাতিগত দ্বন্দ্ব,মানুষের এত সংস্কৃতি,স্বাজাত্যবোধ বা দেশপ্রেম থাকতো না)।
১।পৃথীবীতে অনেক মুসলীম দেশ আছে( আমি ইসলাম ধর্মকে আঘাত করছিনা),আফ্রিকায় এখনো অনেক অসভ্য বর্বর জাতি আছে,কিন্তু পাকিস্তান নামক দেশটিতে যে অস্বভাবিক বর্বর ঘটনা ঘটে বা ঘটে চলছে প্রতিনিয়ত তা ঐসব জাতির তুলনায় এত বেশি কেন?
২।পাকিস্তানকে ঘৃণার পিছনে একটি দুটি ঘটনা নয়,কোটি কোটি ঘটনা জড়িত।আর ৭১ এর বদৌলতে সেটা করার অধিকার তারা নিজেরাই আমাদের হাতে তুলে দিয়েছে। কোনো জাতি যখন মরালিটির দিক থেকে দুর্বল হয়,নীতিহীন হয় তখন সে যতই মর্টার নিয়ে আসুক না কেন কোদাল হাতে লুন্গী পড়া জাতির কাছেও হেরে যাবে।৭১ এ সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানী(জনগন) নিজের দেশে স্বঐরাচারীদের ই সাপোর্ট দিয়েছে,নয়কী?অতএব তাদের ঘৃনা নয় কেন?তারা আমাদের সাথে যে অন্যায়টা করেছে আজো সেজন্য ক্ষমাপ্রার্থী নয় তারা।অতএব তাদেরকে কী সব ভুলে বুকে এখন টেনে নিতে হবে? ৭১ এ যদ্ধে যাওয়া থেকে শুরু করে জেতা পর্যন্ত সবকিছুর পেছনে দেশের প্রতি শুধু ভালবাসা,স্বাধীনতা পাবার তীব্র আকাংখাই জড়িত ছিলনা,ছিল পাশবিকতার প্রতি তিব্র ঘৃণা আর প্রতিষোধস্পৃহা যা ছাড়া কোন যুদ্ধ জেতা দূরে থাক,যুদ্ধ হওয়াই অসম্ভব।
৩।প্রতিটি জিনিসের ই বিপরীত দিক থাকে,যেমন আলোর পিছনে থাকে আধার।ভালবাসা থাকলে ঘৃণা থকবেই।ভালবাসা বা মানবিকতা অর্জনের যে সংগ্রাম মানুষ আজীবন করে,সেটাই তাকে মূলত মানুষ করে তোলে।তাই মানুষ কখনো পরিপূর্নভাবে ঘৃনাহীন হয়না।মানুষ সত্যকে ভালবাসে বলেই মিথ্যাকে ঘৃণা করতে পারে।একথা কীকরে অস্বীকার করবেন আপনারা?
৪।আমি জানি এইসব প্রসংগ উপরের ব্যক্তিকেন্দ্রীক ঘটনার সাথে কিছুটা অপ্রাসংগীক।কিন্তু পুরোপুরি নয়।কারন "এইটা পাকিস্তানী সংস্কৃতির কোন ফল কিনা ভেবে দেখা যেতে পারে। কারণ, এই রকম “অদ্ভুত , ভন্ডামির ইসলাম” পাকিস্তানী কালচারে বেশ প্রচলিত। নামাযও পড়ে, মদও খায়, রোযাও রাখে, আবার রোযার মাসটা বাদ দিয়ে (পবিত্রতা রক্ষার জন্য) সারা বছর আকাম কুকাম সবই করে- এমন পাকিস্তানী একাধিক লোককে নিজের চোখে দেখেছি। ইসলাম ইসলাম করে গলা ফাটানো পাকিস্তানে মুজরা (এক ধরনের যৌণ সুড়সুড়ি মূলক প্রায় নগ্ন নাচ) এমন কি টিভিতে দেখায়। "(রাগ ইমন)
অতএব পাকিস্তানী কালচার কতটা খারাপ বুঝতেই পারছেন।তাই পাকিস্তানিজমের প্রতি আমার ঘৃনা একটা সুস্থ স্বাভাবিক মানুষের লক্ষন বলেই মনে করি।
আসলে নেহাত বলার সময়,অনেককিছুই তাত্বিকভাবে বলা যায়।কিন্তু কাজটা কঠিন নয় শুধু অসম্ভব কোন কোন ক্ষেত্রে।ফোনে কেউ যদি আপনাকে বিরক্ত করে বাজেভাবে,আপনি তাকে অবস্যই ঘৃণা করবেন।তখন আপনাদের এই ঘৃনাহীন পুষ্পিত পৃথিবীর ত্বত্ত কোথায় থাকবে?ব্যক্তি পর্যায়েই অসম্ভব আর রাষ্ট্রীয় জীবনে তো আরো।"
আরো অনেকেই অনেক কথাই বলেছে।আপনাদের মতামত জানতে চাই।