আমি ও পোকা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ছোট ছোট ঘটনা আছে যেগুলো বিভিন্ন সময় মনে পড়ে ঠিকই, কিন্তু কোথাও লেখা নেই। আমি মজা পাই মনে করে। যেহেতু ডায়রি লেখা হয়নি, তাই এখানেই লিখে রাখবো। আমারও অনেক পর হয়তো এটা ওভাবে হারাবে না যেভাবে বস্তুগুলো হারায়।
আমি সম্ভবত টু-এ পড়ি। ওয়ান পড়ায়নি মা। পরবর্তিতে প্রশ্ন করা হলে সে বলেছিলো... আমার মেয়ে তাড়াতাড়ি স্কুলে যাবে, বান্ধবিদের চেয়ে এক ক্লাস উপরে পড়বে, ভাবতেই ভালো লাগে। কিন্তু ফলাফল ভালো হয়নি। যত উচু ক্লাসে উঠেছি রোল নম্বর ততো বেড়েছে। ভাইবোন পিঠাপিঠি, আমার রেজাল্ট খারাপ, তাই কোন কোন সময় একা যে কাটেনি তা নয়। এমনই কোন এক ছোটবেলার বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে উঠানের কাদা দেখছিলাম...একবার পিছলে থুতনি ফাটিয়ে ফেলেছিলাম.... একটা কেঁচো (ছোটখাটো সাপ আর কি!!) একেবেঁকে বারান্দার দিকে আসছিলো। ভয়ে উঠছি উঠবো করছি এরমধ্যে কোত্থেকে একটা মুরগি দৌড়ে এসে কপাৎ করে কেঁচো খেয়ে ফেললো। আমি তো ছানাবড়া (!)। তারচেয়েও বেশি ভয় পেলাম মুরগিটার যখন মাথা খারাপ হয়ে গেলো। অনেক বড় হয়ে বুঝেছিলাম যে ওটা পেটে গিয়ে সাথে সাথে মরেনি। আর তাই মুরগিও ডিগবাজি ...
একবার দুটো কুকুর মারামারি করছিলো আর আমি ভয়ে মা’র বেনী বেয়ে কোলে উঠে পড়েছিলাম। সেবার মা ইচ্ছেমতো মার লাগিয়েছিলো অথচ আমার কোন দোষ ছিলো না।
কেঁচো আমি বরাবর-ই ভয় পাই। কিন্তু কেঁচো নিয়ে আমার হয়রানিরও শেষ নাই। এইচএসসি-তে প্রানিবিজ্ঞানে ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য গেলাম স্যারের কাছে প্রাইভেট পড়তে। স্যার বল্লেন, আমি কিছু সাপ্লাই দিতে পারবো না, তোরা নিয়ে এসে কেটেকুটে নিয়ে যা। আমি অনেক কষ্টে ১টা ব্যাঙ আর কয়েকটা তেলাপোকা ধরতে পেরেছিলাম। কেঁচো কাটবো না কোনভাবেই। যা নিয়ে গেছি কাটছি মনোযোগ দিয়ে। কোত্থেকে স্পেগেটির মতো এতটা ফ্যাটফ্যাটে সাদা কেঁচো আমার ট্রে-তে। আমি জানকবচের মতো একটা চিৎকার দিলাম। স্যার দৌড়ে এলেন, এক হাতে লুঙ্গী আরেক হাতে ভাতের থালা।
এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা। এক্সটার্নাল এসছে খুব নাকি কড়া। আমার প্রায় হাত-পা ধরা অবস্থা। স্যার রাজি হলেন এ শর্তে যে মৌখিক দিতে হবে কেঁচো অধ্যায় থেকে। আমি তেলাপোকার পৌষ্টিকতন্ত্র নিয়ে স্যারের রুমে গেলাম। স্যার একটা ছোট কেঁচো আর একটা বড় কেঁচো দিয়ে বল্লেন, বলো কোনটা ছেলে আর কোনটা মেয়ে। আমি বল্লাম, বড়টা ছেলে ছোটটা মেয়ে। স্যার তাকিয়ে থাকলেন। আমি বল্লাম, না স্যার ছোটটা ছেলে বড়টা মেয়ে। স্যার বল্লেন, তোমার নামি কি? আমি বল্লাম, স্যার কেঁচো উভয়লিঙ্গ প্রানী। স্যার হাসলেন।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি প্রথম জোঁক দেখি। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেক ইঞ্চি মাটিতে একটা অন্তত জোঁক পাওয়া যাবেই বর্ষাকালে। গিদগিদে (!) অবস্থা। এরকমই একটা বর্ষনমূখর সন্ধ্যায় আমি এবং সে মুখোমুখি বসে, ঘাসের উপর বাঁশের মাচায়। খুবই রোমান্টিক সন্ধ্যা। হঠাৎ বজ্রপাতের মতো একটা ঘুষি এসে পড়লো। মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো। সে বল্লো, আরেকটু হলে স্টেশনে গিয়ে তোকে ন্যাড়া করাতে হতো। তারপর দীর্ঘদিন এই ভীতি ছিলো।
পুঁই শাক ধুয়েছি রান্না করবো। হঠাৎ দেখি পাতিলের গায়ে খড়ের মতো কলো কি যেনো। হাত দিয়ে সরাতে গেছি, ফিচ্ করে পিছলে কোথায় গেলো কে জানে, রুমমেটরা মিলে আতিপাতি করেও পাইনি।
এইতো সেদিন, ঈদের ছুটিতে পুকুরপাড়ে মহাসমারহে মাছ ধরা হচ্ছে। কোত্থেকে ফাহিম এসে বলে ভাবি, মাথায় কেঁচো দিই??? আমি তো অবাক, বলে কি... মাথামুথা ঠিক আছে তো!! ও জানলো কিভাবে, মনে মনে ভাবছি। সত্যিই ওর মাথা ঠিক ছিলো না। একদলা কেঁচো বল বানিয়ে মাথায় ছেড়ে দিলো। আমি স্পস্ট বুঝলাম কেঁচোর বল আমার মাথা বেয়ে পিঠ দিয়ে নিচে পড়লো। আমি একটা আর্ত চিৎকার দিলাম। ফাহিমও অপরাধির মতো ঘুরঘুর করতে লাগলো। আমার কান্না দেখে অন্যরা লজ্জা পেলেও আমি নির্লজ্জের মতো অনেক্ষন কেঁদেছি।
এই স্মৃতিগুলো ভয়ঙ্কর হলেও স্মৃতির কোথায় যেনো একটা আত্মতৃপ্তি আছে। আমার সন্তান এমন ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে আত্মতৃপ্তির খোঁজ পাবে কি না জানিনা, আমি চাই এগুলো থেকে ও যেনো খুব বেশি দূরে সরে না যায়।
আরেকটা ঘটনা লেখা হয়নি। এটা্ও লিখে রাখবো.....
তখন আমার চুলগুলো বয়কাট ছিলো। মেয়েরা ছেলেদের মতো করে চুল কাটলে সামনে অনেকটা ঝুলে থাকে। আমারও নাক পর্যন্ত থাকতো। রোকেয়া হলে প্রথম বর্ষে যে ডরমেটরিতে জায়গা পাওয়া গেল তা দেখে মনে হতো যেনো কর্তৃপক্ষ বলছে "এই নেহ্, ১০০টা বিছানা পেরে দিলাম, কে কোথায় শুবি শো..." এমনই এক পরিস্থিতিতে আমরা ৫জন মিলে ৪টা বিছানা দখল করলাম। ওটা সম্ভবত রান্নাঘর মতো ছিলো আগে। পরে খালি করেছে বলে প্রচন্ড নোংরা। ৫জনের ৪টা বিছানা হলে ১জনের যে বিপত্তি হয় তাই হলো। সেদিন ছিলো আমার পালা। নাটকের রিহার্সেল শেষে দেরী করে ফিরে উপায় না পেয়ে নুসরাত ও নুসরাতের জামা-পায়জামাসহ রাতে ঘুম দিলাম। স্বপ্নে দেখছি বাতাসে চুল উড়ছে নাকের উপর। বার বার হাত দিয়ে সরাতে হচ্ছে। আবার এসে পড়ছে। আমি আবার সরালাম। এবার হাতে চুল উঠে এসছে। লাফ দিয়ে উঠলাম। হাতের মধ্যে এটা কেন্নো। গোল হয়ে গেছে..... যে আমার নাকের উপর এতক্ষন ঘুড়ছিলো।
............হয়তো আবারও এডিট হবে আরো কিছু মনে এলে...................
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জানুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:০০