নাম শুনে হয়ত অবাক হতে পারেন, তবে এই নামে আসলে কোনো স্কুল নাই। আমার স্কুলের নাম মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল।
চট্টগ্রামের একদম প্রাণ কেন্দ্রে আমার স্কুলের অবস্হান ছিলো। নিউ মার্কেটের পাশে, সাবেক জলসা সিনেমা হলের বিপরীতে। কোর্টবিলন্ডিং এর পাহাড়ের তলদেশে অবস্হিত মিউনিসিপ্যাল মডেল হাই স্কুল। হাইস্কুল জীবনের (১৯৯৩-৯৭/৯৮ পর্যন্ত) ছোটো খাটো কয়েকটা মজার স্মৃতি আজকে শেয়ার করার জন্য লিখছি।
১। বালতি স্কুলঃ ১৯৯০ সালের আগে পিছে এই স্কুলকে অনেকে বালতি স্কুল নামে চিনত। কারণ টা ও আজব। তখন ক্লাশে টিফিন দেওয়া হতো বালতিতে করে। অবশ্য সেটা ৯২-৯৩সালের পরে আর ছিলো না,এখন ঢাকনা দেওয়া বড় বড় পাত্রতে করে দেওয়া হয়। এখন হয়ত কেউ চিনবে না এই নামে।
২। হেড মাষ্টারঃ আমাদের স্কুলের স্বর্ণযুগ ছিলো এ কে মাহমুদুল হক স্যার যতদিন প্রধান শিক্ষক ছিলেন (১৯৯৮ পর্যন্ত)। খুবই মেজাজী, ছাত্র শিক্ষক সবাই তাকে ভয় পেত। স্কুলের ড্রেস কোড ছিলো সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট । এই বিষয়গুলো হেডস্যার কঠোরভাবে মেনে চলতে বাধ্য করত। তারপরও দেখা গেল, মাঝে মাঝে ২/১ জন টাইট জিন্স পড়ে আসে। একবার দেখা গেল, হেড স্যার পরীক্ষার হল থেকে জিন্স প্যান্ট পড়া ৬-৭ জন খুজে বের করল। তারপর তাদেরকে নিচতলায় হেডস্যারের রুমের সামনে বারান্দায় ফ্লোরে বসিয়ে দিলো, পরীক্ষা দেওয়ার জন্য।
৩। পরীক্ষার ডিউটিঃ স্যার যেমন রাগী ছিলো, তেমনি ছাত্রদের প্রতি তার মনোযোগও ছিল অনেক। ক্লাস টেনে পড়ার সময় আমি ছিলাম গ শাখায়, স্যারে মোটামুটি সুনজরে ছিলাম। মাহমুদুল হক স্যার ক শাখায় ইংরেজী পড়াত। কিছু ছেলে ইংরেজীতে কাছা হওয়াতে তাদের স্যার নিয়ম করে দিয়েছিলেন, ১ ঘন্টা আগে সকাল ৯টা বাজে স্কুলে আসতে হবে। স্যার প্রতিদিন ১ ঘন্টা করে পড়াত ( কোনো অতিরিক্ত টাকা/বেতন ছাড়া) । একবার তাদের পরীক্ষা নিচ্ছিলেন স্যার, আর ডিউটির দায়িত্ব দিলেন আমাকে। আমার আবার তার জন্য সম্মানীও দিলেন স্যার নিজ পকেট থেকে। ২০ টাকা, আমার জীবনের প্রথম রোজগার। আর নিজের ফ্রেন্ডদের ক্লাশে পরীক্ষার ডিউটি দেওয়ায় ১ ঘন্টার জন্য যথেষ্ট মাষ্টার মাষ্টার ভাব নিলাম আমি।
৪। বিএনসিসিঃ করিম স্যার স্কুলের পিটি, বিএনসিসি এইসব দেখতো করিম স্যার। মহা মেজাজী, বেত নিয়ে চোখ বন্ধ করে পিটাতে পারতেন ছাত্রদের। একবার টিফিনের সময় স্কুল গেটে কয়েকটা ছাত্রের জটলা, হালকা গন্ডগোল, বাকীরাও ঘিরে ধরেছে, মনে হলো, খেলতে গিয়ে ঝগড়া করছে ২ দল। হেডস্যার তখন করিম স্যারকে পাঠালো, ঝগড়া ঠান্ডা করতে। স্যারকে দৌড়ায়ে আসতে দেখে সবাই পালালো।একজন পালাতে পারে নাই, স্যার তাকে বেত দিয়ে বেদম পিটুনী দিলো। কিন্তু ছাত্রটা কান্না করছে না। স্যারের অনেকক্ষন পর খেয়াল হলো, এই ছেলে পালাচ্ছে না কেন? পরে দেখা গেল, উনি একজন অভিভাবক, উনি পড়েছিলেন সাদা শার্ট আর কালো প্যান্ট (স্কুলের ইউনিফর্ম), দেখতও ছোটোখাটো, দাড়ি গোফ নাই, বয়স ২২-২৪ হবে।
অভিভাবকও হঠাৎ বেতের পিটুনীতে হতভম্ব, কি বলবেন, কিছুই বুঝতে পারেন নাই, সবাই পালালেও, উনি মনে করেছিলেন, উনি তো অভিভাবক, উনি পালাবেন কেন? উনাকেতো মারার কথা না।
পরে অবশ্য প্রধান শিক্ষক, সহকারী প্রধান শিক্ষক সহ সবাই এসে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে গেলেন।
ধৈর্য্য নিয়ে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
আমদের স্কুলের ফেসবুক পেজ।
২য় পর্ব পড়ুন এইখানে।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১১ রাত ১০:০৯