কিন্তু ঝামেলাটা পাকিয়েছে ব্যাটা ওয়েটার। খাবার দেয়ার সাথে সাথে দুইটা চামচ ও দিয়ে গেছে। সামনে বসা রাশেদ চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিয়েছে এদুটো দিয়েই খেতে হবে। আমি খানিকক্ষণ চেষ্টা করে মোটামুটি হাল ছেড়ে দিয়েছি। মনমত একটা পিস ও ছিঁড়তে পারি নি। হয় মুরগি পিঁছলে যাচ্ছে না হয় একটুখানি মাংস নিয়েই চামচ বের হয়ে আসছে। কি লজ্জার ব্যাপার। আশেপাশের টেবিলে স্মার্ট সব ছেলেমেয়েরা বসে আছে আমার কান্ড দেখে নিশ্চয়ই হাঁসছে তারা। মনে মনে সংকুচিত হয়ে গেলাম। আফসোস হল কেন যে পার্সেল নিয়ে নিলাম না! তাহলেই তো এখন মেসে গিয়ে ইচ্ছেমত খেতে পারতাম।
কয়েক মাস হল ফরিদগঞ্জ শহরে এ নতুন ধাঁচের রেস্টুরেন্টটা হয়েছে। এরা নতুন নতুন অনেক আইটেমই বানাচ্ছে। তবে এই চাইনিজ আইটেমই সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয়। বন্ধুদের থেকে শুনে শুনে অনেকদিন ধরেই খাবারটার প্রতি লোভ জন্মে গিয়েছিল।
তাই আজ রাশেদ যখন বলল "চল চাইনিজ মেরে আসি" আর না করতে পারলাম না। যদিও আমি এধরণের আধুনিক জায়গা এড়িয়ে চলতেই পছন্দ করি। যতটা না খরচের কথা চিন্তা করে তারচেয়ে বেশি এক ধরনের হীনমন্যতা বোধ থেকে।
এই যে যেমন এখন আমার কেন জানি মনে হচ্ছে ওয়েটার থেকে শুরু করে পুরো হোটেল এর সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সবাই বুঝে গেছে যে আমি জীবনে এই প্রথম চাইনিজ খাচ্ছি। কাঁটাচামচ দিয়ে আমি খেতে পারিনা। আমার আনাড়িপনা দেখে হয়ত সবাই মুখ টিপে হাঁসছে। এসব ভেবে ভীষণ রকমের বিব্রত বোধ করছি। মনে হচ্ছে যেন এখান থেকে বের হতে পারলেই বাঁচি।
এসময় বন্ধু রাশেদ একটা বিপ্লবী কাজ করে ফেলল। এতক্ষণ আমার ভাব দেখে সে নিশ্চয়ই ব্যাপারটা ধরতে পেরেছিল। আমাকে সহজ করানোর জন্য সে তার কাঁটাচামচ দুইটা পাশের প্লেটে রেখে হাঁসি হাঁসিমুখে হাত দিয়ে মুরগী থেকে মাংস ছিঁড়ে খেতে লাগল। মুখে বলল "ধুর্বাল এসব দিয়ে খাওয়া যায়! হাত চালা"।
এটা অনেকদিন আগের কাহিনী। এবং সেদিন আমরা মুরগীর একটা হাঁড়ও আস্ত রেখে আসিনি। এখনো আর এখনো চাইনিজ খেতে গেলে আমি শার্টের হাতা গুটিয়ে শুরু করে দেই। চামচ টিস্যু দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায়ই থাকে
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:৫৯