আমরা তখন ক্লাস নাইনে উঠেছি। একদিন ছুটিতে বাড়ী গেছি। মা ভাত বেড়ে দিতে দিতে বলল "শুনছিস নিতুর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে"। আমার গোটা দুনিয়াটা যেন স্তব্ধ হয়ে গেল। বুকটা ভীষণ রকম ফাঁকা হয়ে গেল। মাকে অবাক করে দিয়ে উঠে গিয়েছিলাম টেবিল থেকে। আমার মনে তখন ক্ষোভ, অসহায়ত্ব, হতাশা একসাথে জুড়ে বসেছে। সেদিন ই প্রথম অবাক হয়েছিলাম যে মেয়েদের এত তাড়াতাড়ি বিয়ে হয় কেন?
তখন আসলেই বুঝতাম না গ্রামে স্বচ্ছল সব পরিবারের মেয়েদের ও এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিয়ে দেয় ক্যান! যেন মেয়ে পার করতে পারলেই বাঁচে!
আপনি হয়তো আমার মূর্খতা দেখে হাঁসছেন বাল্যবিবাহের সামাজিক, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এত বিরূপ প্রভাব বাদ দিয়ে আমি কিনা একটা বিরহী প্রেমিক হিসেবে একে অপছন্দ করছি!
থাক নিজের কথা আসেন এখন এ বিষয়ে একটা গল্প বলি। একটা শুভ সমাপ্তির গল্প।অবশ্য এটা ঠিক গল্প না আমার নিজের পর্যবেক্ষন করা একটা ঘটনা। আমার গ্রামের বাড়ীর পাশের একটা মেয়ে। এবার মাত্র এস.এস.সি পরীক্ষা দিয়েছে। ছাত্রী হিসেবে বেশ মেধাবী । আর মেয়ে শুনলেই আগে যে ব্যাপারটা মাথায় আসে যে দেখতে কেমন! সেইদিক থেকেও তাকে বেশ সুন্দরীই বলতে পারেন। তো যেহেতু সুন্দরী খুব স্বাভাবিক ভাবেই ক্লাস এইট নাইনে উঠার পর এলাকার সব মেয়ের বাড়ীর সামনে ডিউটি দেয়া রোমিওরা ওর পিছনেও ঘুরা শুরু করল। স্কুল থেকে বাড়ী কোন জায়গায় রেহাই নাই। যত দিন যেতে লাগল উত্তক্ত করার মাত্রা ও বাড়তে লাগল। মধ্যবিত্ত বাবা মার কপালে ভাঁজ কি করা যায়! এসময় সবচেয়ে নিরাপদ উপায় নিয়ে আসল মেয়ের এক চাচা। বিয়ের প্রস্তাব। ছেলের পড়াশোনা মাত্র মেট্রিক পাশ হলেও ব্যাবসা বাণিজ্য ভালই আছে। বলল এখন বাগদান হয়ে যাবে এসএসসির পর বিয়ে। মেয়ের বাবা মা সব কিছুর সমাধানের এই অসাধারণ প্রস্তাব পেয়ে ততক্ষনাৎ রাজী। আর এতে ম্যাজিকের মত কাজও হল। যেসব ছেলেপেলে এতদিন তাকে বিরক্ত করত তারাই তাকে ভাবী বলে ডাকা শুরু করল। সবাইও হাঁপ ছেড়ে বাঁচল।
এবার বাড়ী এসে শুনলাম ওর বিয়ে হয়ে গেছে। তো এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম মেয়েটা না পড়াশোনায় আগ্রহী ছিল! আর পড়াবে? বন্ধু যে ব্যাখ্যা দিল তা মোটামুটি এরকমঃ "দেখ মেয়েটাকে যদি এখন কলেজে পড়ায় সে দুনিয়ার সাথে আরো ভালভাবে পরিচিত হবে। আরো অনেক স্মার্ট ছেলেপেলের সাথে ঘুরবে এবং খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা পর্যায়ে মেয়েটার মনে হবে তার স্বামী আসলে তার উপযুক্ত না। মানে খুব বেশী সম্ভাবনা যে এর ফলে সে ছেলেটার হাত ফস্কে বেরিয়ে যাবে। এর চেয়ে ভাল সে সুখে শান্তিতে ঘরকন্না করবে বছর ঘুরতেই বাচ্চাকাচ্চা আসবে এবং এটাই হয়ে যাবে ওর জীবন" মানে অবশেষে তারা সুখে শান্তিতে বসবাস করতে লাগল। যাকে বলে "হ্যাপী এন্ডিং"।
কিন্তু এমন হ্যাপী এন্ডিং এর খপ্পরে পড়ে শেষ হয়ে যায় অধিকাংশ মেয়েদের আশৈশব লালিত স্বপ্ন। তাদের ক্লাসের শেষ বেঞ্চের পড়াশোনায় অনাগ্রহী ছেলেটাও যখন কলেজে যায় তখন তারা ঢুকে রান্নাঘরে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:১৮