শাহবাগের গনজাগরন আন্দোলনের বিপক্ষে কালের কন্ঠ ও চলে গেল!
সবই টাকার কেলেসমাতি মনে হয়।
পুলিশের অনুমতি ছাড়াই চলছে গণজাগরণ মঞ্চের সমাবেশ। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ অ্যাক্ট অনুযায়ী সমাবেশ করতে হলে আগে পুলিশের অনুমতি নিতে হয়। তাদের অনুমতি পাওয়ার ওপর নির্ভর করে সভা-সমাবেশ হবে কি না। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সমাবেশ করলেও অনুমতি নিতে হয়। এর ব্যতিক্রম দেখা যাচ্ছে গণজাগরণ মঞ্চের ক্ষেত্রে।
একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা কালের কণ্ঠকে জানিয়েছেন, গণজাগরণ মঞ্চ থেকে একের পর এক সভা-সমাবেশ করা হলেও পুলিশের অনুমতি নেয়নি আন্দোলনকারীরা। তারা শাহবাগ, রায়েরবাজার বধ্যভূমি, যাত্রাবাড়ী, মতিঝিল, পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করেছে। গতকাল রবিবার উত্তরায় সমাবেশ করে তারা। এগুলো পুলিশের অনুমতি নিয়ে করা হয়েছে এমন সংবাদ পাওয়া যায়নি।
পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, রাজধানীতে কোনো সমাবেশ করতে হলে কোনো দল বা সংগঠনকে আগে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ট থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেওয়া হয় সমাবেশ করা হলে কোনো গণ্ডগোলের আশঙ্কা আছে কি না তা জানানোর জন্য। ইতিবাচক রিপোর্ট পাওয়ার পর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয় থেকে অনুমতি দেওয়া হয়। অনুমতিপত্রে সমাবেশের সময়, তারিখ উল্লেখসহ ১০-১২টি শর্ত দেওয়া হয়। শর্তে কোন পর্যন্ত মাইক ব্যবহার করা যাবে তা উল্লেখ থাকে। জানতে চাওয়া হয়, সমাবেশ শুরুর কতক্ষণ আগে লোকজন উপস্থিত হতে পারবে। সমাবেশ ক'টার মধ্যে শেষ করা হবে সে সময়ও উল্লেখ থাকে। জনস্বার্থে কর্তৃপক্ষ কোনো কারণ দর্শানো ছাড়াই অনুমতি বাতিল করতে পারে বলেও শর্তের মধ্যে উল্লেখ করা থাকে। সভার জন্য নির্ধারিত এলাকার বাইরে কোথাও যান ও জন চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না- এ কথাও উল্লেখ করা থাকে।
প্রসঙ্গত, গত ৫ ফেব্রুয়ারি জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ঘোষণা করেন। এ রায় মেনে নিতে না পেরে ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টরা ওইদিন বিকেলে শাহবাগ মোড়ে আন্দোলন শুরু করে। ওইদিন জামায়াতের হরতাল থাকায় যান চলাচলে তেমন প্রভাব পড়েনি। তবে পর দিন থেকে ওই এলাকায় ব্যাপক যানজট দেখা যায়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টানা সমাবেশ চলে শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে। সে সময় শাহবাগ এলাকার রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়। রাস্তা বন্ধ করে এই সমাবেশ চালানোর ক্ষেত্রে পুলিশের অনুমতি রয়েছে কি না- এ বিষয়ে জানতে চাইলে একাধিক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেননি। এমনকি শাহবাগ পুলিশের যে এলাকার অধীন সেই রমনা বিভাগের উপকমিশনার মারুফ হাসান সমাবেশের অনুমতি রয়েছে কি না জানাতে পারেননি। গত শনিবার বিকেলে তাঁর সঙ্গে কথা হলে তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমি নতুন যোগ দিয়েছি। অনুমতি নিয়েছে কি না আমি বলতে পারব না।'
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএমপির এক উপপুলিশ কমিশনার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আমার জানা মতে কোনো সমাবেশেরই অনুমতি নেয়নি গণজাগরণ মঞ্চ। তবে ব্যাক ডেটে অনুমতি নিয়েছে কি না সেটা আমার জানা নেই।'
গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরে সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। সেখানে সমাবেশের আগে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল কি না জানতে চাইলে মিরপুর বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) ইমতিয়াজ আহমেদ শনিবার রাতে কালের কণ্ঠকে বলেন, 'মিরপুরে গণজাগরণ মঞ্চের যে সমাবেশ হয়েছে তাতে পুলিশের অনুমতি নেওয়া হয়নি। আমার কাছে কোনো চিঠি আসেনি। সমাবেশ করতে হলে সাধারণভাবে পুলিশের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয়।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'ডিসি হিসেবে অনুমতি পাওয়া না পাওয়ার বিষয়টি আমার জানার কথা।'
গতকাল রবিবার উত্তরায় গণজাগরণ মঞ্চ সমাবেশ করেছে। জানতে চাইলে উত্তরা বিভাগের উপ কমিশনার নিশারুল আরিফ কালের কণ্ঠকে বলেন, 'তারা সমাবেশ করার অনুমতি নিয়েছে কি না আমার জানা নেই। এটি পুলিশ কমিশনারের অফিস থেকে হয়ে থাকে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'অনুমতির বিষয়ে আমি কোনো কাগজপত্র পাইনি।'
ক'দিন আগে যাত্রাবাড়ী এলাকায় সমাবেশ করেছে গণজাগরণ মঞ্চ। যাত্রাবাড়ী এলাকায় অনুমতি নিয়ে সমাবেশ করা হয়েছিল কি না জানতে চাইলে যাত্রাবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান কালের কণ্ঠকে জানান, 'লিখিত অনুমতি নিয়েই তারা সমাবেশ করেছে। তবে গণজাগরণ মঞ্চের কে অনুমতি চেয়েছিল তার নাম এ মুহূর্তে বলতে পারব না।' আবেদনের কপিটি কি পাওয়া যেতে পারে? ওসি বলেন, 'এগুলো সিক্রেট জিনিস, দেওয়া যাবে না।' আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'স্মারক নম্বর কত তা মনে নেই।'
স্মারকলিপি দিতে গিয়ে যা হলো : গত ২৫ ফেব্রুয়ারি মিরপুরের সমাবেশে আন্দোলনকারীরা আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তারের দাবিতে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকাল ৪টায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে স্মারকলিপি দেওয়ার ঘোষণা দেয়। এ কারণে ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সাংবাদিকরা ভিড় করতে থাকেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রীর কক্ষের সামনে। পৌনে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁর কার্যালয়ে ঢোকেন। এরপর তাঁর কক্ষে যান স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু। প্রতিনিধিদলটি কখন আসছে এ নিয়ে তখন সবার মাঝে ব্যস্ততা দেখা যায়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী চারতলা থেকে লিফটে নিচে নেমে যান। যাওয়ার সময় সাংবাদিকদের তাঁরা জানান, পিলখানায় অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন। স্মারকলিপি নিয়ে আন্দোলনকারীরা ৫টার পরে আসবেন। সে সময় সাংবাদিকদের অনেকে চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিছুক্ষণ পরই লিফটে ওপরে উঠে আসেন দুই মন্ত্রী। সাংবাদিকরা জানতে চাইলে তাঁরা জানান, আন্দোলনকারীরা এখনই স্মারকলিপি নিয়ে আসছেন। এরপর আবার শুরু হয় অপেক্ষা।
বিকাল ৪টা ৫৫ মিনিটে একটি গাড়িতে করে মন্ত্রণালয়ে যায় প্রতিনিধিদলটি। ডা. ইমরান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কক্ষে গিয়ে তাঁর হাতে স্মারকলিপি তুলে দেন। সে সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী স্মারকলিপি নিয়ে যাওয়া প্রতিনিধিদলকে অভিনন্দন জানান। মন্ত্রী বলেন, শাহবাগের আন্দোলনকারীরা যে দাবি করেছে তা যৌক্তিক। সে সময় তাঁর পাশে ছিলেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। ওইদিন গণজাগরণ মঞ্চের নেতারা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যে 'প্রটোকল' পেয়েছেন তা এ দেশের অন্য কোনো দল বা সংগঠনের নেতারা এখন পর্যন্ত পাননি।
সূত্র কপিপেস্ট