সাজ-সজ্জা, পোষাক পরিচ্ছেদ ইত্যাদি প্রতিটি মানুষের ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক।এর মাধ্যমে মানুষের রুচির পরিচয় মেলে।আমি মনে করি বেগম খালেদা জিয়া যে ধরনের সাজ-সজ্জা বা পোষাক পরিধান করে তা ব্যয়বহুল বটে কিন্তু তা কখনোই বে-মানান নয়। এবং আমি অনেক খালেদা-বিরোধী মানুষের নিকট তার রাজনৈতিক কর্মকান্ডের সমালোচোনা শুনলেও সাজ-সজ্জার প্রশংসা শুনেছি, কারন তার যে চেহারা এবং ব্যক্তিত্ব তার সাথে তা মানানসই।
তাছাড়া মানুষ জন্মগতভাবে নিজেকে সুন্দর দেখতে চায়।আমি আপনি আমরা সবাই নিজেদের সুন্দর দেখতে ভালোবাসি।এজন্যইতো আমরা প্রসাধনী সামগ্রী কিনি, নতুন জামা কাপড় কিনি, এসব পড়ি---তারপর যখন সবাই বা কেউ কেউ আমার বা আপনার সৌন্দর্যের প্রশংসা করে, তখন নিজের ভালো লাগে বা নিজের মধ্যে এক ধরনের আত্ববিশ্বাস অনুভব করি।
বেগম খালেদা জিয়া একজন জন্মগতভাবে সুন্দরী মহিলা,তিনি সেনাপ্রধানের স্ত্রী ছিলেন এবং তার এই দুই মৌলিক বিষয়ের কারনে ঐতিহ্যগতভাবে তিনি সাজসজ্জায় অভ্যস্থ। এখন একজন মানুষের স্বামী মারা গেছেন কিংবা তার বয়স ৬০ এর কোঠায় পৌঁছেছে,তাই বলে তার সাজার অধিকার নাই এটা দাবী করাটা অন্যায়।তাহলে তো আমদের আচরন ধর্মান্ধদের মতো হয়ে গেলো।
আমি মনে করি খালেদা জিয়া সাজতে পছন্দ করেন এটা তার দোষের কিছু না।একজন মানুষ বৃদ্ধ হয়ে গেছেন কিংবা তার স্বামী বিগত হয়েছেন বলে তাকে মাথায় কাপড় দিতে হবে বা সাদা শাড়ী পড়তে হবে এমন আইন করাটা মেয়েদের সামাজিকভাবে দমিয়ে রাখা ছাড়া আর কিছু নয়।
আর যেহেতু খালেদা জিয়া একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রী এবং তার অঢেল সম্পত্তি থাকাটা গোপনীয় কিছু নয়, তো তিনি যদি কমদামী সুতি শাড়ী পড়েও জনগনের সামনে আসেন আমি নিশ্চিত আপনারাই তখন বলবেন ভদ্রমহিলা লোক দেখানোর জন্য এমন লেবাস নিয়েছে।
আর ওনাকে যদি বাংগালী নারীদের আদর্শ ধরা হয় তবে উনি সাধারন সাজ সজ্জা করলে বা মাথা ঢেকে চললেই যে সমস্ত বাংগালী রমনীকুল তাকে অনুসরন করতে শুরু করবে তা ভাবাটা অলীক কল্পনা ছাড়া কিছু নয়।
আমার মনে আছে জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬-এর ইলেকশনের সময় হজ্ব করে এসে মাথায় হিজাব পড়া শুরু করেছিলো।কিন্তু প্রধানমন্ত্রী হবার কিছুদিনের মধ্যেই তার মাথার হিজাব উধাও হয়ে যায়।তখন বোঝা গিয়েছিলো তার হিজাবের মুল রহস্য।আসলে এমন করাটাও বুদ্ধিমতির কাজ নয়।
তাই আমার মনে হয় এক এক সময় এক এক ধরনের লেবাস বা সাজ সজ্জা না নিয়ে সবসময় তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ভালো।
ছোট্ট একটা স্মৃতিচারন করতে চাই, আমার বাবা-মা দু-জনেই বিগত হয়েছেন।কিন্তু আমার মনে আছে, আমার মা এবং বাবা দুজনেরই মাথার বেশ কিছু চুল পেকে গিয়েছিলো, তো আমার মা আমার বাবার মাথায় সব-সময় মেহেদী লাগিয়ে দিতো এবং নিজেও দিতো।মাঝে মাঝে মা মেহেদী না ব্যবহার করলে পাকা চুল বেড়িয়ে আসতো, তখন আমার বাবা রাগ করতো। আমার বাবা মারা যাবার পর আমার মা মেহেদী প্রায়ই ব্যবহার করতো না,তখন তার সাদা চুল বেড়িয়ে আসতো এবং তাকে দেখতে ম্রিয়মান দেখাতো।জিনিসটা আমি তার ছেলে হিসেবে আমার কাছে খারাপ লাগতো।আমি তখন তাকে জোর করতাম মেহেদী লাগানোর জন্য যাতে আমার মা বুড়িয়ে যাচ্ছে এমন না লাগে।
পরিশেষে বলতে চাই, খালেদা জিয়ার সমালোচনা করার মতো আরো শক্ত বিষয় থাকতে আমার বা আপনার মতো শিক্ষিত এবং আধুনিক রুচির মানুষ এই ধরনের একান্ত ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে সমালোচনা না করাই উত্তম। আর যদি করিই বা তাহলে চলুন আমরা ধর্মান্ধ বা শিক্ষার আলো যাদের মধ্যে কম তাদের কাতারে দাড়াই।তাহলে শুধু পোষাক না ব্যক্তিগত আরো অনেক বিষয় পাবো তাকে আক্রমন করার মতো।
আমি জানি এ লেখা নিয়ে বিতর্ক হবেই, তারপরও আমি-আপনি রোজ সকালে আয়নায় দাড়াবো, আয়নায় তাকিয়ে পছন্দ না হওয়া পর্যন্ত চুল আচড়াবো।সুন্দর জামা-কাপড় পড়বো এবং আয়না যদি বলে আমায় সুন্দর দেখাচ্ছে, মুচকি হাসবো। বুড়ো হলে, মাথায় কলপ দেবো বা মেহেদী দেবো।গায়ে আতর দেবো।এ সকল প্রচেষ্টাই নিজেকে সুন্দর দেখানোর জন্য। কারন কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন, একটি সুন্দর পোষাক একটি সুন্দর মনের জন্ম দেয়।
ধন্যবাদ।।
মইনুল হুদা,
উড গ্রীন, লন্ডন
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০০৮ সকাল ১০:২৯