somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লাল পাসপোর্ট

২১ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[ ব্লগার মানুষ-এর লাইফ ইন ইউ.কে-এর সুত্র ধরে আমার এ লেখা। লেখাটি এই কদিনের আমার লাইফ ইন ইউ-কের অভিজ্ঞতার আলোকে লেখা এবং ইনফরমেশন যথাসম্ভব শুদ্ধ এবং সত্য দেবার চেষ্টা করেছি। এখানে কিছু ঘটনা রয়েছে যা সত্য কিন্তু চরিত্রের নামগুলো সংগত কারনেই কাল্পনিক।- লেখক।]

ঘটনা-১

মনির হোসেন। বয়সঃ ৪০। ইউ,কে তে এসেছিলেন শাড়ী ভিসায়। শাড়ী ভিসা ইউ,কে গভর্মেন্টের ভিসার কোন অফিসিয়াল নাম না, এটা হলো ইউ,কে আগমনের একটা পরিচিত এবং সহয পদ্ধতির বাংলা নাম।এ ভিসা প্রাপ্তরা বউয়ের শাড়ীর আচল ধরে লন্ডনে আসেন তাই এই নামকরন। আমিও উনার সাথে পরিচিত হবার আগে জানতাম না এমন নামের বিষয়টা কিন্তু বাংগালীরা তো এমনিতেই নামের ব্যাপারে creative.

যা হোক মনির হোসেন তার লাল পাসপোর্টধারী মামাতো বোনকে বিয়ে করে আসেন লন্ডনে ৫ বছর আগে।লন্ডনের মাটিতে বড়ো হওয়া মামাতো বোন বাবা মা-র চাপে এবং নিজের অমতে বিয়ে করে মনিরকে।
তাদের ঘরে একটি মেয়েও হয় বিয়ের কিছুদিন পরে। মনির হোসেন ম্যাক ডোনাল্ডস্ -এ বার্গার বানান।কিন্তু বর্তমানে মনির হোসেন তার বউয়ের সাথে থাকেন না।তিনি থাকেন ব্যাচেলর মেসে।উনার কষ্টের উপার্জনের টাকা সব যায় তার স্ত্রীর ব্যাংকে তার মেয়ের এবং স্ত্রীর খোরপোষ হিসেবে। জানেন হয়তোবা এদেশে নারীর অধিকার বেশ। স্ত্রী-ই তাকে হাত খরচ দেন সপ্তাহে সপ্তাহে।শুনেছি তার স্ত্রীর নাকি বয়ফ্রেন্ডও আছে। তারপরও সব সই,শত হোক লন্ডন বলে কথা।

তবে এর বিপরীত ঘটনাও আছে। আমার এক বান্ধবী যার কিনা এদেশেই
জন্ম এবং বেড়ে ওঠা।সে তার বাবা-মা'র পছন্দে বিয়ে করে বাংলাদেশের এক ডাক্তারকে। তাকে এদেশে নিয়ে আসে এবং সে নিজে রাত দিন চাকুরী করে টাকা উপার্জন করে তার স্বামীকে এদেশে ডাক্তারী পড়ায়। লন্ডনে ডাক্তারী পড়া হচ্ছে ব্যয়বহুল পড়াশোনার মধ্যে একটি। একেই বলে ভাগ্য।

এ ভিসা পাবার উপায়ঃ
১. আপনি বাড়ী যদি সিলেট হয় তবে উপায়টা না হয় নাই বল্লাম।
২. আপনার বাড়ী যদি সিলেট না হয় কিন্তু আপনি যদি ভালো স্কলার হোন তবে ঘটকের মাধ্যমে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। আজকালকার সিলেটি বাবা মারা শুনেছি ভালো স্কলার পাত্র পেলে সিলেটের বাইরেও মেয়ের বা ছেলের বিয়ে দিয়ে থাকেন।
৩.ইন্টারনেট চ্যাটরুমে দেখুন কোন মেয়ে পটাতে পারেন কিনা।তাহলে বিষয়টি অনেক সহয হয়।

তবে আপনার ভাগ্যে কি মনির হোসেনের স্ত্রী জুটবে না আমার সেই বান্ধবী, তা একমাত্র খোদাই বলতে পারে।

ঘটনা-২

জাভেদ আজ ৫ বছর হলো লন্ডনে আছে ছাত্র ভিসায়। বাংলাদেশ থেকে সমাজ কল্যানে গ্রাজুয়েশন করে এসেছে। উচ্চশিক্ষার আশা নিয়েই এসেছিলো কিন্তু মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে একদিকে পড়া-লেখার প্রচুর খরচ অন্যদিকে বাংলাদেশে তার সংসার লন্ডনের উপার্জনের উপর নির্ভরশীল।এত চাপে এই ৫ বছরে সে পড়ালেখাই শুরু করতে পারলো না। অবশ্য সেই সাথে যোগ হয়েছিলো তার পাউন্ড উপার্জনের নেশা। যা হোক এই ৫ বছরে সে ৩ বার ভিসা এক্সটেনশন করেছে ভুয়া কলেজের সার্টিফিকেট দিয়ে কিন্তু কিছুদিন ধরে হলো সে টেনশনে ছিলো কারণ ই্‌উ,কে হোম অফিস ইদানীং নাকি ভুয়া ছাত্রদের ভিসা extention এর ব্যাপারে কড়াকড়ি করেছে।সে তার ৪র্থ বারের ভিসা extention নিয়ে খুব সন্দিহান ছিলো। শেষে তার মুসকিল আহ্সানে এগিয়ে আসে এক বড়ো ভাই। উনি তার জন্য একটি Post Graduate Diploma -র সার্টিফিকেট কিনে দেন যার জন্য জাভেদকে খরচ করতে হয় মাত্র ২০০০ পাউন্ড। ডিপ্লোমা সার্টিফিকেটটি যে কলেজ থেকে নেয়া সেটি ইউ,কে হোম অফিসের তালিকাভুক্ত এবং এ কলেজের সার্টিফিকেট দ্বারা যে কেউ ২বছরের post study work (শিক্ষা পরবর্তী কর্ম) এর অনুমতি নিতে পারে। জাবেদ ৫ বছরে একদিনও কোথাও ক্লাশ না করে লন্ডনের একটি ভালো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট কিনে ২ বছরের work permit manage করে ফেলে। এখন সে ২বছরের জন্য আপাতত পুরোপুরি চিন্তামুক্ত এবং সবাইকে সে বলে বেড়াচ্ছে সে নাকি গোপনে Post Graduate Diploma করেছে।

কিভাবে Post study work permit পাওয়া যায়ঃ

১. এ জন্য আপনাকে অবশ্যই British degree (masters or PGD) নিতে হবে। এবং আপনার পার্সপোর্ট ও সার্টিফিকেট হোম অফিসে পাঠিয়ে দিলে তারা ছোট্ট একটি investigation সাপেক্ষে আপনার পার্সপোর্ট পাঠিয়ে দেবে ২ বছরের work permit visa সহ।
২. যদি আপনি জেনুইন ছাত্র না হন তবে আপনাকে জাভেদের মতো একটি সার্টিফিকেট কিনতে হবে যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই ইউ,কে হোম অফিসের তালিকাভুক্ত হতে হবে।এমন একটি সার্টিফিকেট পেতে
হলে আপনাকে ২০০০ থেকে ২৫০০ পাউন্ডের মতো খরচ করতে হবে।

ঘটনা-৩

সাউদ সেলিম একটি Mc Donald's এর স্টোর ম্যানেজার। পাকিস্থানী। বয়সঃ ২৯ বছর। ৪ বছর আগে যখন সে এসেছিলো তখন সে ছিলো ছাত্র। Mc Donald's এ যোগ দিয়েছিলো ক্রু মেম্বার হিসেবে।তারপর সে ট্রেইনিং নিয়ে হয় শিফট্ ম্যানেজার। এরমধ্যে তার পরিচয় হয় অ্যাবেলিনার সাথে। অ্যাবেলিনা পোলিশ মেয়ে।বয়সঃ ২৪। এখানে কাজ করতে এসে তাদের পরিচয় হয়। পরিচয় থেকে প্রেম। তারা ২ বছর এক সাথে থাকার পর গত বছর বিয়ে করে। অ্যাবেলিনা ইউরোপিয়ান বিধায় তার রয়েছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের পার্সপোর্ট। এর ফলশ্রুতিতে সাউদও ই,সি পার্সপোর্ট পায় এবং সে লন্ডনে থাকা এবং ফুল টাইম কাজের সুযোগ পায়।

কিভাবে E.C Passport পাওয়া যায়ঃ

১. খুব সহয, E.C ভুক্ত যে কোন দেশের নাগরিক বিয়ে করে ফেলুন।
তারপর সেটেলম্যান্ট ভিসার আবেদন করে দিন। এক ধাক্কায় ৫বছরের ভিসা পেয়ে যাবেন। মজার ব্যাপার হচ্ছে আপনি যদি কোন ব্রিটিশ পার্সপোর্টভুক্ত কাউকে বিয়ে করেন তবে পাবেন ২ বছরের সেটেলম্যান্ট ভিসা।কিন্তু E.C ভুক্ত যে কোন দেশের নাগরিক বিয়ে করলে পাবেন এক্কেবারে ৫ বছেরর ভিসা। আজব না??

ঘটনা-৪

ত্বনী। বয়সঃ ২৮ বছর। লন্ডনে ছিলো ছাত্র ভিসায়।বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স করে এসেছে। এখানে একটি ভুয়া কলেজে ভর্তি হয়েছিলো ৩বছর ধরে আর সপ্তাহে ২০ ঘন্টার চাকুরী করার অনুমোদন থাকলেও বেশিরভাগ ছাত্রদের মতোই সে সপ্তাহে করতো ৪০-৪৫ ঘন্টা কাজ। এ নিয়ে থাকতে হতো সার্বক্ষনিক আতংকে। তো সে এক সলিসিটর ধরে HSMP (High Skilled Migrated Program) এর আওতায় ভিসা নিয়ে ফেললো। এখন সে রয়েল পোস্ট অফিসে ভালো বেতনের চাকুরী করে। ৪বছরের মধ্যেই সে লাল পার্সপোর্ট পেয়ে যাবে।

কিভাবে HSMP নেয়া যায়ঃ

১. এ ভিসার জন্য একজন আবেদনকারীর প্রয়োজন হবে মোট ৭৫ পয়েন্টের।
যদি বাংলাদেশ থেকে আপনি আবেদন করেন, তবে-
মাস্টার্স - ৩০ পয়েন্ট।
বয়স যদি ২৮ এর নীচে হয় তবে - ২০ পয়েন্ট।
২৮ থেকে ৩০ এর মধ্যে - ৫ পয়েন্ট।
৩০ বা তার উপর - ০ পয়েন্ট।

আর বাকি পয়েন্টের জন্য আপনাকে বাংলাদেশী টাকায় মাসে সর্বনিন্ম আয় ৭০ থেকে ৮০ হাজারের মতো দেখাতে হবে।

তবে আপনার মাস্টার্স যদি ইউকে থেকে করা থাকে, তবে আপনি শিক্ষার জন্য বাড়তি ৫ পয়েন্ট পাবেন। আর ইউ,কের মধ্যে আপনার বাৎসরিক আয় ২৫ থেকে ৩০ হাজার পাউন্ড দেখাতে হবে।

তবে এর মধ্যেও অনেক শুভংকরের ফাঁকি আছ। আশা করি অন্য একসময় জানাতে পারবো।

ধৈর্য্য ধরে এ বিশাল লেখা পড়ার জন্য ধন্যবাদ।

HSMP (High Skilled Migrated Program) এর আওতায় আপনার মোট পয়েন্ট জানতে নিন্মের এই ক্যালকুলেটরটি ব্যবহার করতে পারেনঃ
পয়েন্ট ক্যালকুলেটর

এছাড়া প্রয়োজনীয় তথ্যের জন্য ভিজিট করতে পারেনঃ
যুক্তরাজ্যের হোম অফিসের ওয়েবসাইট


মুহাম্মদ মইনুল হুদা
উডগ্রীন, লন্ডন















সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ২:৪৩
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ১০:৫০

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক: প্রভূ-ভৃত্য নয়, চাই সমতা ও ইনসাফভিত্তিক মৈত্রী

ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ছবিটি http://www.gettyimages.com থেকে সংগৃহিত।

ভারত ও বাংলাদেশের সম্পর্ক ইতিহাস, সংস্কৃতি ও ভৌগোলিক নৈকট্যের গভীর বন্ধনে আবদ্ধ। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ‘হয় পানি, না হয় তোমাদের রক্ত​এই নদীতেই প্রবাহিত হবে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১২:২০




কাশ্মীরের পহেলগামে ভয়াবহ হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। এ ঘটনায় সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে নয়াদিল্লি। এমনকি পাকিস্তানকে এক ফোঁটা পানিও দেয়া হবে না বলে হুঁশিয়ারি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বাঁধলে বাংলাদেশের কি করণীয় ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ২:১৬


কাশ্মীর নিয়ে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার উত্তেজনা বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ নাগরিক মুসলিম হওয়ায় এবং ভারত বিদ্বেষী(যৌক্তিক কারণ আছে) হওয়ায় এই ঘটনাকে সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে মুসলিমদের উপর নির্যাতন থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউসুফ সরকার

লিখেছেন তানভীর রাতুল, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৫:২৭

নৈতিকতা এবং নীতিবোধ কখনোই আইনের মুখে পরিবর্তিত হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া উচিত নয়”)।

নৈতিকতা ও নীতিবোধ কখনোই সহিংসতা বা আইনী চাপের মুখে বদল হয় না (দুঃখিত, বলা উচিত “হওয়া... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাক-ভারত যুদ্ধ হলে তৃতীয় পক্ষ লাভবান হতে পারে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:২৭



সাবেক ভারত শাসক মোগলরা না থাকলেও আফগানরা তো আছেই। পাক-ভারত যুদ্ধে উভয়পক্ষ ক্লান্ত হলে আফগানরা তাদের বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেই পারে।তখন আবার দিল্লির মসনদে তাদেরকে দেখা যেতে পারে। আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×