আগের পর্বের লিঙ্ক
পরবাসে বড়বেলা-১ (১৮ পিলাচ ; দোজো,জিগি জিগি আর শালসার গল্প)
মাকি- আইভরিয়ানদের খুব প্রিয় একটি জায়গা হচ্ছে ‘মাকি’ (ফ্রেঞ্চ maquis) বা ছোট ছোট বার । রাস্তায় পথ চলতে গেলেই এই ধরনের বার অহরহ চোখে পড়ে। সস্তায় গলা ভেজানো আর আড্ডাবাজি করার জন্য একেবারে আদর্শ জায়গা আর কি। অনেকটা আমাদের দেশের টি স্টলে বসে চায়ের কাপে ঝড় তোলার মত।
তো, এইসব মাকি গুলোর সামনে সাধারণত বারান্দার মত ছাদ বা চালা দেওয়া এক চিলতে জায়গা থাকে। মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বসে বিয়ার এবং সুরাপানের অপূর্ব সুযোগ আর কি। পানীয় ছাড়াও টুকিটাকি বিভিন্ন রকম স্ন্যাক্সও পাওয়া যায় এখানে।
সন্ধ্যার পরপরই মাকিগুলো চেহারা পালটে ফেলে। যে সব জায়গায় নাইট ক্লাব নাই, ওই খানের লোকজন যাতে দুধের স্বাদ ঘোলে মিটাতে পারে এইজন্য বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে মাকিগুলো নৈশ প্রস্তুতি গ্রহন করে। একেবারে নাচে গানে ভরপুর অবস্থা আর কি।
কিছু কিছু মাকিতে পানীয় পরিবেশনের জন্য সুন্দরী ‘সাকী’ ভাড়া করে আনা হয় । আর এর সাথে লাল নীল বিভিন্ন ধরনের লাইটিং এর সাথে চলতে থাকে কান ফাটানো শব্দের মিউজিক। সব মিলিয়ে বেশ একটা জমজমাট ভাব। সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে তাই সন্ধ্যার পর মাকিতে বসে এক গ্লাস ঠাণ্ডা বিয়ার না খেলে কি আর চলে ?
পাউরুটি- পাউরুটি বলতে আমরা যা বুঝি তার কল্পনার সীমা ছাড়িয়ে আরও একটু দূরে গেলে আইভরিয়ান পাউরুটির স্বরূপ উদঘাটন কর যাবে । এইগুলা একেবারে প্রমাণ সাইজের,প্রায় দেড় দুইহাত লম্বা,ভুট্টার আটা দিয়ে তৈরি আর খেতেও বেশ সুস্বাদু । লাঞ্চের সময় এরকম একটা পাউরুটি দিয়ে চার পাঁচজন বাঙালি অনায়াসে উদরপূর্তি করতে পারবে।
এগুলো সাধারণত বাজারে ছোট ছোট দোকানে অথবা ঝাকায় নিয়ে ফেরী করে বিক্রি করা হয় । ফেরিওয়ালাদের মাথার ওপর বিশাল ঝাঁকা, আর বিশাল ঝাঁকার মাঝখান থেকে উকি দিচ্ছে বিশাল লম্বা পাউরুটি । এটা এখানকার সকাল বা দুপুরের রেগুলার দৃশ্য ।
পিচ্চিদের ইজি চেয়ার- সন্তানের প্রতি মায়ের ভালবাসা বোধকরি সবখানে একই রকম । আইভরিয়ান মেয়েদের জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন কাজ করতে হয় ।সংসারের সিংহভাগ কাজ মেয়েরাই করে। ঘর গৃহস্থালির কাজ হোক,বাজারে বা দোকানে যাওয়া হোক আর অন্য কোথাও যাওয়া হোক না কেন; মা কিন্তু তার সন্তানকে কাছ ছাড়া করে না ।
অদ্ভুত এক উপায়ে পিঠের সাথে বেঁধে রাখে সবসময় । আর পিচ্চিগুলো মায়ের পিঠের সাথে বাঁধা কাপড়ে ইজি চেয়ারে বসার মত করে ঝুলন্ত অবস্থায় ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে থাকে। দেখতে দারুন লাগে পিচ্চগুলোকে।
আর একটা ব্যাপার হচ্ছে যে এখানকার পিচ্চিগুলো কান্নাকাটি বোধহয় খুব কম করে,আমাদের দেশের বাচ্চাদের মত ছিচকাদুনে নয় । কারণ রাস্তায় চলতে ফিরতে কখনো কোন আন্ডা বাচ্চাকে এখন পর্যন্ত কাঁদতে দেখিনি ।
(চলবে)