somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে নাড়া দিয়ে গেছে যে দুটি ঘটনা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১১ রাত ৮:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জীবনে ঘটে যাওয়া দুটো ঘটনা শেয়ার করার জন্যই আজকে লিখতে বসা। আমাকে যারা ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন,তারা হয়ত একটু অবাক হবেন লেখাটা পড়ে। সব সময় হাসিখুশি থাকার জন্য একটু সুনাম এবং সব ব্যাপারেই ইয়ার্কি করার জন্য আমার একটু বদনাম আছে বন্ধুমহলে। আমার কাছ থেকে এই ধরনের সিরিয়াস টাইপ এর লেখা বোধহয় জুতসই হচ্ছে না। কিন্তু দুটি ঘটনা আমাকে এমন ভাবে নাড়া দিয়ে গেছে যে,আমি তা সবার সাথে শেয়ার করার লোভ সম্বরণ করতে পারলাম না।
ঘটনা-১
সময়টা ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস হবে। আমার পোস্টিং তখন যশোর এ। একদিন আমি যশোর থেকে পটুয়াখালী তে যাচ্ছি সরকারি কাজে,সরকারি গাড়িতে। যারা ওইদিকে যাতায়াত করে অভ্যস্ত তারা জানেন যে পথে মোট চারটি ফেরি পার হতে হয়।দুই নাম্বার ফেরি পার হচ্ছি,গাড়িতে বসে দুচোখ ভরে নদীর পড়ন্ত যৌবন দেখছি।হঠাৎ করেই এক জন কলেজ পড়ুয়া টাইপ এর ছেলে আমার পাশে এসে দাঁড়াল,মনে হল সে কিছু একটা বলতে চায়।তার সাথে কথা বলে জানতে পারলাম যে তার মা ওইদিন মারা গেছেন।আসর এর নামাজের পর জানাজা পড়া হবে।এখন সমস্যা হচ্ছে যে লোকাল বাস এ গেলে সন্ধ্যার আগে পৌঁছানো সম্ভব না।সেক্ষেত্রে তার পক্ষে মায়ের জানাজা বা দাফন কোনটাই করা সম্ভব হবে না।আমাকে সে অনুরোধ করল তাকে একটা লিফট দিতে,তাহলে হয়ত সময় মত পৌঁছানো সম্ভব হবে।তার গন্তব্য আমার যাবার পথেই পড়বে। আমি তাকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে তুলে নিলাম,তাকে তার গন্তব্য যখন পৌঁছে দিয়েছিলাম তখনও আসর এর আযান হয়নি।সে আমাকে ধন্যবাদ দিতে চাইলে তাকে বললাম সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি যাবার জন্য।কারণ ধন্যবাদ পাওয়ার মত কিছুই আমি করিনি,যে কেউ ই এই ধরনের সাহায্য করত।তাকে বিদায় দিয়ে আমি রওনা হলাম আমার পথে।
ঘটনা-২
উপরের ঘটনা আমার জীবনের একটি অতি সাধারণ ঘটনায় পরিণত হত যদি আরেকটি ঘটনা না ঘটত।২০০৯ সালের ৩০ অক্টোবর ফজর এর আযান এর একটু পর আমার কাছে একটি ফোন কল আসে।আমাকে জানান হল যে আমার দাদা একটু আগে মারা গেছেন। আমি এক রকম দিশেহারা হয়ে গেলাম।আমার দাদা দাদি আমাদের সাথেই থাকেন।যে কারণে অনেক আদর পেয়েছি তার কাছ থেকে।মৃত্যু শক কাটানোর আগেই আরেক চিন্তায় অস্থির হয়ে গেলাম।দাদার যানাযা হবে বাদ আছর।আমি থাকি খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গাতে।সকাল নয়টার আগে ঢাকা যাবার কোন বাস নাই।ঢাকা যেতে বাজবে ৪/৫ টা।আমাকে যেতে হবে টাঙ্গাইল।তার মানে কোন ভাবেই সন্ধ্যার আগে টাঙ্গাইল এ পৌঁছানো সম্ভব না।

এরকম সাত পাচ চিন্তা করতে করতে সিদ্ধান্ত নিলাম যে অন্তত চেষ্টা করে দেখি রাস্তায় যদি কোন লোকাল বাস পাওয়া যায়।একটা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে বের হয়ে হাটা শুরু করলাম ঢাকা-খাগড়াছড়ি রাস্তার দিকে।আমাকে ওইদিকে যেতে দেখে সাথে আরও দুই তিন জন সহকর্মী সাথে এলো।রাস্তায় দাড়িয়ে অপেক্ষা করছি,বুঝতে পারছি আশা খুব কম।কারণ পাহাড়ি এলাকায় এত সকালে বাস পাওয়া প্রায় অসম্ভব একটা ব্যাপার।আমাকে অবাক করে দিয়ে মিনিট পাঁচেকের মধ্যে একটা সাদা প্রাইভেট কার দেখলাম যেটি আমাদের দিকেই আসছে।গাড়ি থামিয়ে জানা গেল গাড়ির মালিক একজন ইঞ্জিনিয়ার,সাইট দেখতে এসেছিলেন গতকাল,এখন ঢাকা ফেরত যাচ্ছেন।গাড়িতে অন্য কোন যাত্রী না থাকায় উনি আমকে ঢাকা পর্যন্ত পৌঁছে দেয়ার প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করলেন।আমি এই অপ্রত্যাশিত সাহায্য পেয়ে মনে মনে আল্লাহ কে ধন্যবাদ দিয়ে তার গাড়ীতে উঠে বসলাম।যদি ঢাকা তে দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যাই তাহলে হয়ত জানাজা পড়তে পারব।এরকম সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে ভদ্রলোকের সাথে টুকটাক কথা বলতে বলতে যাচ্ছি।এমন সময় আমার সেল ফোনে একটা কল এলো।আমার এক ভাই,উনি অফিসের কাজ এ চিটাগাং এসেছিলেন গতকাল এখন মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তড়িঘড়ি করে টাংগাইল যাচ্ছেন।আমি উনার সাথে কথা বলে বুঝলাম যে যখন উনি ঢাকা চিটাগাং রাস্তা ধরে যখন কুমিল্লা তে পৌঁছবেন প্রায় একই সময়ে আমি রামগড়-ফেনী রোড ধরে কুমিল্লা তে পৌঁছে যাব। তাকে অনুরোধ করলাম কুমিল্লা থেকে আমাকে পিক করার জন্য।যেহেতু উনি প্রাইভেট কার নিয়ে সরাসরি টাঙ্গাইল যাচ্ছেন,তার সঙ্গী হতে পারলে সময় অনেক বাঁচবে উপরন্তু ঢাকা গিয়ে গাড়ী ভাড়া করা বা বাস ধরার ঝামেলায় পড়তে হবেনা।কথা মত কুমিল্লা তে ইঞ্জিনিয়ার ভদ্রলোক আমাকে নামিয়ে দিলেন।তাকে অনেক ধন্যবাদ দিয়ে ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম।মিনিট দশেকের মধ্যে ভাইয়া চলে এলেন।এবার তার যাত্রা সঙ্গী হলাম।রাস্তায় ট্রাফিক জাম এর জন্য সময় নষ্ট হলেই উৎকণ্ঠিত হয়ে
পড়ছিলাম…দাদাকে বোধহয় আর শেষ দেখা দেখতে পারলাম না।লম্বা রাস্তা পেরিয়ে যখন টাঙ্গাইল শহর এর কাছে পৌঁছলাম তখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল।সরাসরি গোরস্থান মসজিদে যাওয়া ঠিক করলাম।যখন গোরস্থান মসজিদ এর কাছে পৌঁছলাম তখন শুনতে পেলাম আসর এর আযান হচ্ছে…আমি অজু করে নামাজ পরলাম।জানাজা শেষ করে দাদা কে কবর এ শুইয়ে দিলাম।কেন জানি এক বছর আগের অই ঘটনাটি খুব মনে পরছিল ওই সময়টাতে…
৭টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এনসিপিকে আমাদের দেশের তরুণ-যুবা'রা ক্ষমতায় দেখতে চায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ১২:৪৫

আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধে পাড়া-মহল্লায় জনতার আদালত গঠনের ডাক দিয়েছে জাতীয় নাগরিক পার্টি তথা এনসিপি। দেশের বৃহত্তম ইসলামী দল 'ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ' তথা চর মোনাইয়ের পীর সাহেবের দল এনসিপিকে আগে থেকেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

মাতৃ ভাণ্ডার

লিখেছেন ঠাকুরমাহমুদ, ০৩ রা মে, ২০২৫ রাত ৩:২৬



আমাদের দেশে মিষ্টি পছন্দ করেন না এমন মানুষ পাওয়া বিরল ব্যাপার। ঢাকা চট্টগ্রাম রুটে যারা যাতায়াত করেন মাতৃ ভাণ্ডারের সাথে পরিচিত নন এমন মানুষও মনে হয় খুব বেশি নেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

এনসিপি জামায়াতের শাখা, এই ভুল ধারণা ত্যাগ করতে হবে

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ০৩ রা মে, ২০২৫ সকাল ১০:৪৪

প্রিয় রাজীব ভাই,
আপনি আমার আগের পোস্টে কমেন্ট করেছেন যে, এনসিপি জামায়াতের শাখা। আপনার এনালাইসিস ভুল! ওরা জামায়াতের শাখা নয়। এনসিপি-কে বুঝতে হলে, আপনাকে জামায়াতকে জানতে হবে। আমি একটু বিস্তারিত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৩ রা মে, ২০২৫ বিকাল ৪:২৪

পাশ্চাত্যের তথাকথিত নারীবাদ বনাম ইসলাম: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একটি সংক্ষিপ্ত বিশ্লেষণ

ছবি কৃতজ্ঞতা এআই।

ভূমিকা

নারীর অধিকার নিয়ে আলোচনা ইতিহাসের এক দীর্ঘ অধ্যায়। পাশ্চাত্যে নারী আন্দোলন শুরু হয় ১৮শ শতকের শেষভাগে, যার ফলশ্রুতিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি স্মার্ট জাতির অন্তঃসারশূন্য আত্মজৈবনিক !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা মে, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৩৪


একটা সময় ছিল, যখন জাতির ভবিষ্যৎ বলতে বোঝানো হতো এমন এক শ্রেণিকে, যারা বই পড়ে, প্রশ্ন তোলে, বিতর্কে অংশ নেয়, আর চিন্তা করে। এখন জাতির ভবিষ্যৎ মানে—ইনফ্লুয়েন্সার। তারা সকাল ১০টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×