বাংলা বই না পড়লে কোনদিন জানতেও পারতাম না এদেশ ষড়ঋতুর দেশ। প্রতি ঋতুর ভাগে দু মাস। মাস গুলো এবং ঋতুর নামের বানান, উচ্চারন তেমনি কঠিন। গ্রীসমো নয় উচ্চারণ গ্রীশশো। কোন দু মাস মিলে কোন ঋতু সে মনে রাখাও কষ্ট। বাংলা উচ্চারণে যে ঝামেলা আছে তা সশব্দে পড়তে গিয়ে টের পেলাম।
একদিন চেঁচিয়ে পড়ছিলাম ব্রকখপুত্র, ব্রকখপুত্র। শুনে আমার পিতামহ পাশের রুম থেকে এসে বললেন ব্রকখপুত্র নয় এতা ব্রমহপুত্র।
হেমন্ত আর বসন্তের বর্ননা পড়লে মন ভাল হয়ে যেত। নবান্ন যে কোন মাসের পরে সে মনে নাই কিন্তু সেটা বিশেষ সময় তা বুঝেছিলাম। ফসল আসছে, উতসব হচ্ছে, পিঠা হচ্ছে-রমরমা ব্যাপার। এই রকম একবার ধান কাটার শেষদিকে গ্রামের বাড়ি গেলাম। ক্ষেতে ধান গাছ নেই, শুধু মাটির সাথে এক মুঠো বাদামী খড় স্মৃতি চিহ্ন হিসেবে রয়ে গেছে। দূর দূর পর্যন্ত ক্ষেত গুলোর একই চেহারা। ন্যাড়া হবার পর সদ্য চুল গজালে যেমন দেখায় চিত্রটা অনেকটা সে রকমই। সন্ধ্যা নামার আগে সেখানে কুয়াশা জমত, ভোরে শিশির ঝরত। এক দিন দেখি সমবয়সী প্রতিবেশি এবং ভ্রাতা ভগ্নিরা পাত্র আর শাবল হাতে সেই সব ক্ষেতের দিকে চলেছে। জিজ্ঞেস করলাম ক্ষেতে গিয়ে কি হবে। উত্তর পেলাম ধান সংগ্রহ অভিযান। শুনে বুঝার ভাণ করলেও আসলে পড়েছিলাম আকাশ থেকে। দেখা যাচ্ছে চারিদিক শুণ্য ধানভুমি, এর মধ্যে কোথায় ধান পাবে ভাবতে লাগলাম। ক্ষেতের এদিক সেদিক বিশেশ কোড়ে আঈলেড় চাড়োপাষ শোবাঈ কী যেন খুঁজতে লাগল। ছোট গর্ত পেলেই খুন্তি বা কাঠি দিয়ে খুঁচিয়ে ভেতর থেকে ধান বের করছে। অবাক হলাম এক গর্তে এত ধান লুকানো দেখে। ব্যাপারটা বেশ আয়ডভেঞ্চারাস। গুপ্তধন উদ্ধারের মত ব্যাপার আছে। এখানে ধান চোর হল ইঁদুর। মজা পেয়ে গেলাম। আমিও আমার মত ঝুড়ি নিয়ে, কাঠি দিয়ে সম্পদ উদ্ধার অভিযান চালাতে লাগলাম। বেশ ভালো পরিমানেই ধান উদ্ধার করলাম।
বাড়ী ফিরে সবাইকে হূঁশিয়ার করে দিলাম আমার ধান যেন আলাদা ভাবে চিহ্নিত করা হয়। সেই ধান থেকে চাল করে গুড়ো করে পিঠা। তারা আশ্বাস দিলেন কিন্তু বাস্তবে হলনা।
বুঝলাম নিজের অর্জন সৃষ্টি আলাদা করে দেখতে চাওয়ার বৈশিষ্ট মানুষের চিরন্তন।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ১০:২২