বাড়ির উত্তরে দিকে বাঁশের ঝাড়, সুপারি গাছ, চালতা,কাঠাল আর মেহগনি মিলে বেশ বন বন ভাব ছিল। সন্ধ্যার পর পর বাড়ির ঐ অংশটুকু তে যেন রাত নামত। পুকুর পারের কল তলার উপর যদিও ষাট ওয়াটের হলদে আলোর ফিলিপ্স বাতি জলত তবু সন্ধ্যায় একা একা সেখানে হাত মুখ ধুতে যেতেও ভয় লাগত। সেই অল্প আলো গাছ গাছালির ছায়া প্রচ্ছায়া তৈরি করে আরো বেশি রহস্যময় আর ভীতিকর করে তুলত।আরেকটা ব্যাপার ছিল, ওখানে দাঁড়ালেই ওপারের তাল গাছটা নজরে আসত। ভৌতিক গল্প কাহিনীর বেশির ভাগই তাল গাছ নিয়ে বলেই ভয়টা লাগত বেশি।
এক একা তাই কল তলায় যেতে পারতাম না। হাত মুখ ধুয়ে ফিরতে গেলেই মনে হত এই বুঝি কেউ এসে ঘাড় মটকে দিচ্ছে। গ্রামাঞ্চলে বড় ও ছোট বাহির নামে দুটো শব্দ ছিল। ঘুমানোর আগে বাচ্চাদের ছোট বাহির থেকে ঘুরে আসতে বলা হত। কিন্তু একা যাবে এমন বুকের পাটা কার। তাই বয়স্ক সঙ্গীর উপস্থিতি নিশ্চিত করে নিতে হত।
রাতে খাবারের পর্ব শেষ হলে,দক্ষিন মুখী দরজার মুখে পাটি বিছানো হত। দাদীর মাথা জ্বলা রোগ ছিল। তার মনে হত মাথার তালু সব সময় গরম হয়ে আছে। ডাক্তাররা অনেক পরীক্ষা নীরিক্ষার পর মানসিক সমস্যা বলে রায় দিলেন। দক্ষিনা বাতাস লাগলে ঘুম ভালো হয় তাই শোবার এই বিচিত্র আয়োজন। আমরা ছোট ছোট নাতি নাতনীরা তাকে ঘিরে শুয়ে পড়েছি। চাঁদ সদাগর কিংবা রহিম রুপ ভানের কাহিনী শুনতাম। ঘুরে ফিরে অল্প কিছু গল্পই তার জানা ছিল। তবুও শুনতে শুনতে ধীরে সেই কাহিনী কল্পনায় ফুটে উঠতে উঠতে এক সময় নিজেও ঢুকে পড়তাম কাহিনীর মধ্যে।
হাত পাখাটা ঘুরত হালকা ক্যঁচ ক্যঁচ শব্দ করে। সেই সাথে অচেনা পোকাদের উল্লাসের চিৎকার। বাদামী রঙয়ের কুকুরটা গুটি সুটি মেরে উঠানের কোনে পড়ে থাকত।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ রাত ৯:৫৬