কিছুদিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন বড় ভাইয়ের কাছে গিয়েছিলাম আমার একটা কাজে, কাজের অংশ হিসেবে আরেকজন এর সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। ওনার মুখে দাঁড়ি, টাখনুর উপরে প্যান্ট পরে আছেন, কথায় কথায় মাশাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, জাজাকাল্লাহ্ খায়রান, কপালে নামাজ পড়ে একদম কালো দাগ ফেলে দিয়েছেন, তারপর সারাদিন আমরা একসঙ্গে ছিলাম। যেখানেই আজান হয় তাড়াতাড়ি করে নেমে ওজু করে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়েন। সাথে আরও দু'জন যুক্ত হয়েছেন ওনাদের আলহামদুলিল্লাহ একই অবস্থা!
একটুও পর ওনি আমাকে বললো ওনার একটা ছেলে প্রাইভেট মেডিক্যালে পড়াশোনা করছে, আরেকটা ছেলে ইংরেজি মিডিয়ামে পড়ছে, দেশে অনেক বেশি দূর্নীতি ঘুষ এজন্য ওনার ছেলে কানাডার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্ডারগ্রেড পর্যায়ে পাঠিয়েছেন সেল্ফ ফন্ডে পড়াশোনা করতে যেটার খরচ বছরে ২০ হাজার ক্যানেডিয়ান ডলার। ওনার বেতন সবমিলিয়ে ৪০/৪২ হাজার।
বেশিরভাগ ঘুষখুখোর লোকজন ঘুষ খাওয়ার কারনে সম্পদের পাহাড় গড়তে পারেন এজন্য পরিবার পরিজন নিয়ে খুব রাজকীয় জীবনযাপন করতে পারেন, সন্তানসন্ততি কোন অভাব অনটন দেখে না, পর্যাপ্ত পুষ্টি সরবরাহ পায় এজন্য শারীরিক মানসিক এবং বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে অন্য বাচ্চাদের থেকে এগিয়ে থাকে, সুন্দর একটা শৈশব পায়। ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করার সুযোগ পায়। ভবিষ্যতে ভালো ক্যারিয়ার গড়ায় কোন অসুবিধা হয় না, ইচ্ছে হলে দেশে থাকতে পারে কিংবা ইয়োরোপ-আম্রিকায় চলে যেতে পারে। একটা গরিব-নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান যেখানে তিনবেলা পেটোর চিন্তা করতে হয় সেখানে ঘুষখোর এবং লুটেরা-দূর্নীতবাজের সন্তানরা ক্যারিয়ার,রিসার্চ এবং অন্যান্য এক্সট্রাকারিকুলার এক্টিভিটিজে নিজেকে নিয়োজিত রাখতে পারে। পড়াশোনা শেষ করে গরিব-নিম্মধ্যবিত্ত পরিবারের একটা ছেলে পাহাড়সম চাপ নিয়ে চাকরির প্রস্তুতি নিতে তখন ঘুষখোরদের সন্তানরা জান্নাতের বাগানে থেকে চাকরির বাকরির প্রস্তুতি নেয় রিলাক্সে।
ঘুষখোর, জুলুমবাজ একজন মানুষের সম্পদের পাহাড় থাকে এজন্য ওনারা তাদের আত্নীয়স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে সাহায্যে সহযোগিতা করতে পারেন এজন্য সবাই ওনাদেরকে ভালো বলেন, প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে। সমাজে দাম পান, আত্নীয়দের কাছেও দাম পান ভালো-দানবীর একজন মানুষ হিসেবে।
মসজিদ-মাদ্রাসা-মন্দিরে প্রচুর দান খয়রাত করতে পারে এজন্য মসজিদ মাদ্রাসার সভাপতির আসনগ্রন করেন সবসময় সম্মানের সঙ্গে, ওয়াজ মাহফিলের প্রধান অতিথির আসন গ্রহন করেন। সমাজে সবাই অত্যান্ত ধার্মিক এবং পরহেজগার মানুষ হিসেবে জানেন। নামজে সামনের কাতারে দাঁড়াতে পারেন, সবাই সম্মানে ওনার জন্য জায়গা রেখে দেন। নামাজ পড়ে কপালে কালো দাগ ফেলে দেন, এজন্য সবাই খুব নামাজি হিসেবেই জানেন। বছর বছর হজ্জে গিয়ে হজ্জ করেন, জাকাত ফেতরা দিতে পারেন।
কোথাও একজন দূর্নীতিবাজ, ঘুষখোর, লুটেরার আটকায় না, সব জায়গায় সন্মান আর সন্মান। পৃথিবীতে জান্নাতের সমান সুখ,শান্তি পেয়ে থাকেন। কেউ ওনাকে ঘুষখোর, সুদখোর, লুটেরা, দূর্নীতিবাজ বলে গালি দেন না, কোথাও ওনাকে ভৎসনা শুনতে হয়না।
লাখ লাখ মানুষের হক্ক নষ্ট করলো, লাখো মানুষের সম্পদ মেরে খেলো, আরেকজনের নায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করলো, হয়তো একজন মায়ের চিকিৎসা খরচের টাকা কোন ঘুষখোরকে দিয়ে দিতে হলো, হাজার হাজার মানুষের সঙ্গে অন্যায় আচরন করলো, অধিকার হরন করলো, আরেকজনের অধিকার ধূলিস্যাৎ করে নিজে সম্পদের পাহাড় গড়লো কিন্তু সবাই জানলো একজন নামাজি, হজী, জাকাত প্রদানকারী, দানবীর, ধার্মিক মানুষ হিসেবে! কে তার বিচার করবে? ন্যায় বিচার হতো যদি এই দুনিয়াতে সবার সামনে বিচার পেতো, নির্মম বিচারের সম্মুখীন হতে হতো! কেয়ামত সে তো অনেক দূরের ব্যপার! তবুও আশা করি হয়তো মৃত্যুর পর উপরওয়ালা ওনার কঠিন বিচার করবে!
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:১৩