somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হুমায়ুন আজাদঃ ছিলেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে শক্তিশালী এবং সাহসী লেখক

১২ ই আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ছোটবেলা থেকেই পায়ুসৈনিকদের বিভিন্ন ধর্মীয় নৈশ সার্কাস পার্টিগুলোতে হুমায়ুন আজাদ সম্পর্কে প্রচুর কুৎসা শুনতে শুনতে বড় হয়েছি, কারণ হিসেবে ঐসব অনুর্বর মস্তিষ্কের ভাঁড়গুলো ব্যাখ্যা করতো উনি যৌনতা, নারী, ধর্ম, এবং ধর্মান্ধ ছাগুদের নিয়ে লেখতেন এজন্য নিন্দনীয়। কিন্তু কখনোই ওনাকে সরাসরি পড়ার সুযোগ হয়নি, তাই সবসময়ই ওনাকে একজন খারাপ লোক হিসেবেই জানতাম। এমনকি আমি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠদানে অযোগ্য, স্থুল মস্তিষ্কের যেসব নিম্নরুচিসম্পন্ন এবং অশিক্ষিত শিক্ষকদের পেয়েছি যারা কিনা সর্বোচ্চ গ্রামের কোন ফোরকানিয়া মাদ্রাসার শিক্ষক হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখেন, তারাও দেখতাম হুমায়ুন আজাদকে নিয়ে প্রচুর সমালোচনা করতো।

এই বিখ্যাত "খারাপ" লোকটাকে প্রথম জানার সুযোগ হয় ওনার বিখ্যাত গ্রন্থ "নারী" পাঠের মাধ্যমে, তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং করার জন্য ঢাকায় আসছি, আমার পাশের রুমেই থাকতো বন্ধু মাহাথির মোহাম্মদ, ও দেখতাম প্রচুর বই পড়তো, তখন ওর কাছ থেকে আনু মোহাম্মদ স্যারের কয়েকটা বই নিয়ে পড়েছি আর আমার পড়ার আগ্রহ দেখে একদিন নারী পড়তে দিলো। এভাবেই শুরু হয় ওনার প্রতি ভালোবাসা, ভালোলাগা এবং মুগ্ধতা। এই বইটা পড়ার পর ওনার প্রতি প্রচন্ড রকমের মুগ্ধতা কাজ করা শুরু হয়। এর পর যে বইটা পড়ার সুযোগ হয় সেটা হলো "মাতাল তরনী" এই বইটি পড়ার পর তো আমার চিন্তার জগৎ অনেকটুকুই বদলে যায়। আস্তে আস্তে সবকিছু বুঝতে শিখি, কেন ওনাকে নিয়ে ধর্মান্ধ জঙ্গিগুলোর এতো ভীতি। তারপর এক এক করে ওনার প্রায় সমস্ত বই' ই একাধিক বার করে পড়ার সৌভাগ্য হয়।

বাংলা সাহিত্যে ওনার মতো এতটা স্পষ্টবাদী আর কেউ ছিলেন না। ওনি যেভাবে ধর্মান্ধ জঙ্গিগুষ্টি এবং সর্বশক্তিমান ক্ষমতসীনদের রক্তচক্ষুর উপেক্ষা করে সত্য উচ্চারণ করে গেছেন, এভাবে আর কেউ বলেননি। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের এই পবিত্র উপত্যকা জুড়ে যেখানে সকাল থেকে সন্ধা অবধি মরুভূমি, উট, খুর্মা খেজুর, প্রাগৈতিহাসিকতা এবং আদিমতার স্তুতি ও শ্লোক গাওয়া হয়, সেখানে কেউ যুক্তি আর মুক্তচিন্তার আলো হাতে এগিয়ে আসলে তার জন্য এই বঙ্গস্থানে সবসময়ই আসমানী চাপাতি প্রস্তুত থাকে! ২০০৪ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারী এমনিই আসমানী রামদা আর চাপাতির আঘাতে গুরুতর আহত হয়ে জার্মানিতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছিলেন, সুস্থও হয়েছিলেনও বটে কিন্তু ঐবছরেরই ১২ আগস্ট নিজ ফ্ল্যাটে হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান, বাংলা সাহিত্যে হারায় তার সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রকে।

তাঁর ভাষার প্রয়োগ, উপমার ব্যবহার একেবারেই আলাদা, মনস্বিতার দ্যুতিতে প্রোজ্জ্বল। তার মতো এতটা শক্তিশালী ভাষা কেউ ব্যবহার করেন নি, আততায়ীর চাপাতির বিরুদ্ধে ওনার কলম সবসময়ই মহাবিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। শব্দের আঘাতে ধর্মান্ধ ছাগুদের বুক কেঁপে ওঠেছে বারবার। স্বরবর্ণ আর ব্যাঞ্জনবর্ণের শৈল্পিক ব্যবহারে তৈরি হয়েছে বাংলা সাহিত্যের অসংখ্য কালজয়ী সব উপাখ্যান, যেগুলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে যাবে হাজার হাজার বছর ধরে।

ওনার প্রতিটা লেখাই আমার প্রিয়, এর মধ্যে খুবই প্রিয় ওনার কিছু লাইন......
“ আমি জানি ,ভালো করেই জানি, কিছু অপেক্ষা করে নেই আমার জন্যে; কোনো বিস্মৃতির অতল জলধারা,কোনো প্রেতলোক,কোনো পুনরুথ্থান,কোনো বিচারক,কোনো স্বর্গ, কোনো নরক; আমি আছি ,আমি থাকবো না ,মিশে যাবো ,অপরিচিত হয়ে যাবো,জানবো না আমি ছিলাম । নিরর্থক সব পুণ্যশ্লোক,তাৎপযহীন সমস্ত প্রার্থনা, হাস্যকর উদ্ধত সমাধি; মৃত্যুর পর যে-কোনো জায়গায়ই আমি পড়ে থাকতে পারি-,জঙ্গলে,জলাভূমিতে,পথের পাশে,পাহাড়ের চূড়োয়,নদীতে মরুভুমিতে, তুষার স্তুপে । চলে যাওয়ার পর কিছু চাই না আমি,দেহ বা দ্রাক্ষা,ওষ্ঠ বা অমৃত,বা অমরতা"

শ্রদ্ধেয় হুমায়ুন আজাদ এর প্রয়াণ দিবসে তার প্রতি অনেক অনেক শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা রইলো❤️❤ আপনি আমাদের মাঝে হাজার হাজার বছর ধরে আলে ছড়াবেন আপনার লেখার মাধ্যমে।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই আগস্ট, ২০২১ বিকাল ৩:১০
১১টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্রে মুসলিম চরিত্রের অনুপস্থিতি: এক অনালোচিত প্রশ্ন?

লিখেছেন মুনতাসির, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৮:০৫

সত্যজিৎ রায়, যিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে পরিচিত, তাঁর চলচ্চিত্র, গল্প এবং গোয়েন্দা সিরিজ ফেলুদা বাস্তববাদী চরিত্র, সমাজচিত্র, এবং গভীর দার্শনিকতা নিয়ে আলোচিত। তবে তাঁর কাজের মধ্যে একটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সুরের জাদু: গিটার বাজালে কি ঘটবে?

লিখেছেন শাম্মী নূর-এ-আলম রাজু, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সকাল ৯:৪১



গাজীপুরের পুবাইলের পুরনো গির্জাটি রাতের আঁধারে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে। এই গির্জার নির্মাণকালে কিছু না জানা কুসংস্কারের অনুসরণ করা হয়েছিল। গাজীপুরের লোককথায় বলা হয়, এই গির্জার নিচে আটটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা, লোভী এবং সাম্রাজ্যবাদীও বটে.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৪:১৪

শুধু হিংস্র, আগ্রাসী নয় ভারত লুটেরা এবং লোভীও....

জন্মলগ্ন থেকেই ভারতের হিংস্র ও আগ্রাসী। পাকিস্তানের সাথে যোগ দিতে চাওয়া এবং স্বাধীন থাকতে চাওয়া কিছু অঞ্চল যেমন হায়দ্রাবাদ, ত্রিবাংকুর, ভূপাল, যোধপুর, জুম্ম-কাশ্মীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১০

২০০৮- ২০২৪, হাসিনা ভারতের জনম জনমের ঋণের কিছুটা শোধ করেছেন মাত্র

এআই দ্বারা তৈরিকৃত রাজনৈতিক কার্টুন—যেখানে বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের অসাম্যতা ও রাজনৈতিক নির্ভরতার প্রতীকী উপস্থাপন করা হয়েছে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিক্ষকদের দ্বৈত চরিত্র এবং বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৮:১৬


বাংলাদেশে শিক্ষার মান নিয়ে সবার মুখে নানা রকম কথা শোনা যায় । কেউ কেউ বলছেন দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নতি হচ্ছে , কেউ বলে দিন দিন তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×