somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নস্টালজিক
পেশায় গীতিকার, লেখক। তড়িৎ কৌশল পড়া বাদ দিয়ে একদিন গীতিকার হব বলে বেড়িয়ে পড়েছিলাম শব্দের তালাশে। ইদানিং আবার বেড়িয়ে পড়তে ইচ্ছে হয়। এবার এই অন্তর্জাল থেকে। নস্টালজিক এর নাম শেখ রানা। নিজেকে চেনার পর হাতে বেশী সময় থাকে না।

লিরিক ও লিরিকের পেছনের গল্প' -সবুজ যখন

০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



হৃদয়পুর আমার জন্য নানা কারণে স্মরণীয়।

আমি তখন এক বিহবল সময়ের মুখোমুখি। একদিকে আশার সলতে জ্বেলে বসে আছে কেউ। আমার ভেতর চুপচাপ, অন্তরালে। অন্যদিকে আর একজন অসহায় হতাশায় ঝাঁপ দিয়ে জীবন নামের অচিনপুরে অবগাহন করছে। জীবন থেকে ক্রমশ দূরেও সরে যাচ্ছে। যতদূর যাওয়া যায়।

জীবন মানেই মানুষ, কোলাহল। সম্পর্ক, স্বজন। ভালোবাসা, বাড়ি ফেরা। জীবন মানে একটা নিশ্চিত অভিযাত্রা যেখানে অনিশ্চিয়তার জায়গা আসলে নেই। আমাদের ধরাবাঁধা জীবনে একেবারেই নেই।

আর আমি! তখন এক অনিশ্চিতের পথিক। ধারাপাতের জীবন অগ্রাহ্য করা এক বেভুলো বোহেমিয়ান। প্রথাগত পথগুলোর ঠিক বিরুদ্ধ পথে দাঁড়িয়ে। একা।

একা এবং নিঃসঙ্গ।

ঠিক সে রকম সময়ে আমার লেখার পাতায় সবুজ যখন শব্দ-বাক্য-ছন্দ ধরে উঠে আসে। লিখতে লিখতে আমার মনে পড়ে এই যে এলোমেলো তারুণ্যে আমি নিজেকে নিয়ে একটা নির্মম পরীক্ষা করছি, তার অদূরে আমার শৈশব-কৈশোরে আমার মতই একটা একা ছেলে ঝিম দুপুরে বারান্দায় বসে সবুজ দেখছে। একটা বিশাল কড়ই গাছের সাথে আপনমনে কথা বলে নিজেই চমকে উঠছে। বৃষ্টি দেখে তার অজাগতিক অনুভূতি হচ্ছে। সে ভাবছে সবাইকে কেন বড় হয়ে একটা কিছু হতেই হবে। কেন কিছু না হয়েও একটা জীবন কাটিয়ে দেয়া যায় না!

আমি তখন কাগজে কলমে লিখি। লিখতে লিখতে অনভ্যস্ত হাতে আঁকিবুঁকি করি। রাজশাহী বি আই টিতে কাগজে কলমে ছাত্র। কিন্তু বহু আগেই একরোখা সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি গীতিকার হব, লেখক হব। একটা সহজিয়া জীবন কাটাব।

তার কিছু আগ দিয়েই সঞ্জীবদার সাথে আমার পরিচয় আর সখ্যতা হলো। আহ শুনে যে মানুষটার লিরিক আমাকে মোহগ্রস্ত করেছিল তার সাথে করমর্দন করে আমি আরো বোহেমিয়ান হয়ে গেলাম। সঞ্জীবদার মত হতে চাইলাম। কিন্তু আমরা আসলে কেউ কারো মতো হই না। হতে পারিও না। আমাদের সবার গন্তব্য আলাদা। আমরা আমাদের জন্য নির্ধারিত সময়ের কিছু অংশে এক একজনের সফরসঙ্গী হতে পারি কেবল।

বাপ্পা ভাই এর সাথে ততদিনে কিছু গান হয়ে গেছে। এক নিবিড় নির্ভরতা, ভরসার জায়গা তখন বাপ্পা ভাই। কত দিন-রাত সেই নীলা মেটার্নিটি গলির বাসায় আড্ডা। লেখা। বসে বসে বাপ্পা ভাই এর কম্পোজিশন এর শুরুটা দেখা। তারেক ভাই, মাসুম ভাই। টনি, মাঝে মাঝে জুলফি। সন্ধাবেলায় মৌচাক এর মিউজিকম্যান স্টুডিও। সেই বোধহয় স্টুডিওতে গান রেকর্ডের শেষ সময়কাল। তারপর আমরা সবাই সবাইকে বাসা বন্দী করে ফেললাম।

সবুজ যখন বোধ করি দলছুটের হৃদয়পুর অ্যালবামের শেষ রেকর্ড হওয়া গান। এখনও কানে ভাসে সঞ্জীবদা বলছেন- রানা, তোর গান গেয়ে এলাম। আমার খুব প্রিয় কম্পোজার বাপ্পা ভাইয়ের ব্লুজ ঘরানার খুব অন্যরকম একটা কম্পোজিশন শুনে আমি আবার ডুব দিলাম কোথাও। তার ঠিকানা আমি নিজেও জানিনা।

কত সময় পেরিয়ে গেছে তারপর? প্রায় দুই যুগ! ফিরে তাকালে চমকে উঠি। এইতো সেদিন! সঞ্জীবদা, বাপ্পা ভাই, রাসেল ও নীল, টনি, মাসুম ভাই, তারেক ভাই...জমজমাট আড্ডা। আমার ডায়রীতে লিখে রাখা লিরিক। একে একে হয়ে ওঠা গান। একটু একটু করে আমার গীতিকার হয়ে ওঠা। অথবা গীতিকার হবার সেই স্বপ্নকে আলিঙ্গন করা।

এই সব ছাপিয়ে সবুজ যখন আদতে আমার সবুজে মুগ্ধতা ধরে রাখা লিরিক। সূর্যের সাথে পাখির শীষ মিশে যাওয়া দিন। আলোর সাথে চাঁদের গদ্য লেখার মুহূর্ত।

আর একটা নিঃসঙ্গ মানুষের এলোমেলো পথ ধরে পথিক হয়ে ওঠার গল্প।

-------------------------------------
আজ তোমার মন খারাপ মেয়ে বই -থেকে
নতুন করে লেখা
ম্যানুস্ক্রিপ্ট
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:৩৯
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান।

লিখেছেন আহা রুবন, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৫০





ফখরুল সাহেব দেশটাকে বাঁচান। আমরা দিন দিন কোথায় যাচ্ছি কিছু বুঝে উঠতে পারছি না। আপনার দলের লোকজন চাঁদাবাজি-দখলবাজি নিয়ে তো মহাব্যস্ত! সে পুরাতন কথা। কিন্তু নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। প্রধান উপদেষ্টাকে সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রীর খোলা চিঠি!

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০৩




সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে মুক্তি দিতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে খোলা চিঠি দিয়েছেন মোশাররফ হোসেনের স্ত্রী আয়েশা সুলতানা। মঙ্গলবার (২৯... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১২:১৩

ফিতনার এই জামানায়,
দ্বীনদার জীবন সঙ্গিনী খুব প্রয়োজন ..! (পর্ব- ৭৭)

সময়টা যাচ্ছে বেশ কঠিন, নানান রকম ফেতনার জালে ছেয়ে আছে পুরো পৃথিবী। এমন পরিস্থিতিতে নিজেকে গুনাহ মুক্ত রাখা অনেকটাই হাত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×