গত বছর চার গীতিকবিকে নিয়ে একটা অনলাইন আড্ডার আয়োজন করেছিলাম। সঞ্চালক হিসেবে মনে একটাই ভাবনা ছিল আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে গান ও গান সংক্রান্ত কিছু গল্প যেন উঠে আসে। আমাকে খুব অবাক করে দিয়ে অনেক গানপাগল মানুষ গীতিকবিদের এই অনলাইন আড্ডায় শরীক হলেন। সেই আড্ডা- সাক্ষাৎকারে মন খুলে কথা বললেন তিন গীতিকবি। শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, লতিফুল ইসলাম শিবলী আর নিয়াজ আহমেদ অংশু।
নব্বইয়ে বাংলা ব্যান্ডের একটা স্বর্ণযুগ গেছে। গান, ফ্যাশন মিলে তরুণদের আইকন তখন ব্যান্ডের তারকারা। প্রচুর ক্যাসেট বের হতো সে সময়। চারপাশে গান আর কনসার্টে গমগম একটা ধ্বনি। সেই তুমুল ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে আমি রেনেসাঁ, ফিড ব্যাক, সোলস, এল আর বি, আর্ক, ফিলিংস, ওয়ারফেজ, উইনিং...সবার গান শুনতাম। লিরিক থেকে শুরু করে গিটার বা কী বোর্ড পিসশুদ্ধ মাথায় ঘুরতো। লিরিক পড়ে গান শুনতে শুনতে গান এবং গান সংশ্লিষ্ট মানুষের সাথে এক ধরনের নিবিড় সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছিল । আমার এবং আমাদের সমবয়সী প্রায় সবার। যারা বাংলা গান ভালোবাসতেন।
আজ যে শিশু, হৃদয় কাদামাটির কোনো মূর্তি নয়, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে, আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি, প্রিয় আকাশী, হাসতে দেখো গাইতে দেখো, আহা! জীবন, বৃষ্টি দেখে অনেক কেঁদেছি, মেয়ে, এ শহর ডুবে যায়, জন্মহীন নক্ষত্র... এত বছর পরেও এই গানগুলোর ঔজ্জ্বল্য ম্লান হয়ে যায় নি। হবেও না কোনোদিন। পরিচিত গান এর তালিকা দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। এখানেই তাই থামলাম। জঙ্গী ভাই, শিবলী ভাই আর অংশু ভাই এর লেখা প্রিয় এবং জনপ্রিয় গানের তালিকা লিখতে গেলে মুশকিল হয়ে যাবে! গল্পে ফিরি বরং।
আড্ডা থেকে যখন বই করব ভাবছিলাম, কলেবর বাড়ানোর প্রয়োজন দেখা দেয়। তিনজনাই আমার বইয়ের পরিকল্পনা শুনে সানন্দে সম্মতি দেন। আরো সময় দেন। আমিও নতুন প্রশ্ন সাজিয়ে আলাদা আলাদা করে তিন গীতিকবির সাথে বসে যাই। আড্ডা হয়, সাথে বইয়ের রসদ জমতে থাকে। এইসব কর্মযজ্ঞে আমার ক্লান্তি নেই কোনো।
নব্বইয়ের স্বর্ণযুগের গল্প, সাউন্ড গার্ডেন থেকে অডিও আর্ট, সৈকতচারী থেকে সোলস অথবা বামবা শুরুর সুত্র ধরে হোটেল ব্লু নাইল। সেই হোটেল ব্লু নাইল, যেখানে একসময় নিয়ম করে ব্যান্ড সংশ্লিষ্ট প্রায় সব মিউজিশিয়ান নিয়মিত আড্ডা দিতেন। প্রিয় আকাশী, একদিন ঘুম ভাঙা শহরে আর জন্মহীন নক্ষত্র সহ বেশকিছু গানের পেছনের গল্প। অথবা এইসব গল্পে গল্পে উঠে আসা গীতিকবিদের লুকোনো আক্ষেপ, রয়্যালটি, কপিরাইট নিয়ে মনখোলা কথা আর গীতিকবি হয়ে ওঠার গল্প। সাথে হাতে লেখা লিরিক আর কিছু দূর্লভ ছবি। সব মিলে গল্প শেষে বইতে পাঠকের জন্য মনের খোরাক মেটানোর নানারকম বর্ণিল উপাদান রয়েছে।
আমি সম্পাদনা করতে বসে বিভিন্ন ভাগে লেখাগুলো সাজিয়েছি। যে কোনো লেখা শেষ হলে লেখকই হয় তার লেখার প্রথম পাঠক। পাঠক হিসেবে বলতে পারি, বাংলা গানের বুঁদ হয়ে থাকা শ্রোতা হিসেবে গল্প শেষের পান্ডুলিপি আমাকে প্রভূত আনন্দ দিয়েছে।
পান্ডুলিপির শেষ লাইন শেষ করে আমার মনে হয়েছে বাংলা ব্যান্ডের গান নিয়ে ভালো একটা আর্কাইভ হয়ে থাকবে এই বইটা।
গল্প শেষে নামটা নিয়েছি অংশু ভাইয়ের স্বপ্ন-২ গান থেকে। নাম নিয়ে যখন ভাবছিলাম হুট করে এই গানটা মাথায় এলো। মনে হলো, তাইতো! গল্প শেষে আমরা হারিয়ে যাব। সবাই কী হারিয়ে যাব? নাকি গল্প শেষে আসলে একটা মেটাফোর। একটা গল্প শেষ মানেই একটা গল্প শুরু! একটা নতুন গল্প শুরু। তাতে আনন্দ বেদনার কথা আর গান থাকে, অন্তরালে।
আমার প্রস্তাব শুনে সাগ্রহে রাজী হবার জন্য চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনী আর ফাহাদকে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ। এই বইটার প্রচ্ছদ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। করে দিয়েছে আমার বিজ্ঞাপন জগতের প্রিয় সহকর্মীদের একজন। শাফিন চৌধুরী বাবু।
আরো কিছু কৃতজ্ঞতা নোটস আছে। সেগুলো বইয়ে তোলা থাকলো। কিছু গল্প থাকুক বরং।
গল্প শেষে বই এর প্রি অর্ডার শুরু হয়েছে। ব্লগের সবাইকে লিঙ্ক দিয়ে রাখছি।
গল্প শেষে আপনাদের হাসিমুখ থাকুক।
রকমারী লিঙ্কঃ Click This Link
৩০% কমিশনে চন্দ্রবিন্দু প্রকাশনা পেজ এর লিঙ্কঃ Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ বিকাল ৫:২১