বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
১৯৭৭ সালে পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর প্রতি ভারত তাদের গোয়েন্দা সংস্থা 'র'- র সমর্থন উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানোর প্রস্তুতি নেয়। ওই বছরই নির্বাচনে হেরে গিয়ে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতাচ্যুত হন।
সম্প্রতি প্রকাশিত 'ট্রাবলড পেরিফেরি: ক্রাইসিস অব ইন্ডিয়া'স নর্থইস্ট' বইতে সাংবাদিক ও লেখক সুবীর ভৌমিক এরকম নানা বিষয় তুলে ধরেছেন।
পেশায় সাংবাদিক ও গবেষক সুবীর ভৌমিক গত তিন দশক ধরে বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং মিয়ানমারের কাচিনে বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলোর ইন্ধনে 'র'- র 'সম্পৃক্ততার' নানা খুঁটি-নাটি তুলে ধরেছেন তার বইয়ে।
পার্বত্য চট্টগ্রামে শান্তিবাহিনীর গণহত্যা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়বে কি?
তবে লেখক বলেছেন, সংস্থাটির নিজস্ব কোনো উদ্যোগ নয়, সর্বোচ্চ মহলের সক্রিয় নির্দেশনায়ই তাদের এসব কর্মকাণ্ড পরিচালিত হতো।
সুবীর ভৌমিক লিখেছেন: "শান্তিবাহিনীকে ভারতের সমর্থনের পেছনে তাৎক্ষণিক প্রণোদনা হিসেবে কাজ করেছিল শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যকে হত্যা করে বাংলাদেশে সংঘটিত সামরিক অভ্যুত্থান। ভারতের কাছে এটাকে মনে হয়েছিল তার বিরুদ্ধে জোর রাজনৈতিক বিরোধিতা। ওই অভ্যুত্থানের মাত্র এক সপ্তাহের মধ্যে 'র' এর সিনিয়র কর্মকর্তারা আগরতলার রাজধানী ত্রিপুরায় গিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চায় এমন চাকমা নেতাদের খুঁজে বের করতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেন।"
শান্তিবাহিনীর গেরিলা কমান্ডার ও 'র'-র সদস্যদের বিশদ সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে সুবীর ভৌমিক এরকম নানা তথ্য তুলে ধরেছেন।
লেখকের মতে, ১৯৭৭ সালে নির্বাচনে ইন্দিরা গান্ধীর পরাজয় সেইসময়ে বিদ্রোহ ও অভ্যন্তরীণ অস্থিতিশীলতাসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত বাংলাদেশকে বড় ধরনের দুর্যোগ থেকে রক্ষা করেছিল।
"যখনই ভারতের পক্ষ থেকে শান্তিবাহিনী গেরিলাদের শক্তিবৃদ্ধিতে সমর্থন দেওয়ার কথা জানিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে এগুনোর প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলো তখন ইন্দিরার পরাজয়ের খবর আসে। তবে এটি নিশ্চিত নয় ইন্দিরা গান্ধী কতটুকু যেতে চেয়েছিলেন।.."
সুবীর ভৌমিক লিখেছেন, মোরারজী দেশাই প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নেওয়ার পর পার্বত্য চট্টগ্রামে র'- র তৎপরতা জোরদারের পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। তিনি বলেছেন ইন্দিরা ক্ষমতায় ফিরে এলে শান্তিবাহিনীর প্রতি ভারতের সমর্থন পুনরায় শুরু হয়েছিল। তবে ততোদিনে অন্তর্কলহে শান্তিবাহিনীর অবস্থা ক্ষতবিক্ষত এবং ওই সময়ই নিহত হয়েছিলেন বাহিনীর নেতা এমএন লারমা।
আগরতলা 'র'- র স্টেশন চিফ পরিমল ঘোষ সে সময় শান্তিবাহিনীর গেরিলাদের বিবাদ মীমাংসায় দুই পক্ষের মধ্যে একটি চুক্তিও করে দিয়েছিলেন বলে বইয়ে উল্লেখ করা হয়।
এই পরিমল ঘোষ ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে মেজর জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। একজন বিএসএফ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি মুক্তিফৌজের হয়ে শুভপুর ব্রিজ এলাকায় যুদ্ধেও অংশ নিয়েছিলেন।
সুবীর ভৌমিক তার বইয়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্র"প কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মির (কেআইএ) ওপর ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা 'র' আধিপত্য বিস্তারের পুরো প্রক্রিয়াটিও তুলে ধরেছেন।
বইয়ের তথ্য অনুযায়ী উত্তর-পূর্ব ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদীদের তারা আর সমর্থন করবে না এটি নিশ্চিত করতে 'র' কেআইএ- কে অস্ত্র দিতে শুরু করে। আর এই এজেন্ডা বাস্তবায়নে যিনি সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করেন সফলতম র' কর্মকর্তাদের একজন হিসেবে বিবেচিত সেই বি.বি নন্দী এক সময় ঢাকায় 'র' এর স্টেশন চিফের দায়িত্ব পালন করেছেন।
ব্যাংককে স্টেশন চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি মিয়ানমারের বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন বিশেষ করে কাচিন এর সঙ্গে 'র' এর সম্পর্ক গড়ে তোলেন।
মিয়ানমারের সামরিক জান্তা এবং বাংলাদেশের বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সঙ্গে নয়াদিল্লী বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করায় অবসরে যাওয়া বি বি নন্দী 'র'-র তীব্র সমালোচনা করেন।
বইটিতে উত্তর-পূর্ব ভারতে ভূমি, ভাষা, নেতৃত্ব, আদর্শ, ধর্ম-- এসব নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং এ সংকট থেকে উত্তরণে একটি কর্মকৌশল তুলে ধরেছেন লেখক।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১০ রাত ১১:৫৬