somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পঞ্চম সংশোধনী মামলার শুনানি : মওদুদের বক্তব্য ইন্টারেস্টিং মনে হৈলো

২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

স্টাফ রিপোর্টার: আবারো আমার দেশ থিকা কপি পেষ্ট

পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের বিরুদ্ধে দায়ের করা লিভ টু আপিলের চতুর্থদিনের শুনানিতে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে জানান, সামরিক শাসন ও জরুরি অবস্থার অধীনে সুপ্রিমকোর্টসহ সবাই কাজ করেছেন। সামরিক শাসন মেনে নিয়েই তখন সুপ্রিমকোর্ট দায়িত্ব পালন করেছেন। সুপ্রিমকোর্টের এমন কিছু করা উচিত হবে না যাতে এ প্রতিষ্ঠানের ওপর থেকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস নষ্ট হয়। সুপ্রিমকোর্টের মর্যাদা সুপ্রিমকোর্টকেই রাখতে হবে। কেউ যাতে সুপ্রিমকোর্টকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করতে না পারে, সেই ডিগনিটি সুপ্রিমকোর্টকেই রক্ষা করতে হবে।
গতকাল প্রধান বিচারপতি তাফাজ্জাল ইসলামের সভাপতিত্বে আপিল বিভাগের ছয় বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত ফুল বেঞ্চে লিভ টু আপিলের শুনানি চলছে। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ তৃতীয়দিনের পুরোটাই তার বক্তব্য উপস্থাপন করেছেন। আগামী রোববার আবারও তিনি বলবেন।
ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে জানান, শহীদ জিয়াউর রহমান সামরিক শাসনের সময়ে সংবিধানের কিছু পরিবর্তন আনলেও জনগণের কাছ থেকে অনুমোদন নিয়েছেন। সংবিধানের ৪৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী শহীদ জিয়াউর রহমান গণভোটের মাধ্যমে এ কাজগুলো করার আগে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েছেন। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনীতে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটেনি—একথা বলা ঠিল হবে না। তিনি আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, সংবিধানের সুপ্রিমেসির কথা বলে পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে যিনি রায় দিয়েছেন, তিনি নিজেই জরুরি অবস্থার অসাংবিধানিক সরকারের জারি করা রুলস দেখিয়ে জামিন মঞ্জুর করেননি। সংবিধানের ওপর জরুরি অবস্থার বিধিকে স্থান দিয়ে মানুষকে জামিন পাওয়ার সাংবিধানিক অধিকার থেকে বঞ্চিত রেখেছেন। এ প্রসঙ্গে জরুরি অবস্থার রুলস দেখিয়ে জামিন নামঞ্জুর করা আদেশের কপি আদালতের সামনে উপস্থাপন করে তিনি বলেন, জরুরি অবস্থার সরকার একটি রুল জারি করে বলে দিয়েছিল জামিন দেয়া যাবে না। অথচ সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী জামিন পাওয়া হলো একজন নাগরিকের অধিকার। তিনি আদালতের সামনে প্রশ্ন রেখে বলেন, জরুরি অবস্থার সরকারের জারি করা রুলস ১১ কি সংবিধানের ৬৬ অনুচ্ছেদের চেয়ে বড়? তখন অনেক বড় আইনজীবীকে জরুরি অবস্থার সরকার টাকা দিয়ে বুকিং করে রেখেছে। ডিনার দিয়ে বলা হয়েছে আপনারা রাজনীতিবিদদের মামলায় দাঁড়াবেন না। পেছনে বসা ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলামসহ কয়েকজনকে দেখিয়ে তিনি বলেন, আপনারা ডিনারে যাননি? এ প্রসঙ্গে প্রধান বিচারপতি বলেন, তখন অনেক সিনিয়র আইনজীবী বলতেন—আমরা তো দাঁড়াতে পারছি না, এজন্য জুনিয়রকে দিয়ে মামলাটি করিয়েছি। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, হাইকোর্ট বিভাগ জামিন দিলেও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আপনারা জামিন দিলেন না। তাকে প্যারোলে মুক্ত হয়ে বিদেশে যেতে হয়েছে। প্যারোলে মুক্ত অবস্থায় নির্বাচন করেন এবং প্যারোল অবস্থায়ই প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন।

৬০ ডিএলআর থেকে আপিল বিভাগের ৩টি পৃথক সিদ্ধান্ত উপস্থাপন করে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে বলেন, সংবিধানের সুপ্রিমেসির কথা আপনারা বলছেন। জরুরি অবস্থার সরকারের সময় হাইকোর্ট বিভাগ সংবিধানের সুপ্রিমেসি রক্ষা করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়াসহ রাজনৈতিক নেতাদের জামিন দিয়েছিলেন। কিন্তু এই আপিল বিভাগ তখন জরুরি অবস্থার সরকারের জারি করা রুলস দেখিয়ে হাইকোর্ট বিভাগের জামিন স্থগিত করেছেন। তিনি জরুরি অবস্থার সরকারের সময় ময়েজ উদ্দিন, ব্যারিস্টার মীর হেলাল উদ্দিন ও অ্যাডভোকেট সিগমা হুদার মামলায় হাইকোর্ট বিভাগের জামিন স্থগিত করে আপিল বিভাগের ৩টি রায় আদালতের সামনে উপস্থাপন করেন। একপর্যায়ে আদালতের একজন বিচারপতি বলেন, এসবের জন্য রাজনীতিবিদরাও কিছুটা দায়ী। জবাবে ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, স্বীকার করি আমরা যারা রাজনীতি করছি, সবাই কম-বেশি দায়ী। তবে আপনাদেরও ট্র্যাক রেকর্ড ভালো না। আপনারা সামরিক শাসন, জরুরি অবস্থার শাসনকে মেনে নিয়ে কাজ করেছেন। আর রাজনীতিবিদরা আন্দোলন-সংগ্রাম করে দেশের স্বাধীনতা এনেছেন; স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছেন। আপনি সবকিছুর জন্য রাজনীতিবিদদের কেন দায়ী করবেন।

অপরদিকে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করেছেন প্রধান বিচারপতি। তখন তো তারা বলেননি সামরিক শাসনের অধীনে কাজ করব না; সামরিক আইনের অধীনে যারা রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, তাদের শপথ দেব না। ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে উদ্দেশ করে বলেন, পঞ্চম সংশোধনী হচ্ছে একটি রাজনৈতিক ইস্যু। এই রাজনৈতিক ইস্যু বাস্তবায়নের জন্য সরকার সুপ্রিমকোর্টকে ব্যবহার করতে চায়। তারা সংসদে গিয়ে বলতে চায়, উচ্চ আদালত আমাদের বলে দিয়েছে সংবিধানে এটা-ওটা করার জন্য। পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে হাইকোর্ট বিভাগের রায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ আদালতকে আবারও বলেন, উনি বলে দিয়েছেন সংবিধানে এটা থাকবে, ওটা থাকবে না। উনি সংবিধান পুনরায় লিখে দিয়েছেন। সংবিধান লেখার দায়িত্ব হচ্ছে সংসদের। আদালতের কাজ হচ্ছে সংবিধানকে সমুন্নত রাখা। সংবিধান সংশোধন করার মতো বর্তমান সরকারের দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতাও রয়েছে। চাইলেই সংবিধান সংশোধন করতে পারে তারা। কিন্তু আদালতের ঘাড়ে বন্দুক রেখে এখন তারা কাজটি করতে চাচ্ছে। প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ঘটনায় শেখ মুজিবুর রহমান মারা যাওয়ার পর ৩ নভেম্বর পর্যন্ত সংসদ বলবত্ ছিল। তখনও সংসদে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। তাদেরই স্পিকার, তাদের দলের সদস্যই রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভার সদস্য হয়েছিলেন। তারা চাইলে তখনও সংবিধান সংশোধন করতে পারতেন। তারা করলে আর শহীদ জিয়াউর রহমানের পঞ্চম সংশোধনীর প্রয়োজন হতো না। তিনি আদালতকে জানান, সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর আগে জিয়াউর রহমান দু’বার জনগণের ম্যান্ডেট নিয়েছেন। এরপর ৫টি সংসদ অতিবাহিত হয়েছে। কোনো সংসদই পঞ্চম সংশোধনী নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করেনি। তিনি আদালতকে বলেন, আপনারা যদি এটা ইস্যু বানাতে চান, তাহলে বানান। তিনি বলেন, ৪০ বছরের ওকালতি জীবনে তো অনেক কিছুই দেখেছি। যখন যে আইন ছিল, সেই আইন অনুযায়ী এই আদালত কাজ করেছেন। তত্কালীন প্রধান বিচারপতি কর্তৃক প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক হিসেবে শহীদ জিয়াউর রহমানকে রাষ্ট্রপতির শপথ ও এরশাদের শপথ পাঠের ছবি তিনি আদালতের সামনে উপস্থাপন করে বলেন, পঞ্চম সংশোধনী জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন অনুযায়ী হয়েছে।

শুনানিতে লিভ টু আপিলের পক্ষে জ্যেষ্ঠতম আইনজীবী বিচারপতি টিএইচ খান, ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, ব্যারিস্টার আবদুর রাজ্জাকসহ অনেক সিনিয়র আইনজীবী উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লিভ টু আপিল দায়েরকারী আইনজীবী ব্যারিস্টার মুন্সি আহসান কবীর ও অ্যাডভোকেট তাজুল ইসলাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১০ দুপুর ১২:১৬
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বেফাঁস মন্তব্য করায় সমালোচনার মুখে সমন্বয়ক হাসিবুল ইসলাম !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৩ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩২



"মেট্রোরেলে আগুন না দিলে, পুলিশ না মারলে বিপ্লব সফল হতো না "- সাম্প্রতিক সময়ে ডিবিসি নিউজে দেয়া সাক্ষাৎকারে এমন মন্তব্য করে সমালোচনার শিকার বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসিবুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমিত্ব বিসর্জন

লিখেছেন আজব লিংকন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১:৪৮



আমি- আমি- আমি
আমিত্ব বিসর্জন দিতে চাই।
আমি বলতে তুমি; তুমি বলতে আমি।
তবুও, "আমরা" অথবা "আমাদের"
সমঅধিকার- ভালোবাসার জন্ম দেয়।

"সারভাইভাল অব দ্য ফিটেস্ট"
যেখানে লাখ লাখ শুক্রাণুকে পরাজিত করে
আমরা জীবনের দৌড়ে জন্ম... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বৈরাচারী আওয়ামীলীগ হঠাৎ মেহজাবীনের পিছে লাগছে কেন ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৭:৪১


স্বৈরচারী আওয়ামীলীগ এইবার অভিনেত্রী মেহজাবীনের পিছনে লাগছে। ৫ ই আগস্ট মেহজাবীন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন ‘স্বাধীন’। সেই স্ট্যাটাসের স্ক্রিনশট যুক্ত করে অভিনেত্রীকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ তার অফিসিয়াল ফেইসবুকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিড়াল নিয়ে হাদিস কি বলে?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:২৪



সব কিছু নিয়ে হাদিস আছে।
অবশ্যই হাদিস গুলো বানোয়াট। হ্যা বানোয়াট। এক মুখ থেকে আরেক মুখে কথা গেলেই কিছুটা বদলে যায়। নবীজি মৃত্যুর ২/৩ শ বছর পর হাদিস লিখা শুরু... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। বকেয়া না মেটালে ৭ নভেম্বরের পর বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না আদানি গোষ্ঠী

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:৪১





বকেয়া বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে কোটি কোটি টাকা। ৭ নভেম্বরের মধ্যে তা না মেটালে বাংলাদেশকে আর বিদ্যুৎ দেবে না গৌতম আদানির গোষ্ঠী। ‘দ্য টাইম্স অফ ইন্ডিয়া’-র একটি প্রতিবেদনে এমনটাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×