আম্মু আব্বুর সাথে বিভিন্ন ব্যাংকে নানা কাজে নমিনি হলেও নিজের ব্যাংক একাউন্ট বলতে যা বোঝায় তা আমার কখোনোই ছিল না। প্রথম ব্যংক একাউন্ট খোলার দরকার পড়ে আইইউটি তে ভর্তির সময়, কেননা ঔখানে ভর্তির টাকা ছাত্রের নিজের ব্যাংক একাউন্টে জমা দিতে হয়। তখন ব্যাংক একাউন্ট করলেও টাকা জমা ও তোলার সব কাজ আম্মু ও আব্বুই করে দিয়েছিল, আমি শুধু সাক্ষর করেছিলাম।

আসলে তখন আমি ছিলাম বুয়েট এ চান্স না পেলে ঘর থেকে এতগুলো টাকা লাগবে সেই চিন্তাতেই কাতর।

যাই হোক সেটি অন্য প্রসঙ্গ।
পরবর্তীতে বুয়েট এ এসে শুনলাম এইখানেও নাকি ব্যাংক একাউন্ট খুলতে হবে এবং সেখানে নাকি বোর্ড থেকে প্রাপ্ত বৃত্তির টাকা এসে জমা হবে। শুধু একটা একউন্ট খুললেই বৃত্তির টাকা ফাও ফাও নিজের কাছে চলে আসবে এটা ভেবে তখন নিজের ভেতর ব্যাপক পুলক অনুভব করেছিলাম।

(যদিও ব্যাংক একাউন্ট খোলার জন্য পরে যে ঝামেলা পোহাতে হইছিল তাতে সেই পুলক দুই মাসের মাঝেই ঝেড়ে দৌড় দিসিল

)
এরপর যখন আসলেই ব্যাংক এ টাকা আসল আমাকে আর পায় কে!

বাসায় যাই হোক না কেন আম্মু কে বলি চিন্তা করোনা আমার টাকা দিয়ে কিনে ফেলব! এভাবে বলে বলে এপর্যন্ত পিসির মাদারবোর্ড থেকে শুরু করে পেন ড্রাইভ কতকিছুই আম্মুর থেকে হাতিয়ে নিয়েছি..টাকার প্রসঙ্গ আসলেই আম্মুকে বলতাম, চিন্তা করোনা, এখন কিনে দাও আমি ব্যাংক থেকে তুলেই তোমাকে দিয়ে দিব। যদিও আম্মু মনে হয় চক্ষুলজ্জায় আমার আমার কাছে টাকা চাইত না, আর আমিও একই ধান্দায় পরবর্তীতে আরও কি কি কেনা যায়, তার প্ল্যান করতে বসতাম..

যাই হোক, কিছুদিন থেকে মনে হল বিসমিল্লাহ থেকে ব্যাংক থেকে টাকা গুলো তুলেই দেখি কেমন লাগে। যেই ভাবা সেই কাজ। এর পরের দিন হেলেদুলে ব্যাংক এ গিয়ে দেখি প্রতিটা কাউন্টারেই লম্বা লাইন। দেখে তো আমি ভয়ে ঢোক গিলে সেই যে গাড়ি তে উঠলাম, চার দিন আর বুয়েটমুখো হইনি..
পরবর্তীতে গত ১২ তারিখ ছিল আমাদের নতুন লেভেল এ উঠার জন্য ব্যাংক ফি দেবার প্রথম দিন। ভাবলাম আজ টাকা তোলার ১টা ট্রাই দিই! ব্যাংক এ এসে কাউন্টারে লেখা নগদ প্রদান আর নগদ গ্রহন লেখা দেখে কোন টা যে কি, বুঝতে গিয়ে মাথার মাঝে গিট্টু লেগে গেল।

কিছুক্ষন হিসাব নিকাশ করে বুঝলাম টাকা তুলতে হলে আমাকে নগদ প্রদান লেখা বুথে দাঁড়াতে হবে। অবশ্য কপাল ভাল, এইদিন টাকা তোলার লাইন টা হালকা ছিল। যাথারীতি ব্যাংক ফি দেবার টাকা আর এক বন্ধুকে গছিয়ে আমি টাকা তোলার লাইনের পাশ দিয়ে ইতস্ত:ত ঘুরতে লাগলাম। আম্মু পই পই করে বলে দিয়েছিল চেকের কোন অংশে কি লিখে কোথায় কোথায় সাক্ষর দিতে হবে, কিন্তু আমি মানুষজনের ভীড় দেখে সেইসব গেলাম সব ভুলে।

মাথায় হাত দিয়ে আবার লাইনের পাশে দিয়ে শুকনা মুখে ঘুরঘুর করছি এমন সময় দেখলাম মেকানিকালের তাসনীম কে। যাই হোক তার কাছ থেকে আবার নিয়মকানুন শুনে ঠিক ঠাক মত সাক্ষর দিয়ে লাইনে দাড়ালাম। ভীড় ঠেলে চেক দেবার পরে কাইন্টারের লোক চেক থেকে ১টা পিচ্চি অংশ ছিড়ে পাশের লাইনে দাঁড়াতে বলল। আমিও চিমশা মুখে পাশের লাইনের পিছনে গিয়ে দাঁড়ালাম। দেখি আমার কিছু সামনে অ্যাসেম্বলী কোর্সের ওয়াসিউর রহমান স্যার ! হাই তুলতে তুলতে আমি লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকি আর লাইন ও শম্বুক গতিতে আগাইতে থাকে। এর মাঝে আবার ব্যাংক ফি দিতে আসা পরিচিত পোলাপাইন রা আমাকে টাকা তোলার লাইনে দেখে খাওয়ানোর জন্য আবদার করতে থাকে আর আমিও মনে মনে সুরা ইখলাস পড়ে ঢোক গিলতে থাকি।

অবশেষে লাইন একটু একটু করে আগাইল, সাথে আমিও আগাইলাম। আমার সামনে আর একজন বাকি। আমি তো খুশিতে ইয়েস ইয়েস করছি, আর কিছুক্ষনের মাঝেই মিশন সাকসেসফুল। কিন্তু ওই লোক মনে হয় অফিসের বেতন তুলতে আসছিল, একসাথে আনসে অনেক গুলা চেক, টাকা গুনে আর সাইন করে দিতে ব্যাংক এর লোক প্রায় পনের মিনিট লাগিয়ে দিল, আর এদিকে আমার ও আর অপেক্ষা যেন শেষ হয় না..
অবশেষে আমি হাতের বাচ্চা চেক টা ফুটা দিয়ে বাড়িতে দিতেই লোক টা চেকের দুইটা অংশের নাম্বার ,টাকার পরিমান, সাক্ষর এইসব অনেকক্ষন ধরে মিলিয়ে দেখল। এর পর ফুটা দিয়ে আমার হাতে ৭টা পাঁচশত টাকার নোট দিল। আমার পাওয়া প্রথম টাকা..এবং অবশ্যই নিজের…Yeeeeee…

টাকা গুলো দিয়ে কি করলাম? সেটা না হয় এই বেলা উহ্যই থাক..