হঠাৎ নীরু ভাইয়ের সাথে প্রায় ২/৩ সপ্তাহ আমার যোগাযোগ বন্ধ। অনেক বেশি অসুস্থ হলে তিনি আমাকে ফোন করতে পাড়তেন না বলে যোগাযোগ বন্ধ থাকতো। তবে হঠাৎ এক রাতে একটি অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলো। ওপাশ থেকে একজন বললেন, আমি নীরু ভাইয়ের ছোট ভাই। তাঁর কথা শুনেই আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম তিনি আমাকে কোন দুঃসংবাদ দেবেন। কিন্তু না। তিনি জানালেন, নীরু ভাই কিছুক্ষণ আগে দেশে ফিরেছেন। আপনার কথা কয়েকবার বলেছে। আপনাকে দেখতে চায়। আমি তাড়াহুড়া করে স্কাটনস্থ তাঁর বোনের বাসায় ছুটে গেলাম। দেখলাম, আগের সুস্বাস্থ্যয়ের অধিকারী নীরু ভাই কেমন যেন হালকা-পাতলা গড়নের দেহে রূপান্তরিত হয়ে গেছেন। ইচ্ছা করছিল দেখা মাত্রই তাঁর পায়ে গিয়ে লুটে পড়ি। কিন্তু তিনি অস্বস্তি বোধ করবেন বলে এমনটা করিনি। দেশে ফিরে আসার মতো তাঁর কোন ক্ষমতা ছিল না। কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি মনের আত্মবিশ্বাসে দেশে চলে এসেছেন। ধীরে ধীরে আমার খোঁজ খবর নিলেন। আমি বাদে আরও ২/১ জন ছাড়া আর কাউকে তাঁর দেশে ফেরার কথা বলেননি। আমাকে সত্যকারের অনেক ভালোবাসতেন বলেই এতোবড় প্রাপ্তিতা আমার ভাগ্যে জুটলো। জানালেন, কানাডার ডাক্তাররা আশা ছেড়ে দিয়েছে বলে তিনি দেশে ফিরে এসেছেন। দেশের মাটিতেই তাঁর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার ইচ্ছা। তিনি বললেন, তোমাদের থেকে আমার আর কিছুই চাওয়ার নেই। আমার জন্য দোয়া কর আর অন্যদেরকেও দোয়া করতে বোলো। ব্লগ-ফেসবুকেও তাঁর জন্য দোয়া চেয়ে পোষ্ট দিতে বলেছিলেন। তাঁর ছোট ভাই জানালেন, বাংলাদেশেও নিয়মিত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে চান। নীরু ভাই দেশে এসে ফোন ব্যবহার করতে না। কারণ ফোনে কথা বলার মতো তাঁর অবস্থা নেই। তাঁর ছোট ভাইই একমাত্র ভরসা। কিন্তু কেন যেন তাঁর ছোট ভাইকে ফোন করে কখনই পেতাম না। তিনি ফোন ধরতেন না বা অফ করে রাখতেন। আবার কখনই তিনি আমাকে ফোন ব্যাক করতেন না। একদিন রাগ করেই স্কাটনে নিজে নিজে গিয়ে দেখা করে আসলাম। এরপর আরও কয়েকবার ফোনে খোঁজ খবর নেয়ার চেষ্টা করেছি কিন্তু তাকে পাইনি। প্রায় এক মাস হল তাদের সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। কিন্তু আজ রাত ১২টার দিকে বাসায় এসে ফেসবুকে বসতেই প্রথমে দেখতে পেলাম নীরু ভাইয়ের ছবি। বুকটা কেমন যেন ধক করে উঠলো। উপরে লেখা "আমরা শোকাহত"। আমার বুঝতে বাঁকি নেই। নিচের লেখাগুলো পড়তে ইচ্ছা বা সাহস কোনটাই করছিল না। তবে পড়লাম। জানতে পারলাম আমাদের অসম্ভব শ্রদ্ধেয় বড় ভাই মাহাবুবুল হাসান নীরু না ফেরার দেশে চলে গেছেন গত ৮ জানুয়ারি। রংপুরে জন্মস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়েছে। আমি নির্বাক; বাকরুদ্ধ! তিনি চলে গেলেন অথচ আমি কিছুই জানি না। ফেসবুকে নব্বইয়ের দশকে নীরু ভাইয়ের সহকর্মী ও প্রবাসী সাংবাদিক মনিরুল ইসলাম নাসিম-এর পোষ্ট থেকে এ তথ্য জানতে পারলাম। কিছুক্ষণ স্তব্ধ থাকার পর তাঁকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে দু'এক কথা লিখে নিজেকে হালকা করার চেষ্টা করলাম। তাঁকে নিয়ে আমার যে কত স্মৃতি তা বলে শেষ করা যাবে না।
ব্যক্তি জীবনে তিনি পাক্ষিক ক্রীড়ালোক, সাপ্তাহিক রোববার এর নির্বাহী সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন দীর্ঘদিন ধরে। দৈনিক ইত্তেফাকে প্রায় ৮টি পেজের বিভাগীয় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বিটিভিসহ বেসরকারি টিভি চ্যানেলে তিনি অনেক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছেন এবং তাঁর নির্মিত অসংখ্য নাটক প্রশংসা কুড়িয়েছে। তাঁর লেখা অর্ধশত গল্প, উপন্যাস ও প্রবন্ধের বই রয়েছে।
সামহোয়্যারইন ব্লগে লেখা তাঁর লেখাগুলো পড়তে http://www.somewhereinblog.net/blog/mhniru এই ঠিকানায় যেতে পারেন। তিনি সর্বশেষ এখানে অভিনেতা আনোয়ার হোসেনের মৃত্যু নিয়ে লিখেছিলেন "পর্দার শেষ নবাব, বিদায় জনাব…"। এছাড়া তাঁর সম্পাদিত সময়ের কথা পড়তে ভিজিট করতে পারেন http://somoyerkotha.com ঠিকানায়। অবশেষে প্রিয় নীরু ভাই, আপনি যেখানেই থাকেন ভালো থাকেন। সেই দোয়াই করি। আপনার প্রতি আমার শ্রদ্ধাবোধ আর ভালবাসা একটুও কখনই কমবে না। বিদায় নীরু ভাই.....