বছরটি ছিলো আঠারো মাসের। দু'হাজার বিশ সালটি শেষ হয়ে যাক, আসুক নতুন বছর - ছ'মাস আগে থেকেই মানুষ কামনা করে যাচ্ছে। যা হোক, মহামারি এবং ছায়া মহামারির (মহামারিতে ক্রমবর্ধমান শিশু ও নারী নির্যাতনের ঘটনা) মধ্য দিয়ে ২০২০ সালটি শেষ হতে চলেছে। টিকা উদ্ভাবন এবং টিকার আগমনের সংবাদ নিয়ে আসছে নতুন বছরটি। আমার স্মৃতিতে নতুন বছরের আগমনে এতো স্বস্তি কোন বছরেই ছিলো না। এতোটা আশা নিয়ে কোন নতুন বছর আসেনি আমাদের কাছে। অতএব হ্যাপি নিউ ইয়ার।
বিগত বছরে দেশের রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের অনেক কৃতী সন্তানকে হারিয়ে জাতি অনেক অপূরনীয় ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। কাছের ও দূরের অনেক মানুষ তাদের স্বজন হারিয়েছেন। যারা জীবিত আছেন, তাদেরও অনেক কাছে দিয়ে মৃত্যু গিয়েছে।
কর্ম ও কর্মস্থল হারিয়ে অনেকেই শহর ত্যাগ করে গ্রামে ফিরেছেন। প্রবাস থেকে এসে ছুটি কাটিয়ে ফিরে যেতে পারেন নি দেশের রেমিটেন্স যোদ্ধারা।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হয়ে গিয়ে এক অনিশ্চিত পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে। নতুন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে অনলাইন শিক্ষা চালু হলেও তাতে গ্রামের এবং সুবিধাবঞ্চিত শিক্ষার্থীরা যুক্ত হতে না পারায় সৃষ্টি হয়েছে 'ডিজিটাল ডিভাইড'।
বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই হয় গুটিয়ে নিয়েছে অথবা সংকুচিত করেছে তাদের কার্যক্রম। ফলে হাজার হাজার কর্মী তাদের কাজ হারিয়েছে।
এরপরও জীবন থেমে থাকে নি। যারা বেঁচে আছে, জীবনই তাদের একমাত্র আশা। বেঁচে থাকাটাই যেখানে বিশেষ প্রিভিলিজ, সেখানে হারাবার বেদনা অপ্রাসঙ্গিক। চার্চিল বলেছিলেন, নেভার ওয়েস্ট আ গুড ক্রাইসিস (দুর্যোগের সুযোগকে অপচয় করো না)। করোনাভাইরাস আমাদেরকে স্বাস্থ্যবিধি শিখিয়েছে। শিখিয়েছে কীভাবে (মাস্ক ব্যবহার করে) মহামারি গেলেও ঢাকার সীসাবাহিত দূষণ থেকে শ্বাসযন্ত্রকে বাঁচিয়ে রাখা যাবে। শিখেছি কীভাবে হাত ধুতে হয়। তাই শিখেছি কীভাবে পানিবাহিত রোগ থেকে নিজেকে মুক্ত রাখা যাবে। অনেক কিছুর মাঝে আমরা শিখেছি, কীভাবে দূর থেকেও অফিস করা যায়। কাজের পরিমাণ অথবা অফিসে সময় দেওয়াই মুখ্য নয়।
পরিবেশ ও জলবায়ুতে ভারসাম্য ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রাণীকূল তাদের বাসস্থান ফিরে পাচ্ছে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান বলেছেন, প্রাণীকূলের জন্য নিরাপদ আশ্রয় আর পরিবেশ উন্নয়নে ব্যবস্থা না নিতে পারলে করোনাভাইরাস আসতেই থাকবে, বিভিন্ন নামে।
সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা পেয়েছে আমাদের শিক্ষাঙ্গন, যাকে ঢেলে সাজাবার কথা ভাবছে কর্তৃপক্ষ। অনলাইন অথবা দূরশিক্ষণই একমাত্র মাধ্যম হবার কারণে, প্রকৃত শিক্ষককে বুঝতে পারা সহজ হয়েছে। শিক্ষকদের পাঠদান ক্ষমতা, প্রযুক্তি ও যুগের চাহিদা এবং পরিবর্তনকে খাপ খাইয়ে নেবার সামর্থ্য পরীক্ষিত হচ্ছে দারুণভাবে। অভিনব পদ্ধতি অবলম্বন করে শুধুমাত্র যোগ্য শিক্ষকেরাই মানিয়ে নিতে সমর্থ হচ্ছেন।
কাজেই সব খবর খারাপ ছিলো না। সবকিছু ধ্বংস হয়ে যায় নি। ধনী দেশগুলো এবং ধনী মানুষদের টিকাদান শেষ হলে, একদিন গরীররাও টিকা পাবে। অতএব হ্যাপি নিউ ইয়ার!