ঢাকা ‘পৃথিবীর সেই বিরল শহরে’ রূপ নিচ্ছে যেখানে মানুষ গাড়ির চেয়েও বেশি গতিতে চলতে পারে। ট্রাফিক জ্যাম, জলাবদ্ধতা, বারোমাসি খুড়াখুড়ি, ত্রুটিপূর্ণ/সরু রাস্তা, আগের আমলের ট্রাফিক সিস্টেম, বাইপাস বিহীন সড়ক, মাঝ রাস্তায় পার্কিং ইত্যাদি ‘সুবিধা’ ধরে রাখার কারণে ঢাকা পৃথিবীর একমাত্র আদিম শহরে ‘উন্নীত’ হতে যাচ্ছে।
গতির শহর ঢাকা/ দুর্গতির শহর ঢাকায় প্রতি ঘণ্টায় গাড়ির গতি:
৭ কিলোমিটার (২০১৭/ বর্তমানে)
২৪ কিলোমিটার (২০০৪)
৪ কিলোমিটার (২০২৫/ বিশেষজ্ঞদের ধারণা)
৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় মানুষের হাঁটার গতি! [তথ্য প্রথম আলো - অগাস্ট/২০১৭]
সবাই বলে, ঢাকা শহরের কোন পরিকল্পনা নেই। উন্নয়নের বাজেট নেই। সরকারের উদ্যোগ নেই। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন এবং আরও বেশি খারাপ! আরও 'অনেক কিছু' নেই!
ঢাকা শহর পরিকল্পনাহীনভাবে গড়ে ওঠছে তা নয় - বরং এখানে আছে অগণিত পরিকল্পনা। রাজউক, সিটি কর্পোরেশন, পূর্ত মন্ত্রণালয়, হাউজিং কোম্পানি... এদের প্রত্যেকের রযেছে ভিন্ন ভিন্ন পরিকল্পনা। কৌশলগত সড়ক পরিকল্পনা, পানি পয়নিষ্কাশনের ব্যবস্থাপনা, গৃহায়ন পরিকল্পনা, ডিটেইল এরিয়া প্লান আরও কত কী! সবাই নিজ নিজ পরিকল্পনা এশহরের মানুষগুলোর ওপর দেদারছে ঢালছে।
পরিকল্পনার আধিক্য আর সমন্বয়হীনতাই ঢাকা একটি ব্যর্থ শহরে পরিণত হয়েছে। শুধু যানজটেই বছরে ২০,০০০ কোটি টাকার অর্থনৈতিক ক্ষতির শিকার হচ্ছে এদেশের মানুষ। [ডেইলি স্টার ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬]
উদ্যোগেরও অভাব নেই। উদ্যোক্তাদের কেউ নদী ভরাট করে বাড়ি বানায়, আবার কেউ বাড়ি কেটে খাল বানায়। নদী শেষ তাকে নিয়ে কারও ভ্রুক্ষেপ নেই, নতুন খাল খননে লেগেছে একটি কর্তৃপক্ষ। কেউ উচ্ছেদ করছে, কেউবা পুনর্বাসন করছে; কেউ সংস্কারের কর্মসূচি নিচ্ছে, কেউবা তার বিপক্ষে ধর্মঘট দিচ্ছে। একই সরকারের অধীনে। আরেকটি পক্ষ আছে যারা বর্ষা এলেই লেগে যায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়িতে। বলে ‘উন্নয়নের কাজ চলিতেছে’। ‘সাময়িক সমস্যার জন্য দুঃখিত - কর্তৃপক্ষ’। বারোমাসের কাজকে বলা হয় ‘সাময়িক’। তাছাড়া ওই কর্তৃপক্ষটা যে আসলে কে বা কারা, সেটিও বিরাট প্রশ্ন।
বাজেটের কথা বলছেন? বাংলাদেশে সেক্ষেত্রে পৃথিবীর ধনী দেশের একটি, কারণ এখানে প্রতি কিলোমিটারে নির্মাণ খরচ সর্বোচ্চ। এবং মাত্র ছ'মাস পর সেই একই রাস্তার সংস্কারের জন্য আরেকটি টেন্ডার আসে।
বাংলাদেশ প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণের খরচ
৫৬ কোটি টাকা: উদাহরণ - ঢাকা সিলেট মহাসড়ক
৯৫ কোটি টাকা: উদাহরণ - ঢাকা মাওয়া সড়ক
ভারত: ১০ কোটি
চিন: ১২ কোটি
জমি অধিগ্রহণের খরচসহ। [খরচের তথ্য বিডিনিউস২৪ ডটকম - জুন/২০১৭]
কুড়িল বিশ্বরোড থেকে পূর্বাচলের রাস্তা দিয়ে ২/৩ কিলোমিটার এগুলেই একটি সুন্দর ব্রিজ চোখে পড়বে। নাম তার বোয়ালিয়া ব্রিজ। নদীর নাম বোয়ালিয়া। নদীতে পানি নেই - বোয়াল তো দূরের কথা! সেই নদীকে সীলগালা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রাস্তার পাশের দোকানপাট, বাড়িঘর সব ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে। সেখানে খাল হবে! ঢাকার প্রাকৃতিক খালগুলোর একটিরও অস্তিত্ব নেই - এখানে ভিটে উচ্ছেদ করে নতুন খাল হবে!
এভাবে এগিয়ে চলছে উল্টো রথে প্রাচীন পথে ঢাকার 'অগ্রযাত্রা'। নাকি পশ্চাৎযাত্রা! অগত্যা আমরাও আছি এর অংশ হয়ে। আপনিও আছেন সহযাত্রী হয়ে! গাড়িতে চলার খরচ বেঁচে যাবে আপনার। ক্রেডিট গউস টু হুম?
[ফেইসবুক স্ট্যাটাসটি শেষে এত দীর্ঘ হলো যে, ব্লগে পোস্ট করতে হলো!]