তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবরটি কোন পত্রিকায় গুরুত্ব পায়নি।
গুরুত্ব? না আসলে স্থানীয় একটি ছোট পত্রিকা ছাড়া কোন পত্রিকা ছাপেইনি। ইলেক্ট্রনিক মিডিয়া তো আরো দুরের ব্যাপার।
সুধু একটি জাতীয় পত্রিকায় (যুগান্তর) ভেতরের পাতায় ছোট করে এসেছিল। এরপর নো আপডেট।
মধুপুর থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শুক্রবার রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইল ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের মধুপুর উপজেলার পঁচিশ মাইল এলাকার বনাঞ্চলের রাস্তার ধারে এক তরুণীর রক্তাক্ত লাশ পড়ে থাকার খবর পায় মধুপুর থানা পুলিশ। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরত হাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ থানায় নিয়ে আসে। হত্যা করে লাশ সড়কের পাশে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রেখে যায় এমনটি ধারণা করে শনিবার মধুপুর থানা পুলিশ নিজেরাই একটি হত্যা দায়ের করে। তখনো সব মিডিয়া কিছুই জানে না। বেওয়ারিস লাশ পাওয়ার খবরটি পর্যন্ত ছাপেনি। রহিংগা .. ভারতের রাম-রহিম সিং নিয়ে ব্যাস্ত ছিল।
টাঙ্গাইলের মধুপুর বন এলাকায় গত শুক্রবার পরিচয় না মেলায় গত শনিবার ময়নাতদন্ত শেষে ওই তরুণীর লাশ টাঙ্গাইল কেন্দ্রীয় কবরস্থানে বেওয়ারিশ হিসেবে দাফন করে মধুপুর প্রশাসন। এরপর সব ভুলে যাওয়ার কথা।
মিডিয়া ভুলে থাকলেও পুলিশ বসে থাকেনি।
মফস্বলে দেখেছি পুলিশ বাদির কাছ থেকে যথেষ্ট এমাউন্ট না পেলে মামলার তদন্ত আগায় না, পুলিশ বাদি মামলায় পুলিশ আসামী খুজে না। টাকা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকলে পুলিশ নড়েই না।
মধুপুর পুলিশ বসে থাকেনি।
ক্লু বের করতে সেই পথের একের পর এক বাস থামিয়ে জিজ্ঞেসাবাদ চলতে থাকে। বাসস্ট্যান্ডের কর্মচারিদের জিজ্ঞাসাবাদ চলতে থাকে এভাবে চার দিন পার হয়ে যায়। এরপরও ধর্যহারা হয় নি মধুপুর পুলিশ।
মধুপুর থানার ওসি শফিকুল ইসলাম জানান, ব্যাপক তদন্তের পর নিহতের ভাই খোজাখুজি ও জিডি মারফত জানা যায়, ছোঁয়া পরিবহনের একটি বাসে করে শুক্রবার রাতে সিরাজগঞ্জ থেকে ময়মনসিংহ যাওয়ার পথে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হন ওই রুপা নামের এই তরুণী।
পুলিশ ছোয়া পরিবহনের সকল কর্মচারির ডিউটি রেকর্ড তন্ন তন্ন করে সেই রাতের বাসের চালক, সুপারভাইজার/কন্ডাকটার খুজে বের করে। পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করে পিটিয়ে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৩ জন ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে জরিত বলে জানা যায়।
এই তিনজন ধর্ষণ ও হত্যায় জড়িত থাকার কথা জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকারও করে। পরে ওই তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
তারপর জানা যায় নিহত তরুণী রুপা প্রামানিক, সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলার আছানবাড়ি গ্রামের, সে ঢাকার আইডিয়াল ল’ কলেজে এলএলবি বিষয়ে অধ্যায়নরত ছিল এবং লেখাপড়ার পাশাপাশি ময়মনসিংহ জেলা সদরে অবস্থিত ইউনিলিভার বাংলাদেশের প্রোমশনাল ডিভিশনে কমর্রত ছিলেন।
এই তিনজন আদালতে হাজির করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়ার পর সব মিডিয়ার হুশ হয়।
ঘটনার ৬ দিন পর জাতীর বিবেক, বড় পত্রিকাগুলো খবরটি প্রথম পাতায় হেডলাইনে ছবিসহ ছাপে।
গতানুগতিক ভাবে খবরের নীচে কমেন্টররা লিখছে -
দেশে ভগ্ন আইনশৃক্ষলা ব্যাবস্থা ..
দুর্নিতীবাজ পুলিশ, আইনের শাসন নেই ..
দেশে বিচারহীনতার কারনেই এভাবে ... একের পর এক ...