somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মা ও বাবা

২১ শে জুন, ২০০৯ রাত ১:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার তো এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার কথাই ছিল না। ১৯৯৯ সালে মীরপুর বাংলা উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণীতে ব্যবসায় শিক্ষার ক্রমিক নম্বর ৩ যার তার মুখে এই কথা বেমানান শুনাতো। কিন' আমার কাছে এটাই বাস-ব ছিল। বাসায় না ছিল পড়ার পরিবেশ, না ছিল আর্থিক সামর্থ্য। বাবা ছিল। বড় আরও চার ভাই ছিল। সবাই বলতো আমি তো খুব আদরে থাকি। আমি জানি আদরটা কী!

মা বললো, মেট্টিকটা দিয়া দে। আমি বললাম কোচিং করি নাই। অন্যদের মতো মডেল টেস্ট দিতে পারি নাই। কেমনে পরীক্ষা দিমু। মা কোত্থেকে যেনো আড়াই হাজার টাকা যোগাড় করে নিয়ে এলো। আমি কোচিংয়ে ভর্তি হলাম। মডেল টেস্ট দিলাম।

এবার বাবার কথায় আসি। মা আমার কাছে যতোটা প্রিয়। বাবা ততোটাই অপ্রিয়। কারণ আমার পড়াশুনার মঙ্গলের জন্য তাকে তেমন কোনো কিছু করতে দেখি নি। উল্টো পদে পদে সংসারে অশানি-র সৃষ্টি করেছে।

মায়ের কথায় এসএসসি দেই। ফলাফল প্রকাশিত হলে দেখি ছয় বিষয়ে লেটার মার্কসসহ স্টার পেয়েছি। মার্কসশিটে দেখি মোট ৮২৬ নম্বর। এবার ভাবনা এলো সরকারি কোনো কলেজে ভর্তি হয়ে ইন্টারটা দিয়ে দেই। ঢাকা কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় ১৮তম হই। তখন ধানমন্ডির আইডিয়াল কলেজের একটি লিফলেট দেখতে পাই। ওতে লেখা ছিল এসএসসিতে বোর্ডস্ট্যান্ড করলে মাসিক ১৫০০টাকা বৃত্তিসহ বই, পড়াশুনা, থাকাখাওয়া ফ্রি। আর স্টারমার্কস প্রাপ্তদের শুধু বই, পড়াশুনা ও থাকাখাওয়া ফ্রি।

আমি আইডিয়াল কলেজে ভর্তি হই। কলেজ ভবনের সাত তলায় থাকতাম, খেতাম। আর তৃতীয় তলাম এসে ক্লাস করতাম। পড়াশুনার খরচ কমে এলো। বাসার অশানি- থেকেও মুক্তি পেলাম। তারপরও সপ্তাহে একবার বাসায় গিয়ে মাকে দেখে আসতাম। আর সাপ্তাহিক হাতখরচ বাবদ ১০০ টাকা নিয়ে আসতাম। আম্মা যে কোনো ভাবে ম্যানেজ করে সে একশ টাকা দিতো। একবার মনে আছে, বাসায় গিয়ে দেখি দুপুরের রান্না হয়নি। কারণ বাজার হয়নি। অথচ বড় চার ভাই ও বাবা জীবিত ছিল। সেবার টাকা না নিয়েই হোস্টেলে চলে গিয়েছিলাম। খুব কেঁদেছিলাম সেদিন। একসময় বড় ভাই সায়েম এগিয়ে এলো। নিয়মিত পড়াশুনার খরচ দিতো। রেজিস্ট্রেশনের খরচও দিল। তখন বারবার মনে হতো কবে যে এইচএসসি পরীক্ষা শেষ হবে।

এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম। তিন বিষয়ে লেটারসহ ৮০০ নম্বর পেলাম। হাতের লেখাটা আরেকটু দ্রুত হলে আরও বেশি নম্বর পেতাম। হোস্টেল ছেড়ে আবার বাসায় গিয়ে উঠলাম। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পালা। আম্মা তার বড়লোক চাচার কাছ থেকে টাকা এনে কোচিংয়ে ভর্তি করালো। নম্বর বেশি থাকায় ঢাকা কোচিংয়ে অন্য সবার চেয়ে কম টাকা দিয়ে ভর্তি হতে পারলাম। গ ইউনিটের কোচিং করতাম। পাশাপাশি ঘ ইউনিটে সাধারণ জ্ঞানের ক্লাস ফ্রিতে করতাম। পাশাপাশি টিউশনি শুরু করি। ইচ্ছে ছিল পড়লে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েই পড়বো। নয়তো আর পড়াশুনা করবো না। ঢাবির গ ইউনিটে চান্স পেলে হিসাব বিজ্ঞানে অনার্স করবো, ঘ ইউনিটে চান্স গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতায় ভর্তি হবো। কেননা দুটি বিষয়ে পড়াশুনা করা অবস'াতেই টাকা কামানো সম্ভব।

ইংরেজিতে পাস না করায় গ ইউনিটে চান্স পেলাম না। ঘ ইউনিটে হলাম ৪৭তম। সাংবাদিকতায় ভর্তি হলাম। টিউশনি করি তাই বাসা থেকে টাকা নেওয়া বন্ধ করলাম। উল্টো আম্মাকে মাসে মাসে টাকা দেওয়া শুরু করলাম। প্রথম বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড নম্বর পেলাম। দ্বিতীয় বর্ষে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট। তৃতীয় বর্ষে একটি কোর্সে ইমপ্রুভ রাখলাম। তারপরও ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হওয়ার নম্বার ছিল। তৃতীয় বর্ষে থাকা অবস'ায় পড়াশুনা, টিউশনির পাশাপাশি সাপ্তাহিক একাত্তরে কাজ করা শুরু করলাম। চতুর্থ বর্ষে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে কাজ করলাম। ছয় হাজার বেতনের দুই হাজার টাকাই আম্মাকে দিতাম। সংসার চালাতে হবে তাই অনার্স ফাইনাল পরীক্ষার আগে চাকরি ছাড়তে পারলাম না। এক মাস ছুটি নিলাম। তিন নম্বর কম পেয়ে ফার্স্ট ক্লাস সেকেন্ড হলাম। খুব খারাপ লাগলো, সংসারের বোঝা টানতে গিয়ে ফার্স্ট হওয়াটা হাত থেকে ফসকে গেল। তবে আফসোস ছিল না।

আমি এখন মাস্টার্সে পড়ছি। একটি জাতীয় দৈনিকে চাকরি করছি। আম্মা ও বড় প্রতিবন্ধী ভাইকে নিয়ে আলাদা বাসায় ভাড়া থাকি। কিছুদিন পর বেতন বাড়বে। ফ্লাট বাসায় উঠবো। আম্মার জন্য একজন কাজের লোক রাখবো। তাঁর পায়ের ব্যাথাটা বেড়ে গেছে। চিকিৎসা করাতে হবে। মাঝে মাঝে খুব খারাপ লাগে যেদিন নাইট ডিউটি করে রাত তিনটায় আম্মাকে ঘুম থেকে উঠাই।

বাবার কাছ থেকে এখন আমরা আলাদা থাকি। আমি ও আম্মা দুজনই এখন খুব শানি-তে আছি। মা ছিল বলেই আজ এ পর্যন- আসতে পেরেছি। বাবা থেকে আরও দূরে থাকতে পারলে আরও সামনে যেতে পারতাম। আমি অন-ত তাই মনে করি।

(লেখাটা মা দিবসের আগে থেকেই লেখার ইচ্ছে ছিল। কিন্তু মাকে কোনো দিবসের মধ্যে রাখার ইচ্ছে ছিল না। বাবা দিবসে মনে হল লেখাটি পোস্ট করা উচিত)
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ট্রাম্প ভাইয়ের প্রেসিডেন্সিয়াল টিমের সদস্য এর মধ্যে এই তিন জন সদস্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

লিখেছেন অতনু কুমার সেন , ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:৪৮

প্রথম জন হলো: জেডি ভান্স, উনি মেবি ভাইস প্রেসিডেন্ট হচ্ছেন। ভদ্রলোকের বউ আবার ইন্ডিয়ান হিন্দু। ওনার নাম উষা ভান্স। পেশায় তিনি একজন অ্যাডভোকেট।

দ্বিতীয় জন হলো বিবেক রামাস্বামী। এই ভদ্রলোক আরেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসল 'আয়না ঘর' থাকতে রেপ্লিকা 'আয়না ঘর ' তৈরির প্রয়োজন নেই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১১:৩৮


স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য ৫ই আগস্ট সর্বস্তরের জনতা রাস্তায় নেমে এসে। শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যান। দীর্ঘ ১৫ বছরের শাসন আমলে অসংখ্য মানুষ কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। নিজের বানানো টেলিস্কোপ দিয়ে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯






ঢাকায় নিজের বাসার ছাদ থেকে কালপুরুষ নীহারিকার ছবি তুলেছেন বাংলাদেশি অ্যাস্ট্রোফটোগ্রাফার জুবায়ের কাওলিন। যে টেলিস্কোপ দিয়ে তিনি এই ছবি তুলেছেন, সেটিও স্থানীয় উপকরণ ব্যবহার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×