আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ছাত্র। আমাদের বিভাগে একটি ঐতিহ্য আছে প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা এলে আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে প্রতি বর্ষের শিক্ষার্থীরা একেক দিন ফুল, মিষ্টি মুখ করিয়ে তাদের শুভেচ্ছা জানাই। সেদিন আমরা পরস্পরের সঙ্গে পরিচিতি হই। নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে গান, কবিতা, কৌতুক পরিবেশিত হয়।
আমার মনে আছে আমরা যেবার প্রথম বর্ষের প্রথম দিন ক্লাস করলাম সেদিন আমাদের পুরাতন প্রথম ভাইয়া ও আপুরা শুভেচ্ছা জানায়। আমি মনে হয় তখন দুইটা মিষ্টি খেয়েছিলাম। এমন করে লাগাতার ৫ দিন প্রতি বর্ষের ভাইয়া ও আপুরা আমাদের শুভেচ্ছা জানালো। তৃতীয় বর্ষের ভাইয়া আপুরা যেদিন শুভেচ্ছা জানালো আমি তখন একটি গানও গেয়েছিলাম। যদিও তেমনটা পারি না। যারা যারা গান, কবিতা, কৌতুক পরিবেশন করলো তারা কিছু শো পিসও পেল।
তারা জানালো এভাবেই প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেওয়া হয়। তারপর থেকে আমরাও প্রতি নতুন বর্ষের শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেই। এখনও সেই ঐতিহ্য চলছে। বরণ করে নেওয়ার পর জুনিয়রা আমাদের নাম, গ্রামের বাড়ি, স্কুল-কলেজ জানতে পারি। আমরাও তাদেরটা জানতে পারি। এভাবে আমরা পারস্পরিক কমন ফিল্প অব এক্সপেরিন্স জানতে পারি। তারপর নতুনরা বড় ভাই ও আপুদের দেখলেই কুশলাদি বিনিময় করে। সিরিয়াস স্টুডেন্টরা ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্টদের কাছে নোট, ভালো বই, ভালো ফলাফলের পরামর্শ নেয়। সিনিয়র ভাইরা প্রথম দেখায় প্রথম প্রেম টাইপের জুনিয়র মেয়ে পছন্দ করে। এভাবেই আমাদের সম্মানজনক, মধুর শুভেচ্ছা পর্ব এগিয়ে চলেছে।
জাহাঙ্গীরনগর, চারুকলাসহ বিভিন্ন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, হলে যে ধরনের নোংড়া, মর্যাদাহীন শুভেচ্ছা পর্ব র্যাগিং চলে তা বন্ধ করা উচিত। যারা মনে করে র্যাগ করে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায় তারা মুর্খের স্বর্গে বাস করেন। আমি কখনো পড়ি নি র্যাগ করে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। র্যাগ ছাড়া এই জীবনে প্রচুর, অনেক ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলা যায়। ভালো সম্পর্কের জন্য পারস্পরিক সহমর্মিতা, সহযোগিতা, শ্রদ্ধাবোধ থাকা উচিত।
র্যাগিং আসলে বিকৃত মানসিকতারই পরিচয়। এটা বন্ধ করা উচিত।