আমাদের অনেকের মাঝেই মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলোর ব্যাপারে কিছু কনফিউশান আছে। যেমন অনেককে বলতে শুনি শিয়ারা কি মুসলিম? আবার অনেকেই হয়ত এই মাইন্ডসেট নিয়ে ভাবি যে আরব মাত্রই মুসলিম।আবার অনেকেই হয়ত জানি না যে ইরানিরা আরব নন।আর সেমেটিজম ই বা কি?
এই প্রসঙ্গ গুলো নিয়েই আমার ‘খই ভাজা’ টাইপ পোষ্ট।
১।আরবরা হলো একটি জাতিগোষ্ঠি। যেমন আমরা বাঙ্গালি। ইসলাম ধর্ম প্রবর্তনের অনেক পূর্ব থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে তাদের বসবাস। আরব দের মাঝে ছিল (এবং আছে) খ্রিস্টান এবং ইহুদি ধর্মের লোক। আরব লোকেরা সাধারণত আরবি ভাষী।
২। সব আরবরাই মুসলিম না , পুরো আরব জুড়েই আছে অনেক খ্রিস্টান আর ইহুদি ধর্মের লোক। নাম শুনে বুঝার উপায় নেই! সুলেমান(লেবাননের প্রেসিডেন্ট ),এডওর্য়াড সাঈদ(প্যালেস্টাইন বংশদ্ভূত আমেরিকান চিন্তাবিদ;বিখ্যাত বই Orientalism এর লেখক ) এঁরা সবাই খ্রিস্টান!
সাধারণত লেবানন,সিরিয়া,জর্দান,উত্তর আফ্রিকার দিকেই খ্রিস্টানরা সংখ্যাগরিষ্ট। আর ইসরেল জুড়ে তো ইহুদিরা আছেই।
৩। শিয়া হলো ইসলামের আরেকটি গোত্র বা উপদল। এই যেমন উপমহাদেশ এবং মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশ মূলত সুন্নি অধ্যুষিত। ধর্ম চর্চায় শিয়াদের গোড়া খ্রিস্টান ক্যাথলিক এবং সুন্নিদের সাথে প্রটেস্টান্টদের তুলনা করা যায়।
শিয়ারা ধর্ম চর্চায় তাদের ইমামদের ব্যাখ্যা কে বেশি গুরুত্ব দেয় আর সুন্নিরা মোহাম্মদ (সাঃ) এর চর্চিত বিষয় গুলো কে ধর্ম চর্চার অংশ মনে করে।মুসলিম বিশ্বে প্রায় ৯০% ই সুন্নি।
৪। শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ মূলতঃ আরম্ভ হয় মোহাম্মদ (সাঃ) এর ইন্তিকালের পর পরই।পরবর্তীতে তা রূপ নেয় ক্ষমতার দ্বন্দ্বে; এই কারণে যে ইসলামি বিশ্বাস এবং কর্তৃ্ত্বের দায়িত্ব কাদের হাতে ন্যস্ত হবে।
শিয়া দের বক্তব্য ছিল মহানবী (সাঃ) এর জামাতা আলি (রাঃ) ই যোগ্য ব্যক্তি। আর সুন্নি দের বক্তব্য ছিল যে অনুসারিদের মধ্য থেকেই খলিফা নির্বাচন হোক।এভাবেই ইসলামের প্রথম খলিফা আবু বকর (রাঃ) নির্বাচিত হন।
৫। বাংলাদেশে সুন্নি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও নৃতাত্ত্বিক ভাবে তারা বাঙ্গালি। তেমনি ইরানে মূলতঃ শিয়ারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। নৃতাত্ত্বিক ভাবে ইরানিরা পার্সিয়ান। তারা আরব নয় !
৬। বিশ্বে মুসলিম অধ্যুষিত বড় দেশ ইন্দোনেশিয়া।
৭।ইহুদিদের কেউ গালি দিলে বলা হয় ‘এন্টি-সেমেটিক’। ‘সেমাইট’ শব্দটির ঊৎপত্তি বাইবেল থেকে যারা সেমেটিক ভাষা য় কথা বলে তারাই সেমেটিক জাতি। অথচ বহুল চর্চিত সেমেটিক ভাষা হলো আরবি !! ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর মূলতঃ হিব্রু ভাষার চর্চা শুরু হয়। যা অন্যতম সেমেটিক ভাষা।
৮। বাইবেলের বক্তব্য অনুসারে [দেখুন জেনেসিস ২৫]
ইহুদিরা আব্রাহাম (কোরান মতে ইব্রাহিম [আঃ]) এর পুত্র আইজ্যাক (ইসহাক [আঃ]) এর বংশধর আর আরবরা হলো ইশমেল (ইসমাঈল [আঃ]) এর বংশধর। অর্থাৎ ইহুদি এবং আরবরা শুধু মাত্র সেমেটিক ই নয় একি পরিবার ভুক্তও বটে!!
_________________________
মধ্যপ্রাচ্যে শিয়া-সুন্নি,আরব-অনারব:
ইরাক: শিয়া ৬০% ; সুন্নি ২০%(আরব)।অথচ সাদ্দাম আমলে সুন্নি রা ছিল পুরো ক্ষমতার অংশীদার আর শিয়ারা ছিল মজলুম বা নির্যাতিত।হাজার হাজার শিয়াকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছিল।
ইরান: শিয়া (অনারব)।
ফিলিস্তিন: সুন্নি(আরব)।
মিশর:সুন্নি(আরব)।
সৌদি আরব:সুন্নি(আরব)।
সিরিয়া:সুন্নি(আরব)।
জর্দান:সুন্নি(আরব)।
অন্যান্য গালফ দেশ(আমিরাত,ইয়েমেন,কাতার):সুন্নি(আরব)।